1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চায়না হারবারেই যেন শেষ না হয়

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ জানুয়ারি ২০১৮

চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না হারবারকে বাংলাদেশের যোগাযোগ সচিবকে ঘুস দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে কালো তালিকাভূক্ত করা হয়েছে৷ সচিব ওই ঘুস নেননি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ টিআইবি মনে করে, এর সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা দেখা প্রয়োজন৷

https://p.dw.com/p/2r5pD
ছবি: Privat

মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘‘কোম্পানিটি (চায়না হারাবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি) যোগাযোগ সচিবকে ৫০ লাখ টাকা ঘুস দিতে চেয়েছিল৷ সচিব বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন৷ এজন্য কোম্পানিটিকে ব্ল্যাক লিস্টেড করা হয়েছে৷ কোনো কাজ করতে পারবে না৷’’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি সার্ভিস লেনসহ ২২৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করতে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর এই কোম্পানির বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়৷ তারা নতুন আরো কাজ পেতে যোগাযোগ সচিবকে ওই ঘুসের অর্থ দিতে চেয়েছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘না, তারা তো কাজ আছেই৷ আমার মনে হয়, খুশি রাখার জন্য ঘুস দিতে চেয়েছিল, কাজে চুরি করার উদ্দেশ্য ছিল৷’’

এই ঘটনার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজটি সরকার নিজস্ব অর্থেই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এরইমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করছে৷ চীন সরকারের অর্থায়নে এই কাজ হওয়ার কথা ছিল৷ ২২৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে কত টাকা লাগবে, তা নিয়ে দর-কষাকষি চলছিল৷ তবে প্রকল্প সইয়ের সময় বলা হয়েছিল, ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে৷

১৫ অক্টোবর নজরুল ইসলাম সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সচিব হিসেবে যোগ দেন৷ এরপর  নভেম্বর মাসে তাঁর কাছে উপঢৌকনের একটি প্যাকেট পাঠায় চায়না হারাবার৷ আর ওই প্যাকেটেই ছিল ৫০ লাখ টাকা৷ পরে সড়ক পরিবহনসচিব বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান৷ এ ঘটনার পর মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি লিখে বিস্তারিত বর্ণনাসহ সেই অর্থ ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷

চায়না হারবার বাংলাদেশে আরো চারটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে নিযুক্ত হয়েছে৷ সেইসব কাজ থেকেও তাদের বাদ দেয়া হবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ অর্থমন্ত্রী এর আগে জানিয়েছিলেন, চায়না হারবার বাংলাদেশে আর কেনো কাজ করতে পারবে না৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার ঢাকায় উন্নয়ন ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে এখন কথা নয়, পরে কথা বলব৷’’

সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ নিয়ে জানতে চাওয়ার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ পরে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব মেলেনি৷

অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার যোগাযোগ সচিবের ঘুসবিরোধী ভূমিকার প্রশংসা করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘সে আমাদের গর্ব৷’’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চায়না হারাবারকে কালো তালিকাভুক্ত করা একটি খুবই ভালো উদাহরণ৷ এতে ঘুস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে৷ কিন্তু এটাই যেন শেষ না হয়৷ কারণ, বাংলাদেশের কেউ ঘুস না খেলে বাইরের যেই ঘুস দেয়ার চেষ্টা করুক না কেন তা সফল হবে না৷ আর যদি প্রচলন থাকে তাহলেই ঘুস দেয়ানেয়ার প্রশ্ন আসে৷

‘ঘুস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে’

তিনি বলেন, ‘‘চায়না হারবারের বিষয়টি তদন্ত করা উচিত৷ এই প্রক্রিয়ায় কারা কারা জড়িত তা জানা দরকার৷ তাহলে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে৷ আর চীন এখন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় অংশীদার৷ তাই চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিভুক্ত করে বাংলাদেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসের পরিচয় দিয়েছে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সেবাখাতসহ আরো কিছু খাতে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব৷ বাংলাদেশে তার উদাহরণও সৃষ্টি হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে৷ কিন্তু চায়না হারবারের মতো ঘটনায় দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সরকার ও প্রশাসনকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে৷ কারণ, এই ধরণের ঘটনায় দুর্নীতি হয় নীতি নির্ধারকদের মাধ্যমে৷’’

কোম্পানি চায়না হারবার বিশ্বের শীর্ষ নির্মাণ কোম্পানিগুলোর একটি৷ প্রায় ৮০টি দেশে তারা কাজ করছে৷ বাংলাদেশ চীন সরকারকে জানিয়েছে, তাদের ঘুস দেয়ার এই তৎপরতার কথা৷ জানা গেছে, বাংলাদেশ এখন অপেক্ষায় আছে তারা কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার জন্য৷ তার আগে আর নতুন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ৷