1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

গৌতম হোড়
২১ মে ২০২১

কবে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হবে কেউ জানে না। অনিশ্চয়তাই করোনাকালে শিক্ষার অঙ্গ।

https://p.dw.com/p/3tmvP
SSC Examen Bangladesch
ছবি: bdnews24.com

সব মিলিয়ে যাকে বলে একেবারে কেলেঙ্কারি কাণ্ড। তার একমাত্র ছেলে ১২ ক্লাসের পরীক্ষা দেবে বলে আমার বন্ধু চাকরি থেকে স্বেচ্ছা-অবসর নিয়ে ফেললো। তখন ঠিক ছিল, মার্চে পরীক্ষা হবে। আরো বছরখানেকের নিরাপদ সরকারি চাকরির মায়া ত্যাগ করে তাড়াহুড়ো করে ফেব্রুয়ারিতেই অবসর নিয়ে ফেলে ছেলের পড়াশুনোর দেখভাল শুরু করলো। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য, ছেলের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রস্তুতিই তখন তার ধ্যান-জ্ঞান।

কিন্তু বিধি বাম। করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলো। প্রতিদিন সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হতে শুরু করলো। যে পরীক্ষা মার্চে হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে দেয়া হলো। দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হলো। সকলকেই একাদশ শ্রেণিতে তুলে দেয়া হলো। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণিতে সেই সুযোগ নেই। সেখানে পরীক্ষা নিতেই হবে। না হলে, কীসের ভিত্তিতে কলেজে ভর্তি করা হবে? ১২ ক্লাস পাস না করলে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও তো ভর্তি হওয়া যাবে না!

কবে সেই পরীক্ষা হবে কেউ জানে না। গুজব রটছে, জুনে হতে পারে। দিন দুয়েক আগে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন বা সিবিএসই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, এসব গুজব মাত্র। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভারতে আবার কেন্দ্রীয় বোর্ডের পাশাপাশি রাজ্যের আলাদা বোর্ড আছে। সব জায়গায় একই হাল। কেউ জানে না, কী হবে। আমির খানের সুপারহিট ছবি থ্রি ইডিয়েটসে শান্তনু মৈত্রের সুরে একটা গান ছিল, 'মুরগি কেয়া জানে আন্ডে কা কেয়া হোগা, লাইফ মিলেগি, ইয়ে তাবে মে ফ্রাই হোগা।' একেবারে সেই অবস্থা। কেউ কিছু জানে না। জানা সম্ভবও নয়। কারণ, করোনার দাপট দেশজুড়ে কবে কমবে, তা কারো জানা নেই। সেটা না জানলে কবে পরীক্ষা হবে, সেটাও অজানা। ফলে বন্ধুর হাত কামড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় সবকিছুই এখন অজানা। সাধারণ সময়ে মার্চে পরীক্ষা, মে-র মধ্যে ফল, জুনে কলেজে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু হয়ে যেত। এবার জুনের মাঝামাঝি পরীক্ষা হলে জুলাই বা অগাস্টে ফল বের হবে। অগাস্টের আগে কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে না। একটা সেমিস্টার গায়েব হয়ে গেল।  সেটাও যদি জুনে পরীক্ষা হয় তাহলে। ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স কবে হবে? সেখানে কবে ক্লাস শুরু হবে? ওই যে বললাম, কেউ জানে না।

এডুকেশন লোনের সুবিধা নিয়ে ভারত থেকে প্রতিবছর প্রচুর ছাত্রছাত্রী বিদেশে পড়তে যায়। বিদেশে ভর্তির সময়টা এবার ঠিক থাকবে। কারণ, সেখানে পরিস্থিতি ভালো। তা হলে ভারতের বাচ্চারা সেখানে ভর্তি হবে কী করে? কেউ জানে না। 

গতবার তাও কোনোরকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়েছিল। কারণ, সিবিএসই-র কয়েকটা পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল। তারই গড় করে বাকি যে সব পরীক্ষা হয়নি তার নম্বর দেয়া হয়েছিল। এবার সে উপায়ও নেই। একটা পরীক্ষাও হয়নি। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা হয়েছিল মার্চে। তাহলে উপায়? কেউ জানে না।

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat

আমাদের তো আগাম পরিকল্পনা নেয়া হয় না। গতবারের অভিজ্ঞতার পরও নেয়া হয়নি। একটা সময় সরকার থেকে সাধারণ মানুষ সকলেরই ধারণা হয়েছিল, করোনা বিদায় নিয়েছে। ফলে সবকিছুই ঢিলেঢালা হয়ে গেল। গতবারের অভিজ্ঞতার পরেও কোনো পরিকল্পনা করা হলো না। প্ল্যান বি নেয়া হলো না। দিন কয়েক আগে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, উত্তর প্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভগবান ভরসায় চলছে। তা কোনো একটি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেন, প্রায় সবকিছুই ভগবানের ভরসায় চলছে এখন।

কলেজের হাল তুলনায় একটু ভালো। সেখানে অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষা হচ্ছে। একবছর ধরে এই ব্যবস্থা চলছে। ইন্টারনেটের সমস্যা অতিক্রম করে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে পড়ছে এবং পরীক্ষাও দিচ্ছে। ওপেন বুক পরীক্ষা। আমাদের সবকিছরই তো সর্ষের মধ্যে ভূত। পরীক্ষার দিন আধঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র আপলোড করে দেয়া হয়। তারপর ছাত্রছাত্রীরা উত্তর লিখে তা স্ক্যান করে কলেজের দেয়া ইমেল আইডি-তে পাঠায়। তার জন্য তাদের আধঘণ্টার বাড়তি সময় দেয়া হয়। যান্ত্রিক কারণে পাঠাতে না পারলে, কলেজে গিয়েও উত্তরপত্র জমা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। 

এক অধ্যাপকের অভিজ্ঞতা হলো, অনেক খাতায় দেখা যাচ্ছে, একই উত্তর। এমনকি বানান ভুলও একই। বোঝা যাচ্ছে, কোনো টিউশন সেন্টারের দেয়া উত্তর লিখেছে তারা। তার সন্দেহ, টিউশন সেন্টার প্রশ্ন দেখে উত্তর দ্রুত তৈরি করে দিচ্ছে। সেটাই সেন্টারের সব ছাত্রছাত্রী লিখছে। তাই একই উত্তর, একই ভুল। তা হলে শিখছে কি? এটার উত্তর জানা। কিছুই নয়। কলেজের পরীক্ষায় কে কতটাই বা শেখে! সবই তো উগড়ে দেয়ার কাহিনি।

সে প্রসঙ্গ থাক। প্রশ্ন হলো, অনলাইনে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা কী করে হচ্ছে? এক অধ্যাপক হাসতে হাসতে বললেন, ওই প্রক্রিয়ার কিছুটা বলতে পারলেই নম্বর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আর উপায় কী?

এটাই বাস্তব। উপায় কারো জানা নেই। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা অজ্ঞানতার অন্ধকারে। তা হলে এই ছাত্রছাত্রীরা যখন পাস করে বেরবে, তখন কী হবে? এর একটা সহজ উত্তর হলো, আগে তো বেঁচে থাকতে হবে। তারপর পড়া, পরীক্ষা, শিক্ষা, জ্ঞান সবকিছুই হবে বা হতে পারে। বেঁচে থাকাই যেখানে সব চেয়ে বড় সমস্যা, সেখানে অন্য সব প্রশ্ন অবান্তর। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে বেঁচে গেলে তারপর না হয়, যাবতীয় ফাঁকফোকড়, অপদার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য