1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনে পরিবেশ দূষণ ও অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যে সংঘাত

২৭ ডিসেম্বর ২০১৯

অর্থনৈতিক উন্নতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ কি পরস্পরবিরোধী? চীনকে ঘিরে এই বিতর্কের মাঝে সে দেশে দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্যের একাধিক উদ্যোগ চলছে৷ সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/3VNNg
China | Illegale Stahlfabriken unterlaufen Chinas Emissionsgesetze
ছবি: Getty Images/K. Frayer

বেইজিং থেকে গাড়িতে মাত্র তিন ঘণ্টা দূরত্বেই প্রকৃতির স্বাদ পাওয়া যায়৷ কিন্তু পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে জাং জুনফেং জানেন, যে পরিস্থিতি মোটেই আদর্শ নয়৷ নদীতে প্রায় কোনো পানি নেই বললেই চলে৷ বেইজিং শহরের আশেপাশের পরিবেশে দুই দশক ধরে প্রাণের স্পন্দন যেভাবে কমে চলেছে, তিনি তা নথিভুক্ত করছেন৷ জাং বলেন, ‘‘শুধু উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার তাগিদেই আমাদের এখানে সবকিছু চালিত হচ্ছে৷ কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা লাগামহীনভাবে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করে চলেছি৷ কেউ জানে না, ভবিষ্যতে কী হবে৷''

চীনের বড় শহরগুলি ও সেগুলোর উপকণ্ঠে ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ ও নিম্ন মানের বাতাস আজ করুণ বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ আজকাল সবাই নিয়মিত বাতাসের মান সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করেন৷ জাং জুনফেং মনে করেন, ‘‘এই পাহাড়ি অঞ্চলে বাতাসের মান ভালো, বেশ তাজাই বলতে হয়৷ কিন্তু বেইজিং শহরের কাছাকাছি গেলেই দূষিত বাতাস টের পাই, শরীর খারাপ লাগে৷''

চার বছর আগে বেইজিং-এর বাতাসের মান অন্যরকম ছিল৷ দুপুরের দৃশ্য দেখলে মনে হবে সন্ধ্যা হয়ে গেছে৷ গোটা বিশ্বে চীন সবচেয়ে বড় বায়ু দূষণকারী দেশ৷

বহুকাল ধরে চীন শুধু কয়লার উপর নির্ভর করে ছিল৷ তবে এখন আর নতুন করে কোনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে না৷ ২০১৩ সাল থেকে কয়লার ব্যবহারও আর বাড়ছে না৷ ‘চায়না ডায়ালগ' পরিবেশ সংগঠনের টম ব্যাক্সটার মনে করেন, ‘‘গত পাঁচ বছরের মধ্যে বিশেষ করে চীনের উত্তরাঞ্চলে বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে৷ সরকার অনেক কাজ করেছে৷ সাধারণ মানুষ আর কয়লা জ্বালিয়ে ঘর গরম করতে পারেন না৷ তাছাড়া শিল্পের জন্য নির্গমনের কড়া নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷''

অনেক কলকারখানায় সর্বক্ষণ নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং অনলাইনে সেই তথ্য দেখা যাচ্ছে৷ মা জুন এক অ্যাপের মধ্যে সেই সব তথ্য সংগ্রহ করছেন৷ কেউ নির্গমনের মাত্রা অতিক্রম করলে যে কেউ তা দেখতে পায়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের উদ্যোগের ফলে বড় কলকারখানা, এমনকি রাষ্ট্রীয় মালিকানার কারখানাগুলিও জনমতের চাপে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে এবং নিজস্ব পরিবেশ দূষণ কমাচ্ছে৷''

চীন গোটা বিশ্বের কারখানা হিসেবে পরিচিত৷ সে কারণে নির্গমনের মাত্রাও কম নয়৷ মা জুন মনে করেন, ডেল, আডিডাস বা এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো কোম্পানিগুলির উচিত, সরবরাহকারীদের দিকেও নজর রাখা৷  তিনি মনে করেন, ‘‘আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি শুরুতে সবসময় বলতো, সদিচ্ছা থাকলেও চীনে কে দূষণ করছে আর কে করছে না, তা তারা জানতো না৷ আমি বললাম, এই তো, সব তথ্য এখানে রয়েছে৷''

ইস্পাত ও সিমেন্টের কারখানা পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় উৎস৷ চীনের সমৃদ্ধি দ্রুত বেড়ে চলেছে, সেই সঙ্গে অবকাঠামোরও ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে৷ মাত্র তিন বছরে সে দেশ যে পরিমাণ সিমেন্ট ব্যবহার করেছে, অ্যামেরিকা গোটা বিংশ শতাব্দী জুড়েও তা করে নি৷ নির্মাণের ক্ষেত্রে এখনো জোয়ার চলছে৷ ‘চায়না ডায়ালগ' পরিবেশ সংগঠনের টম ব্যাক্সটার বলেন, ‘‘চীনের আকার-আয়তনের কারণে সে দেশের শিল্প ও কয়লা ব্যবহারের গতিপ্রকৃতি গোটা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷''

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্লান্টও চীনেই অবস্থিত৷ অন্য কোনো দেশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে এত বেশি বিনিয়োগ করছে না৷ সৌর বিদ্যুৎ ইতোমধ্যে তাপবিদ্যুতের তুলনায় সস্তা হয়ে উঠেছে৷

বেইজিং শহরের কাছে পাহাড়ি অঞ্চলের দিকে আবার নজর দেওয়া যাক৷ চীন সঠিক দিশায় এগোচ্ছে বলে জাং জুনফেং মনে করেন৷ চীনে বর্তমানে মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় অর্ধেক৷ এমনটাই কাম্য বলে তিনি মনে করেন৷ জাং বলেন, ‘‘এখানকার মানুষ পরিবেশজনিত সমস্যা সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে পড়ছে এবং আরও সক্রিয়ভাবে এর মোকাবিলা করছে৷ ব্যক্তিগত স্বার্থেই যে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে, অনেকেই তা বুঝতে পেরেছেন৷''

জাং মনে করেন, অনেকে বেড়ে চলা সমৃদ্ধি ও পরিবেশ সংরক্ষণকে পরস্পরবিরোধী হিসেবে দেখেন৷ সুন্দর প্রকৃতিও যে সমৃদ্ধির সূচক, নিজের ছবির মাধ্যমে তিনি তা দেখিয়ে দিতে চান৷

তামারা অ্যান্টনি/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য