1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চোখের রেটিনা বলে দেবে আলসহাইমারের লক্ষণ

১৮ এপ্রিল ২০১১

বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি রোগ মানব জগতকে ক্রমেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে তার অন্যতম একটি হলো আলসহাইমার৷বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন কোটির মত লোক আলসহাইমার রোগে আক্রান্ত৷

https://p.dw.com/p/10vGn
ইঁদুরের উপর প্রাথমিক পরীক্ষা চালানো হয়েছেছবি: DW/G. Hoffmann

তাদের আশঙ্কা যে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দুই কি তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে৷ তাই এই রোগ প্রতিরোধে কী করা যায়, সেটা নিয়ে দিনরাত গবেষণা করে যাচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা৷

রোগের লক্ষণ ও ফলাফল

তবে তার আগে এই রোগ সম্পর্কে কিছু বলে নিই৷ সাধারণভাবে বলতে গেলে, স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলাটাকে আমরা আলসহাইমার বলে জানি৷ অনেকে একে স্মৃতিভ্রষ্টতা বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ মানুষের শরীরের স্নায়ু কোষে থাকা বেটা অ্যামিলয়েড এবং টাউ প্রোটিন এদিক সেদিক হয়ে গেলেই মানুষ আলসহাইমারে আক্রান্ত হয়৷ এর ফলে দেহের স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কোষগুলোর একে অপরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত হয়৷

উল্লেখ্য, মানুষের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল করটেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস অংশটি চিন্তা করতে এবং কোন কিছু শিখতে এবং চিনতে সাহায্য করে৷ কিন্তু স্নায়ু কোষের ক্ষতির ফলে যা হয় তা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিটির মস্তিষ্কের এই অংশগুলো আর ঠিকমত কাজ করতে পারে না৷ মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে যেতে শুরু করে এবং তার আকারও কমতে থাকে৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে ভয়াবহ আলসহাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের আকার শতকরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়৷

Future Now Alzheimer
মিউনিখের ইন্সটিটিউট ফর নিউরোপ্যাথলজি-র ইয়খেন হ্যার্মসছবি: DW/G. Hoffmann

আলসহাইমারে আক্রান্ত হলে একজন মানুষের স্মৃতি শক্তি কমে যেতে শুরু করে৷ প্রাথমিকভাবে তার শেখার ক্ষমতা কমে যায়৷ সাধারণত মানুষের ১৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে এই আলামত বুঝতে৷ এর পরবর্তী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি সহজে কোন কিছু মনে করতে কিংবা চিন্তা করতে পারে না৷ কোন কথা গুছিয়ে বলতেও তার সমস্যা হয়৷ আলসহাইমারের এই পর্যায়ে এসে মানুষের আচার আচরণও বদলে যেতে থাকে৷ তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে মানুষ তার আশেপাশের কাউকে সহজে চিনতে পারে না এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে৷ এমনকি স্থান কিংবা সময়জ্ঞানও তারা হারিয়ে ফেলে৷ নিজের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মানুষ এবং এভাবেই তার দিন কাটতে থাকে৷

বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা

আলসহাইমার রোগের বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখনও তেমন সাফল্য দেখাতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা৷ কোন আলামতটি মস্তিষ্কের স্মৃতিভ্রষ্টতা আর কোনটা দ্বিধাগ্রস্ততা তার পার্থক্য করতে করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়৷ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স টোমোগ্রাফ কিংবা নিউক্লিয়ার মেডিসিন প্রয়োগ করে এই রোগ নির্ণয় করা যায়, কিন্তু ততদিনে মস্তিষ্কের এক তৃতীয়াংশ কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই আগে থেকেই এই রোগ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা চলছে৷

আর এই ক্ষেত্রে নতুন এক ধারণা দিয়েছেন জার্মানির বিজ্ঞানী ইয়খেন হ্যার্মস৷ মস্তিষ্ককে নয় বরং চোখকে পর্যবেক্ষণ করেই আলসহাইমার রোগের লক্ষণ আগে থেকে ধরার একটি উপায় বাতলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন এই জার্মান বিজ্ঞানী৷ আর যদি এটি সম্ভব হয়, তাহলে বহু আলসহাইমার রোগী তার দুরবস্থা থেকে বেঁচে যেতে পারবে৷

Future Now Alzheimer
মিউনিখের ইন্সটিটিউট ফর নিউরোপ্যাথলজিছবি: ZNP München

চোখের রেটিনা পর্যবেক্ষণ

জার্মানির মিউনিখের ইন্সটিটিউট ফর নিউরোপ্যাথলজি-তে ইয়খেন হ্যার্মস এর নেতৃত্বে ২০ জন গবেষক এখন এই নিয়েই কাজ করে চলেছেন৷ তাঁরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান৷ প্রথমে তাঁরা একটি ইঁদুরের মস্তিষ্ক স্ক্যান করেন, এরপর ইঁদুরের রেটিনাকে বিশেষ ধরণের একটি স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করেন৷ হ্যার্মস এর মতে, আলসহাইমার রোগীর মস্তিষ্কে যেসব পরিবর্তন ঘটে চলে তার একটি ছাপ পড়ে চোখের রেটিনাতেও৷ তাই চোখের রেটিনায় কী ধরণের পরিবর্তন ঘটে চলেছে তা যদি আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে আলসহাইমারকেও নির্ণয় করা সম্ভব হবে৷ বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে মানুষের ওপরও এই ধরনের একটি পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে স্নায়ুকোষে যদি কোন পরিবর্তন ঘটে তাহলে সেটা রেটিনাতে এসে শেষ হয়৷ আর চোখের রেটিনাও মস্তিষ্কেরই একটি অংশ৷

আলসহাইমার নিয়ে জার্মান বিজ্ঞানীদের এই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে তিন বছর, যা শেষ হবে এই বছরের শেষ নাগাদ৷ প্রায় চার মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আশার সঞ্চার হয়েছে৷ ইয়খেন হ্যার্মসের ধারণা সঠিক হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হয়তো তা একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন