1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়

৫ নভেম্বর ২০২১

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরু সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রয়াত। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

https://p.dw.com/p/42bq3
সুব্রত মুখোপাধ্যায়
সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রয়াতছবি: Satyajit Shaw/DW

বৃহস্পতিবার দীপাবলির রাতে চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম রাজনীতিবিদ, দীর্ঘদিনের মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরু সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন বর্ণময় চরিত্র। কিছুদিন হলো তিনি অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন। আইসিইউ-তে রাখা হয়। রাত নয়টা ২২ মিনিটে তিনি মারা যান।

একসময় আলোড়ন তোলা ছাত্রনেতা ছিলেন সুব্রত। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাত্রনেতা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়েছেন। তারপর থেকে এতদিন তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বৈচিত্রপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি রাজনীতিতে একসময় প্রিয়-সুব্রত-সোমেনের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হতো। প্রিয় ও সোমেন আগেই চলে গেছেন। এবার গেলেন সুব্রত।

ছাত্র রাজনীতি থেকে

গত শতকে ছয়ের দশকের শেষ এবং সাতের দশকের শুরু ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির টালমাটাল সময়। অতি-বাম নকশাল আন্দোলনে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। তার পাশাপাশি সিপিএমের উত্থান এবং প্রিয়-সুব্রতদের উঠে আসা।  ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। সেইসময় প্রচারে প্রিয়র সঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন সুব্রত। তখন দুইজনে একসঙ্গে ঘুরতেন। বক্তা হিসাবে প্রিয় ছিলেন অসাধারণ। কিন্তু সুব্রতও কম যেতেন না। শুধু তাদের দেখতে ও শুনতে মানুষ ভিড় করত।

প্রিয় চলে আসেন জাতীয় রাজনীতিতে, সুব্রত থেকে যান বাংলার রাজনীতিতে। কখনো তিনি দিল্লিতে এসে রাজনীতি করতে উৎসাহ দেখাননি। অথচ, ইন্দিরা গান্ধী তাকে খুবই পছন্দ করতেন। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির জায়গাটা তার প্রিয়দাকে দিয়ে নিজে রাজ্যেই আবদ্ধ থেকেছেন। সেই সুব্রত মাত্র ২৬ বছর বয়সে রাজ্যে মন্ত্রী হন। ৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন, তখন সুব্রত ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।

মমতা ও সুব্রত

সবসময় সুব্রত মুখোপধ্যায়কে তার রাজনৈতিক গুরু হিসাবে মানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরে কংগ্রেসের প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ, যাদবপুর তখন বামেদের দুর্গ, তার উপর প্রার্থী ছিলেন দাপুটে নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেসময় সুব্রতই সেখানে প্রার্থী হিসাবে মমতার নাম প্রস্তাব করেন। তখন মমতাকে খুব একটা কেউ চিনতেন না। তিনি তখন যুব কংগ্রেসের কর্মী মাত্র। কিন্তু সুব্রতর চোখে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মমতা প্রার্থী হলেন, সোমনাথকে হারিয়ে দিলেন। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মমতাকে।

২০০০ সালে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন সুব্রত। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি কলকাতার মেয়র হন। মেয়র থাকার সময় শেষের দিকে তার সঙ্গে মমতার মতবিরোধ চরমে ওঠে। তিনি তৃণমূল ছেড়ে আলাদা মঞ্চ করে পুরভোটে লড়েন কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। নিজে জিতলেও দল ও জোট জেতেনি।  তারপর তিনি আনুষ্ঠনিকভাবে আবার কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০১০ সালে আবার তৃণমূলে ফেরেন।

তারপর থেকে তিনি অবশ্য তৃণমূলে। কিন্তু তার আগেই তিনি তৃণমূল নেত্রীকে 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' বলে অভিহিত করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি দীর্ঘদিন পঞ্চায়েত দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন। শেষের দিকে তিনি অনেকটা শান্ত হয়ে গেছিলেন। নিজেকে দপ্তরের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন।

সুব্রত চলে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর মমতা বলেছেন, ''এমন আলোর দিনে অন্ধকার নেমে আসবে ভাবিনি।'' তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে বলেছেন, ''আমি সুব্রতদার মরদেহ দেখতে পারব না।'' পরে মমতা বলেন, ''ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তার সঙ্গে থেকেছি, তার নেতৃত্বে বড় হয়েছি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং শারদীয়া দুর্গাপুজোর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।''  মমতা জানিয়েছেন, ''সুব্রতদার সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন।''

মমতা লিখেছেন, ''মৃত্যুর দিনকয়েক আগেও সুব্রতদা বলেছিলেন, আমায় প্রোগ্রাম দে। গোয়ায় যাব। প্রচার করব। আমি ভালো আছি।''

রাজ্যের অন্যতম সেরা মন্ত্রী

প্রথম দিকে সবসময় প্রচারের আলোয় থাকতেন সুব্রত, পরের দিকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তার ধ্যানজ্ঞান ছিল দপ্তরের কাজ। পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসাবে তিনি ছিলেন পুরোপুরি সফল। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নের কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ভালো কাজের জন্য পুরো কৃতিত্বটাই তিনি পাবেন। তার কাজের প্রশংসা কেন্দ্রীয় সরকারও বারবার করেছে। তার হাতে এখন চারটি দপ্তরের দায়িত্ব ছিল। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালেও ফাইল দেখে গেছেন।

অভিনয় ও আড্ডা

সুব্রত মুখোপাধ্যায় অভিনয়ও করেছেন। টিভি ধারাবাহিক চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালসে। তার নায়িকা ছিলেন মুনমুন সেন। সুইমিং পুলে সুব্রত ও মুনমুনের ছবি সেসময় আলোড়ন তুলেছিল। 

জিএইচ/এসজি(পিটিআই)