চীনের বিস্মৃত, পরিত্যক্ত এক থিম পার্ক
মিশরের পিরামিড থেকে শুরু করে হল্যান্ডের উইন্ডমিল বা জার্মানির ক্যাসল – চীনের ওয়াঙ্গুও ‘থিম পার্কে’ দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য সব কিছু রাখা ছিল, যদিও পার্কটি কোনোদিন খোলা হয়নি৷
চীনের মাঝখানে মিশরের পিরামিড
তফাৎ শুধু এই যে, আদত পিরামিডগুলি পাথরের উপর পাথর বসিয়ে তৈরি; ওয়াঙ্গুও থিম পার্কে ঢালাই কংক্রিট দিয়ে সে কাজ সারা হয়েছে – আর সাইজটাও কিছু ছোট৷ থিম পার্কটি হুবাই প্রদেশের উহান শহরের কাছে – ১৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে৷ পিরামিডদের সঙ্গে বোধহয় সেখানেই আসল মিল৷
আরেক টুকরো মিশর
মিশরে ফারাওদের আমলের বৃহত্তম প্রার্থনাস্থল ছিল কারনাক, আজ যা চার হাজার বছরের পুরনো৷ ওয়াঙ্গুওর কারনাকের বয়স মাত্র ১৮ হলেও, ইতিমধ্যেই তার অবস্থা আদত কারনাকের চেয়ে শোচনীয় – পাথর আর কংক্রিটের মধ্যে যে ফারাক৷ তবে ওয়াঙ্গুওর কারনাকে মিশরের কারনাকের অনুকরণে থামগুলোর উপর মিশরীয় লিপি দেখতে পাওয়া যাবে৷
পড়ে আছে উইন্ডমিল
উহান শহরের মানুষজনের এককালে এই ওয়াঙ্গুও থিম পার্কে ভিড় জমানোর কথা ছিল৷ উহান শহরটি বেইজিং থেকে হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে, অধিবাসীর সংখ্যা এক কোটি৷ কিন্তু পার্কটি কোনোদিনই খোলা হয়নি৷ কাজেই ওয়াঙ্গুওর উইন্ডমিলগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ উইন্ডমিল বলা চলে৷
প্রকৃতির দান – বা প্রতিদান
থিম পার্ক তৈরির কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্পটি বাতিল করা হয়৷ ইতিমধ্যে প্রকৃতিদেবী আবার তাঁর রাজত্ব দখল করতে চলেছেন: আসল কি নকলে তাঁর আপত্তি নেই; একালেও মানুষের সৃষ্টি ঢাকা পড়ছে শ্যাওলা ও লতাপাতায়৷
ইউরোপের মায়া
ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারা সম্পর্কে চীনাদের – শুধু চীনাদের কেন – সারা দুনিয়ার মানুষের আগ্রহ চিরন্তন৷ তাই কোপেনহাগেনের ‘লিটল মারমেড’ বা জলপরীকে ওয়াঙ্গুওতেও পাওয়া যাবে৷ তবে কাছাকাছি সাগর না থাকায় জলপরীকে একটু বিষণ্ণ দেখালে করার কিছু নেই৷
পিকনিক করার জায়গা তো বটে
বিস্মৃত, পরিত্যক্ত থিম পার্কে বেঞ্চ আছে, বসবার জায়গা আছে৷ কাজেই পিকনিক করায় কোনো অসুবিধে নেই৷ ওদিকে কাছেই রয়েছে ইস্ট লেক, চীনের সবচেয়ে বড় শহুরে লেক বা হ্রদ – আহা, ওয়াঙ্গুওর জলপরীকে যদি কেউ সেটা বলে দিত! লেকের ধারেই পাওয়া যাবে নানা মিউজিয়াম ও একটি বটানিক্যাল গার্ডেন; এমনকি উহান বিশ্ববিদ্যালয়ও বেশি দূরে নয়৷
এবার জার্মান ক্যাসল
যে কোনো জার্মান ক্যাসল নয়, খোদ বাভেরিয়ার শ্লস নয়শোয়ানস্টাইন, সারা দুনিয়ার পর্যটক যে প্রাসাদদুর্গটিকে চেনেন৷ চীনা ইঞ্জিনিয়াররা আদত নয়শোয়ানস্টাইনের সব মাপ বজায় রাখতে পারেননি, তাই দুর্গ ছাড়িয়ে উঠেছে গাছের মাথা৷