1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলে গেলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী

১৯ মে ২০২২

একুশের গানের রচয়িতা ভাষা সৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরী বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করেছেন৷ তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর৷

https://p.dw.com/p/4BVN6
আবদুল গাফফার চৌধুরীছবি: Ajanta Deb Roy

লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘গত কিছুদিন ধরে গাফফার চৌধুরী হাসপাতালে ছিলেন৷ আজ সকাল ৭টার দিকে উনার মৃত্যু হয়েছে বলে উনার মেয়ে আমাকে জানিয়েছেন৷ আমরা গভীরভাবে শোকাহত৷''

বাঙালির কাছে আবদুল গাফফার চৌধুরী এক সুপরিচিত নাম৷ রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে তার লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন নিয়মিতই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো৷ তার অন্যতম সৃষ্টি একটি কবিতা৷

‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…'' এই কবিতা গাফফার চৌধুরী লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে৷ দেশে তখন ভাষা আন্দোলন চলছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাস্তায় তখন আপামর জনতা৷ ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলি চলে সেই আন্দোলনে৷ প্রাণ হারান রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতরা৷ সেইদিনের সাক্ষী গাফফার চৌধুরী৷

ডয়চে ভেলেকে দেয়া আবদুল গাফফার চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

প্রায় এক দশক আগে দেয়া ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সেসময় বাংলাদেশ আন্দোলনমুখর ছিল৷ কেননা, ভাষা আন্দোলন তো ৫২ সালেই শুরু হয়নি, ১৯৪৮ সালে শুরু হয়, যখন মি. জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন৷ তারপর এই আন্দোলন গড়াতে গড়াতে ৫২ সালে এসে রক্তাক্ত এক অধ্যায়ের সূচনা হয়৷''

শহিদ রফিকের মরদেহ দেখেছিলেন

গাফফার চৌধুরী শহিদ রফিকের মরদেহ দেখেছিলেন৷ পুলিশের গুলিতে রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল৷ ৫২'র ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ তিনি৷ কী দেখেছিলেন সেদিন? সেসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী গাফফার চৌধুরী বললেন, ‘‘আমি আরো দু'জন বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোর কক্ষে৷ সেখানে বারান্দায় শহিদ রফিকের লাশ ছিল৷ মাথার খুলিটা উড়ে গেছে৷ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন ছাত্র৷ তিনি তার ক্যামেরায় রফিকের ছবি তোলেন৷''

একটি লাশ, একটি কবিতা

রফিকের মরদেহ দেখে গাফফার চৌধুরীর মনে হয়েছিল, যেন তার নিজের ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে৷ তখনই তার মনে গুনগুনিয়ে ওঠে একটি কবিতা, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি''৷ সেই কবিতা পরবর্তীতে গানে রূপ নেয়৷

তিনি বলেন, ‘‘এই কবিতায় প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন৷ তারপরে আলতাফ মাহমুদ সুর দেন৷ আলতাফের সুরেই এটা প্রভাত ফেরির গান রূপে গৃহীত হয়৷'' 

‘ওরা মোর মুখের ভাষা কাইড়্যা নিতে চায়...'

২১শে ফেব্রুয়ারির সেই ঘটনায় বাঙালি বুঝতে পেরেছিল, তারা আসল স্বাধীনতা পায়নি৷ তাই ভাষা স্বাধীনতা, তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি তখন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র৷ গাফফার চৌধুরীর কথায়, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে রক্তপাতের পরে এটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সাধারণ মানুষের আন্দোলন হয়ে দাঁড়ায়৷ যার প্রতিধ্বনি শোনা যায় আব্দুল লতিফের গানে, ‘‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়্যা নিতে চায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই চেতনা বা বোধটুকু সাধারণ মানুষের মধ্যেও এসেছিল যে, আমার বাপ-দাদা'র জবান ওরা কাইড়্যা নিতে চায়৷ সুতরাং আন্দোলনটা তখন আর কোন এক শ্রেণির মধ্যে সীমিত ছিলনা৷ বাঙালি মাত্রই এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা সেক্যুলার জাতীয়তার চেতনায় উন্নীত হয়৷''

বাংলা ভাষায় পরিবর্তন

আবদুল গাফফার চৌধুরী বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন যেমন দেখেছেন, তেমনি দেখেছেন ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি৷ সহজ করে বললে, একটি ভাষাকেন্দ্রিক জাতির আন্দোলন, স্বাধীনতা, উত্থান সবই তার নখদপর্নে৷ তার কাছে জানতে চাই, গত কয়েক দশকে বাংলা ভাষার ধরণবরনে কোন পরিবর্তন কি খুঁজে পান?

উত্তরে গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলা ভাষায় দারুণ পরিবর্তন হয়েছে৷ সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর- এর যুগ থেকে শুরু করে বা বঙ্কিমের ভাষা যেরকম প্রমথ চৌধুরীর আমলে পরিবর্তিত হয়ে অনেকটা কথ্য ভাষায় রূপ নিয়েছিল, তেমনি আজকের বাংলা ভাষা অনেকটাই গণভাষায় পরিণত হয়েছে৷ অন্যদিকে আবার আমাদের বাংলা ভাষায় গ্রহণি শক্তি বেশি৷ আরবি, ফারসি, ইংরেজি - সব ভাষা থেকেই আমরা শব্দ আহরণ করি৷ এখনও সেই আহরণ পর্ব চলেছে৷''

পরিবর্তিত বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ এবং সুগঠিত করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে এক দশক আগে ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন এই গুণী লেখক, সাংবাদিক৷

এআই/জেডএইচ