1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চুয়িংগাম দিয়ে শিল্প

শ্যারন ব্যারকাল/এসবি১৮ নভেম্বর ২০১৫

আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে চুয়িংগাম চিবিয়েছে৷ কিন্তু চুয়িংগাম দিয়ে শিল্পসৃষ্টির আইডিয়া বোধহয় কারো মনে আসেনি৷ ইটালির এক শিল্পী বড় আকারে চুয়িংগাম দিয়ে অভিনব ভাস্কর্য তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/1H7JH
Screenshot DW euromaxx 28.7.2015
ছবি: DW

কিংবদন্তি অনুযায়ী রোম শহরের দুই প্রতিষ্ঠাতা শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়েছিল ‘লা লুপা' নামের এক নেকড়ে মা৷ ইটালির এই শহরের বিভিন্ন স্থানে পাথরের তৈরি সেই নেকড়ের মূর্তি শোভা পাচ্ছে৷ ১৪ কিলো চুয়িংগাম দিয়েও এমন মূর্তি তৈরি হয়েছে৷ দাম ২৮,০০০ ইউরো৷

ইটালির শিল্পী মাউরিৎসিও সাভানি চুয়িংগাম দিয়ে যে সব ভাস্কর্য তৈরি করেন, সেগুলির খুঁটিনাটি বিষয় চোখে পড়ার মতো – তবে সবার জন্য হয়ত রুচিসম্মত নয়৷ মাউরিৎসিও বলেন, ‘‘সবার আগে মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে, তুমি কি এই সব চুয়িংগাম নিজেই চিবাও? এর মধ্যে কত লক্ষ বার যে এই প্রশ্ন শুনতে হয়েছে! আমার প্রায়ই বিরক্ত লাগলেও মানুষের মনে সত্যি এই প্রশ্ন জাগে৷ না, আমি কখনো চুয়িংগাম খাইনি৷''

বছর দশেকেরও বেশি সময় ধরে মাউরিৎসিও চুয়িংগাম নিয়ে কাজ করছেন, তবে সেগুলি মোটেই কেউ চিবায় না৷ বরং গরম করে প্লাস্টারের কাঠামোর উপর ইচ্ছামতো বসানো হয়৷ এই কাঠামো ছাড়া ভাস্কর্য স্থিতিশীল হতো না৷ এই শিল্পীর কাছে চুয়িংগাম শুধু মালমশলা৷ তবে এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও রয়েছে৷ মাউরিৎসিও সাভানি বলেন, ‘‘আমি আসলে এমন কিছু খোঁজ করছিলাম, ভারি শিল্পের সঙ্গে যার যোগসূত্র রয়েছে৷ তাছাড়া শিল্প ও সামাজিক ইতিহাসের সঙ্গেও সম্পর্ক চাইছিলাম৷ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর চুয়িংগাম ইউরোপে এসেছিল৷ আমি অবশ্য একে কখনো খাদ্য হিসেবে মনে করিনি৷ ১৯৫০ সালের মধ্যেই কোকা কোলা ও নায়লন মোজার মতো চুয়িংগাম ইউরোপীয় সংস্কৃতির উপর গভীর ছাপ ফেলেছিল, যার রেশ আজও কাটেনি৷''

নিজের শিল্পকর্মের জন্য মাউরিৎসিও একটি বিশেষ কোম্পানির চুয়িংগাম ব্যবহার করেন৷ তার নাম না হয় নাই করলাম৷ কারণ সেই কোম্পানি এই শিল্পসৃষ্টিকে স্বীকৃতি দিলেও উপকরণ যোগান দিয়ে সাহায্য করে না৷ অথচ মাউরিৎসিও সরাসরি কারখানা থেকেই কাঁচামাল কিনতে আগ্রহী৷ কিন্তু তার বদলে এখন প্রত্যেকটি চুয়িংগামের জন্য আলাদা করে প্যাকিং খুলতে হয়৷ তারপর সেগুলি গরম করে তাল তৈরি করতে হয়৷ দুই সহকারী তাঁকে সাহায্য করেন৷

এই কাজে অনেক সময় লাগে৷ একটি ভাস্কর্যের জন্য কখনো তিন হাজারের বেশি চুয়িংগাম কাজে লাগে৷ মাউরিৎসিও সাভিনির শিল্পকর্মের মধ্যে প্রায়ই রাজনীতি ও সমাজের বিতর্কিত বিষয় উঠে আসে৷ সেই বার্তা আরও জোরদার করতে তিনি বিশেষ কোনো রং বেছে নেন৷ মাউরিৎসিও বলেন, ‘‘আমি এই বিশেষ গোলাপি রং ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম৷ অতীতে চুয়িংগাম ছাড়াই এই রং দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করেছি৷ আমার মতে, গোলাপি রং কৃত্রিমতার প্রতীক৷ দেখলেই মনে হবে, চাপিয়ে দেওয়া এক জগত৷''

রোম শহরেই জন্ম৷ বড় হয়ে সেখানেই মাউরিৎসিও স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ তারপর শিল্পী হিসেবে কয়েক বছরের জন্য বিদেশে চলে যান৷ আজ তিনি আবার জন্মের শহরে ফিরে এসে কাজ করছেন৷ গোটা বিশ্বে তাঁর ভাস্কর্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি হয়৷ কখনো ৫০,০০০ ইউরো পর্যন্ত দামও উঠে আসে৷ উপকরণ চুয়িংগাম হওয়া সত্ত্বেও শুরু থেকেই তাঁর শিল্পকর্মের কদর রয়েছে৷ শুধু প্রথম প্রদর্শনীর সময় কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ মাউরিৎসিও সাভানি বলেন, ‘‘প্রথম প্রদর্শনী ভালোই চলেছিল৷ তবে একটা মজার সমস্যা হয়েছিল৷ বিক্রির মাস তিনেকের মধ্যেই ভাস্কর্য পুরো নষ্ট হয়ে যেত৷ সেগুলি ফেরত পাঠানো হতো৷ আমাকেও অর্থমূল্য ফেরত দিতে হতো৷ কিন্তু ততদিনে তো আমি সেই টাকা খরচ করে ফেলেছি!''

আসল সমস্যা ছিল, চুয়িংগামের মধ্যে চিনির অধিক মাত্রা মূল কাঠামোকে নষ্ট করে দিচ্ছিল৷ তারপর থেকে মাউরিৎসিও তাঁর ভাস্কর্য সংরক্ষণ করতে ফর্মালডিহাইড ও অ্যান্টিবায়োটিকের এক মিশ্রণ ব্যবহার করছেন৷ ফলে রোমের এই প্রজন্মের শিল্পও ভবিষ্যতে অমর হয়ে থাকতে পারবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য