চীন ও হংকংয়ের নির্যাতিত শিল্পীরা
চীনের মূল ভূখণ্ডের শিল্পীদের মতোই হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি শিল্পীরাও নিজেদের সৃজনশীলতায় লাগাম টানতে বাধ্য হচ্ছেন৷ নীচের ছবিঘরে থাকছে শিল্পের কারণে বেইজিংয়ের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া কিছু শিল্পীর কথা৷
লুই জিয়াওবো
কারাভোগ করা অবস্থায় ‘চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য দীর্ঘ অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ’ ২০১০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান লুই জিয়াওবো৷ চীনা এই লেখক, সমালোচক, দার্শনিক ও মানবাধিকারকর্মী একধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ চীনা কমিউনিস্ট শাসকদের সবচেয়ে বড় সমালোচক ও সবচেয়ে বিখ্যাত রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে৷ ২০১৭ সালে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন তিনি৷
কেসি ওয়ং
সম্প্রতি হংকং ছেড়ে তাইওয়ানে পাড়ি জমিয়েছেন কেসি উওং৷ শৈল্পিক অনুভূতি প্রকাশে বাধাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি৷ রাজনৈতিক পারফরম্যান্স আর্টের জন্য খ্যাত এই শিল্পী তিয়েন আনমেন হত্যাকাণ্ড এবং চীনা সেন্সরশিপের মতো বিষয় নিয়ে পারফর্ম করেছেন৷ ছবিটি ২০০৮ সালে ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’ নামের একটি পারফরম্যান্সের৷ এই পারফর্ম্যান্স চলাকালে তিনি লাল রঙের খাঁচায় বন্দি অবস্থায় চীনের জাতীয় সঙ্গীত বাজান৷
অ্যান্থনি উওং
অ্যান্থনি উওং (বামে) হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের একজন সমর্থক৷ ২০১৮ সালে এক উপনির্বাচনে ‘আ ফরবিডেন ফ্রুট পার ডে’ (প্রতিদিন একটি করে নিষিদ্ধ ফল) শিরোনামের গান গেয়ে ব্যাপক আক্রোশের শিকার হন৷ হংকংয়ের দুরিনীতি বিরোধী সংস্থা ইনডিপেনডেন্ট কমিশন অ্যাগেনস্ট করাপশন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেছে৷
ডেনিসে হো
২০১৪ সালে হংকংয়ে আমব্রেলা মুভমেন্টে যোগ দেয়ার জন্য ক্যান্টোপপ গায়িকা, অভিনেত্রী এবং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী ডেনিসে হোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ ২০১৯ সালে একটি টেড টকে তিনি বলেন, স্বৈরাচার সৃষ্টিশীলতাকে টেক্কা দিতে পারে না৷
আই ওয়েইওয়েই
সমসাময়িক শিল্পী এবং রাজনৈতিক সমালোচক আই ওয়েইওয়েইকে ২০১১ সালে কর ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়৷ ৮১ দিন কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে কারাভ্যন্তরের ভয়াবহতার বর্ণনা দেন তিনি৷ ওয়েইওয়েই বলেন, ‘‘আমার শিল্পের যদি কোনো অর্থ থেকে থাকে, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য৷ যদি দেখি কর্তৃত্ববাদের কবলে কেউ হয়রানি হচ্ছে, আমি তার স্বাধীনতা রক্ষার সৈনিক হতে চাই৷
ঝো চিং
‘নিষিদ্ধ’ বিষয়ে লেখালেখি করে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং লেখক ঝো চিংকে বেশ বিপদেই পড়তে হয়েছে৷ ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘চীনে সত্য জানতে চাওয়ার মানুষদের জীবনে অশেষ দুর্দশা নেমে এসেছে৷ সত্য জানা একজন সাধারণ মানুষও যদি তা প্রকাশ্য়ে বলে, তাকে তার চাকরি বা পরিবারকে হারাতে হতে পারে৷ সত্য বলা লেখকের নিত্যসঙ্গী কারাদণ্ডের হুমকি৷ একজন সত্য বলা কর্মকর্তা তার জীবন হারাতে পারেন৷’’
বাদিউচাও
এটি অবশ্য চীনের বিখ্যাত রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট, শিল্পী ও অধিকারকর্মীর আসল নাম নয়৷ ২০০৯ সালে তিনি সাংহাই ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাস করতে শুরু করেন৷ কিন্তু তারপরও নিজের পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে বাদিউচাও নামকেই বেছে নিয়েছেন৷ স্যাটায়ার ও পপ সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রোপাগান্ডার সমালোচনা করেন তিনি৷ তার সমালোচনার অন্যতম লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷
ক্লোয়ে ঝাও
২০২১ সালে সেরা পরিচালক হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব জেতার পর চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বেইজিংয়ে জন্ম নেয়া ক্লোয়ে ঝাওকে ‘চীনের গর্ব’ বলে উল্লেখ করেছিল৷ কিন্তু এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নামের উল্লেখ করা হলে সেগুলোও মুছে ফেলা হতে থাকে৷ ধারণা করা হয় ২০১৩ সালে ফিল্মমেকার ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘চীনে সবখানেই মিথ্যের ছড়াছড়ি’৷