1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে প্লাজমা

২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ একাধিক রোগের ক্ষেত্রে ক্ষত বা আক্রান্ত কোষ সেরে উঠতে চায় না৷ প্লাজমা ব্যবহার করে এ ক্ষেত্রে ইদানীং বেশ সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে৷ পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর ব্যাপক হারেও নতুন এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3VGmj
Plasmakugel
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Karpukhin

প্লাজমা আসলে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাচ৷ এটি রোগের নিরাময়ে সহায়তা করার ক্ষমতা রাখে৷ সূর্য ও বাজ পড়ার সময়, অর্থাৎ প্রকৃতির মাঝেও প্লাজমার দেখা পাওয়া যায়৷ তবে তার তাপমাত্রা খুবই বেশি থাকে৷ গবেষকরা সফলভাবে শীতল প্লাজমা তৈরি করেছেন৷ ফলে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে৷ বায়োকেমিস্ট ড. কাই মাসুয়র বলেন, ‘‘এখানে যেন কল্পবিজ্ঞান বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ অর্থাৎ আমরা এমন সব রোগীর চিকিৎসা করি, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে যাদের ক্ষত সারে নি৷ আমরা দেখছি, প্লাজমা সত্যি কাজ করে৷''

প্লাজমা তৈরি করতে পদার্থবিদদের আর্গন গ্যাস ভরা একটি বোতল, ইলেকট্রোড-সহ কিছু তার, বিদ্যুৎ ও একটি আধারের প্রয়োজন হয়৷ তারপর কাজ শুরু হয়৷ আধারের মধ্যে ভোল্টেজ ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মাধ্যমে গ্যাসের নিউট্রাল কণা রিচার্জ করা হয়৷ তখন আচমকা প্লাজমা সৃষ্টি হয়৷

কিন্তু প্লাজমা আসলে কী? পদার্থবিদ প্রো. ক্লাউস-টিটার ভেল্টমান বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘এটি এমন এক গ্যাস, যার মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে৷ চার্জ ক্যারিয়ার হবার কারণেই সেটা সম্ভব হয়৷ বৈদ্যুতিক ভোল্টেজের মাধ্যমে এক গ্যাসের মধ্যে চার্জ ক্যারিয়ার সৃষ্টি করা হয়৷''

কোষের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, যে প্লাজমা ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকের মতো অনেক রোগের প্যাথোজেন মেরে ফেলে৷ তাঁদের মতে, ল্যাবে যা সম্ভব হচ্ছে, মানুষের ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগ করা সম্ভব৷

প্রো. ভেল্টমান প্লাজমার আরও গুণ তুলে ধরে বলেন, ‘‘একদিকে কোষ উৎপাদন প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করা এবং সেই কাজে মদত দেওয়া যায়৷ অন্যদিকে ব্যাকটিরিয়ার প্রভাব কমানোর সুযোগ রয়েছে৷ অর্থাৎ একদিকে খতম করা, অন্যদিকে উদ্দীপিত করা যায়৷''

রোগগ্রস্ত মানুষ কীভাবে এর ফলে উপকৃত হতে পারে. গ্রাইফসভাল্ড বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসক ও গবেষকরা সে বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ তাঁরা দুভাবে ক্ষত সারানোর চেষ্টা করেছেন৷ নিরময়ের প্রক্রিয়ার তুলনা করতে একবার প্লাজমা ব্যবহার করেছেন, অন্যবার করেন নি৷

ক্ষতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন জ্ঞান অবিলম্বে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ ডাক্তাররা প্রতিদিন প্লাজমা কলমের মাধ্যমে তাজা ক্ষতের চিকিৎসা করছেন৷ ড. কাই মাসুয়র বলেন, ‘‘প্লাজমার অ্যান্টি মাইক্রোবিায়াল প্রভাব অবশ্যই প্রধান কার্যকারিতা৷ অর্থাৎ আমরা ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস খতম করতে পারি৷ দীর্ঘকাল সংক্রমিত ক্ষতের জন্য এটা অবশ্যই প্রধান বিষয়৷ সেইসঙ্গে আমরা মাইক্রো সার্কুলেশন চাঙ্গা করতে পারি, যাতে রক্তনালীর মধ্যে আরও রক্তচলচল ঘটে৷''

ক্ষতে জীবাণুর মাত্রা পরখ করতে প্রতি তিন দিন অন্তর ক্ষতের নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ এই চিকিৎসার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখনো দেখা যায় নি৷

ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা প্লাজমার প্রয়োগ সম্পর্কে গবেষণা করছেন৷ এ ক্ষেত্রেও দুই সম্পূর্ণ পৃথক প্রভাব দেখা যায়৷ প্লাজমা একদিকে ক্যানসারের কোষ মেরে ফেলতে পারে এবং অন্যদিকে সুস্থ কোষের বিকাশ তরান্বিত করতে পারে৷ টিউমারের উপর প্লাজমার প্রভাব কাকতালীয়ভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল৷ গ্রাইফসভাল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. হান্স-রোব্যার্ট মেটেলমান জানান, ‘‘আমরা আসলে রোগীদের শরীরে বড় ক্ষতের মধ্যে ব্যাকটিরিয়া দূর করতে চেয়েছিলাম৷ তার ঠিক নীচে টিউমার কোষও ছিল৷ আমরা আচমকা লক্ষ্য করলাম, যে টিউমার কোষও উধাও হয়ে যাচ্ছে৷''

প্লাজমা-ভিত্তিক চিকিৎসা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়েও শেখানো হচ্ছে৷ ত্বকের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালে প্লাজমার প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে৷ রস্টক শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ডায়াবিটিসের রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে প্লাজমা প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ রস্টক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো, স্টেফেন এমার্ট নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘ক্ষতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাজমার প্রয়োগ আমাদের এখানে ইতোমধ্যে নিয়মিত প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে৷ নিয়মিত প্রয়োগ চলছে এবং নতুন স্পেকট্রাল ইমেজিং প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এমনকি প্লাজমা-ভিত্তিক চিকিৎসার পর পরীক্ষা করে দেখেছি, যে ত্বকের মধ্যে রক্ত চলাচল প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে৷''

চিকিৎসকেরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষ প্লাজমার ফলে নানাভাবে উপকৃত হতে পারেন৷

সুসানে ক্লুগে-পাউস্টিয়ান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য