ক্ষুদ্র সেট তৈরি করেন বার্লিনের কারিগর
২৩ ডিসেম্বর ২০২১চলচ্চিত্র পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসন বিংশ শতাব্দীর এক সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় দফতর তুলে ধরেছেন৷ তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘দ্য ফ্রেঞ্চ ডিসপ্যাচ' এক কাল্পনিক মার্কিন সংবাদপত্রের ফরাসি শাখার কাজকর্ম ফুটিয়ে তুলেছে৷ বার্লিনে সিমন ভাইসে-র ওয়ার্কশপে চলচ্চিত্রের সেটের অনেক উপকরণ সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে মজার কথা, তিনি ফিল্মের সব সেটেরই ক্ষুদ্র মডেল সৃষ্টি করেছেন৷ চলচ্চিত্রটি দেখলে অবশ্য সেটা টের পাবার জো নেই৷ সিমন বলেন, ‘‘ষাটের দশকের এমন প্রিন্টিং মেশিনের খোঁজ করে দেখুন, এমন কিছু পাবেন কিনা৷ খাঁটি যন্ত্র পেলেও অনেক খুঁত চোখে পড়বে৷ তবে তাতে কিছু এসে যায় না৷''
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে অঁগুলেম শহরে শুটিং হয়েছে৷ কিন্তু সিমনের তৈরি সেটই শহরটিকে যাটের দশকের ফ্রান্সের পরিবেশে রূপান্তরিত করছে৷ তিনি জানান, ‘‘অঁগুলেম শহরে একটি ভবনে শুটিংয়ের সময়ে একটি মাত্র অংশে ছাদ বসানোর অনুমতি পাওয়া গেছে৷ নিজস্ব এক জগত সৃষ্টি করাই ছিল উদ্দেশ্য৷ শুটিংয়ের জায়গায় যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলে না৷ নিজস্ব শিল্পকীর্তি গড়ে তোলা জরুরি৷''
প্রপ মেকার হিসেবে সিমন সেটের নিখুঁত ক্ষুদ্র সংস্করণ সৃষ্টি করতে ভালোবাসেন৷ কখনো প্রতিভাধর অথচ অপরাধপ্রবণ এক চিত্রশিল্পীর কার্যকলাপ, কখনো বা ফ্রান্সের ছাত্র বিদ্রোহের সময় প্রেমকাহিনির দৃশ্য জীবন্ত করে তোলেন তিনি৷ চলচ্চিত্রে ‘দ্য ফ্রেঞ্চ ডিসপ্যাচ' সংবাদপত্রের সেরা প্রতিবেদনগুলি তুলে ধরা হয়েছে৷ সিমন ভাইসে ও মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক নিবিড় সহযোগিতার মাধ্যমে সেই অসাধ্যসাধন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছবির মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করি৷ তথাকথিত ‘অ্যানিমেটেড স্টোরিবোর্ড' সেই কাজে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে৷ গোটা চলচ্চিত্রের প্রতিটি ফ্রেম আঁকা হয়েছে এবং অ্যানিমেট করা হয়েছে৷ আমি দুই-তিন বার সেটা দেখেছি৷ ওয়েস অ্যান্ডারসনের কাছে সবাইকে নিয়ে সেই আঁকা ছবি ভালো করে দেখা ছিল অত্যন্ত জরুরি৷ আমরা কখনো কিছুটা নিজেদের খুঁটিনাটি সৃষ্টি তাতে অন্তর্গত করেছি বটে, কিন্তু আমাদের প্রতি তাঁর বিশাল আস্থা সত্যি বিস্ময়কর৷''
সিমনের তৈরি মডেল অ্যান্ডার্সনের একাধিক চলচ্চিত্রের নান্দনিকতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ যেমন ‘আইল অফ ডগ' চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট৷ ‘গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল'-এর মতো ছবিতে তার তৈরি মডেল অবিকল আসল ভবনের মতো দেখতে৷ সেই চলচ্চিত্রে ওয়েস অ্যান্ডার্সন এমনকি নিসর্গের কিছু অংশও মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন৷ ওয়েস বলেন, ‘‘আমি মডেল খুব ভালোবাসি৷ এর মধ্যে এক ধরনের জাদু কাজ করে৷ মডেল বলেই আমি কাজ করছি৷ দেখলেই বোঝা যায় কোনটা আসলে মডেল৷ কাউকেই বোকা বানানো হচ্ছে না৷ চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সঙ্গে আমি এর সঙ্গতি খুঁজে পাই৷''
১৯৮৮ সালে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সিমন ভাইসের কর্মজীবন শুরু হয়৷ তার প্রথম দিকের মডেলের মধ্যে ছিল তিমির গিলে ফেলা জাহাজ৷ টম টুইকার্সের ‘দ্য পারফিউম' চলচ্চিত্রের জন্যও তিনি ক্ষুদ্র কাচের বোতল সৃষ্টি করেছিলেন৷ কোয়েন্টিন তারান্তিনোর ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস' চলচ্চিত্রের জন্য সিমন একটি সিনেমা হলের মডেল তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে নাটকীয় এক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল৷ খোদ স্টিভেন স্পিলবার্গ তাঁর ‘ব্রিজ অফ স্পাইস' চলচ্চিত্রের জন্য তাঁকে দিয়ে এক বোমারু বিমানের ককপিটের মডেল তৈরি করিয়েছিলেন৷ সিমন ভাইসে মনে করেন, ‘‘ডিজিটাল পদ্ধতিতেও সেই কাজ করা যেত৷ কিন্তু আমার মতে এভাবে করলে গোটা প্রক্রিয়া অনেক প্রাণবন্ত হয়৷ কম্পিউটার অ্যানিমেশনে সবকিছু একেবারে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু খুব কাছ থেকে এই মডেল দেখলে সবকিছু যে আঁকাবাঁকা, তা চোখে পড়বে৷ কিন্তু বাস্তব জীবনেও তো সে রকমই দেখা যায়!''
সে কারণেই এমন জাদু সৃষ্টি হয়৷ নিজের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সিমন ভাইসে নিজস্ব জগত গড়ে তোলেন৷ তাঁর ছোঁয়ায় চলচ্চিত্রে আবেগ ও অ্যাকশনের আবহ সৃষ্টি হচ্ছে৷
গেয়ারহার্ড সনলাইটনার/এসবি