1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছয় বছরেও স্বাভাবিক জীবন পাননি ইয়াজিদিরা

১০ আগস্ট ২০২০

সিনজার গণহত্যার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি ইরাকের ইয়াজিদিরা৷ ২০১৪ সালের আগস্টে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা হামলা চালায় ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ওপর৷ কয়েক হাজার ইয়াজিদিকে হত্যা ও অপহরণ করা হয়৷ এখনও নিখোঁজ অনেকে৷

https://p.dw.com/p/3gjxM
আইএস জঙ্গিদের হামলায় বাস্তুচ্যূত হয়েছেন ইরাকের কয়েক লাখ ইয়াজিদি
আইএস জঙ্গিদের হামলায় বাস্তুচ্যূত হয়েছেন ইরাকের কয়েক লাখ ইয়াজিদিছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed

২০১৪ সালে উত্তর ইরাকের একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন নাসরিন রাশো৷ কিন্তু তার আগেই তার শহরে হামলা চালিয়ে নাসরিনকে অপহরণ করে দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয় আইএস জঙ্গিরা

কয়েক মাস বন্দী থাকার পর মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়৷ কিন্তু এখনও নাসরিনের মতো প্রায় দুই লাখ ইয়াজিদি নিজের শহরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন৷ ২৫ বছর বয়সি নাসরিন বলেন, ‘‘ছয় বছর ধরে আমরা সাহায্য চাচ্ছি, কিন্তু কেউই আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে না৷ দুঃখজনকভাবে কেবল মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাদের ভুলিয়ে রাখা হয়৷'' এখন উত্তর ইরাকের মাম রাশান শরণার্থী শিবিরে দিন কাটছে নাসরিনের৷

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন মনে করে তারা একা, সবাই তাদের ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছে৷ কিন্তু আমাদেরও অন্যদের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে৷''

ইরাকে অন্তত চার লাখ ইয়াজিদির বাস৷ ইয়াজিদিরা খ্রিস্ট ধর্ম, জরাথ্রুস্ট মতবাদ এবং ইসলামের বেশ কিছু নীতি মেনে চলেন৷ কিন্তু তাদেরকে ‘শয়তানের উপাসনাকারী' আখ্যা দিয়ে আইএস জঙ্গিরা ইয়াজিদিদের মূল আবাসস্থল মাউন্ট সিনজার অঞ্চলে হামলা চালায়৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি সেসময় হত্যার শিকার হন, অনেককে অপহরণ করা হয়, অনেকে এখনও নিখোঁজ৷ জাতিসংঘ এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছে৷

সিনজার গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে মানবাধিকার কর্মীরা নিখোঁজ ইয়াজিদিদের ফিরিয়ে আনা এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন৷

ইরাকের মোট ইয়াজিদিদের অর্ধেকেরও বেশি এখন বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করছেন৷ অনেক ইয়াজিদি সিনজারে ফিরে গেলেও তাদের সেখানে জল, স্বাস্থ্যসেবা বা বিদ্যুৎ ছাড়াই বাস করতে হচ্ছে৷ গণহত্যার বার্ষিকীর আক আয়োজনে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ জানান এখনও তিন হাজারেরও বেশি ইয়াজিদি নিখোঁজ রয়েছেন৷ নাদিয়া নিজেও আইএস জঙ্গিদের হাতে যৌনদাসি হিসেবে বন্দি ছিলেন৷

নাদিয়া বলেন, ‘‘শান্তি ও নিরাপত্তা চায় ইয়াজিদিরা৷ জবাবদিহিতা ও বিচার তাদের প্রাপ্য৷ বিশ্বনেতারা কবে নড়েচড়ে বসবেন, সেজন্য যারা বেঁচে এসেছেন তারা আরো চয় বছর অপেক্ষা করতে পারবেন না৷৷''

তাড়া করছে ভয়

অপহৃত হওয়ার পর নাসরিনকে বিভিন্ন শহরে নিয়ে গিয়েছে অপহরণকারীরা৷ পরবর্তীতে তাকে সিরিয়া নিয়ে গিয়ে নিজের বিশ্বাস ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়৷ এরপর দুইবার তাকে যৌনদাসি হিসেবে আইএস যোদ্ধার কাছে বিক্রি করা হয়৷ পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে কঠিন শাস্তির মুখোমুখিও হতে হয়েছিল তাকে৷ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি৷

নাসরিন যে এলাকায় শরণার্থী শিবিরে বাস করেন, সেখানে এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ইয়াজিদি নারী জানান তার সামনেই ২০১৪ সালে তার আত্মীয়কে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷ ৩১ বছর বয়সি এ নারী বলেন, ‘‘আমার পরিবারের অনেক সদস্যই এখনও নিখোঁজ৷ আজও আমরা ভয় আর উদ্বেগের মধ্যে বাস করছি৷ আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ এখন তিনি তুরস্ক সীমান্তে এক শরণার্থী ক্যাম্পে বাস করছেন৷

ক্ষতিপূরণের আশ্বাস

ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ রোববার জানিয়েছেন যৌন দাসত্ব থেকে বেঁচে ফেরা ইয়াজিদিদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ, শিক্ষা, বাসস্থান এবং চাকরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশটির পার্লামেন্ট খুব শিগগিরই একটি আইন পাস করতে পারে৷

তবে এ ব্যবস্থা গ্রহণে এতো দেরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই৷ ইরাকি পার্লামেন্টের ইয়াজিদি সদস্য সাইব খিদির বলেন, ‘‘আমাদের তো এই দাবি বারবার তোলারই কথা না৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়েও এ বিষয়কে অনেক অবজ্ঞার সঙ্গে দেখা হচ্ছে৷''

জাতিসংঘে সিনজার গণহত্যার বার্ষিকীর আয়োজনে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী আমাল ক্লুনি বলেন, তিনি গত বছরও আইএসকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷

জাতিসংঘ ও ইরাক সরকারের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে আইএস জঙ্গিদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব বলেও মনে করেন ক্লুনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নেই, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে৷ সিরিয়ায় অস্থায়ী যেসব কারাগারে আইএস যোদ্ধাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে, সেখান থেকে যেকোনো দিন পালিয়ে যেতে পারে জঙ্গিরা৷ গত অক্টোবরে শত শত বন্দি কিছু কারাগার থেকে পালিয়েছে৷''

ইরাক এরই মধ্যে কয়েক হাজার সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধার বিচার শুরু করেছে৷ জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো কিছু ইউরোপীয় দেশও তাদের দেশে ফেরা জঙ্গিদের বিচার শুরু করেছে৷ কিন্তু নাসরিন এখনও ইরাকে থাকতে ভয় পাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে আমার অনেক বড় বড় স্বপ্ন ছিল, সুন্দর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ছিল৷ কিন্তু এখন আমার ভবিষ্যত হারিয়ে গিয়েছে, আমি জানি না আমার ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে৷''

এডিকে/কেএম (রয়টার্স)