1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘চলচিত্রে আপত্তিকর দৃশ্য থাকলে পুলিশ মামলা করবে কেন?’’

২৬ ডিসেম্বর ২০২০

নায়ক শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব এলএলবি' চলচ্চিত্রের একটি অংশের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলায় ছবির পরিচালক ও একজন অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এই খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা, সমালোচনা৷

https://p.dw.com/p/3nElh
নায়ক শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব এলএলবি' চলচ্চিত্রের একটি অংশের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলায় ছবির পরিচালক ও একজন অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এই খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা, সমালোচনা৷
‘নবাব এলএলবি' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ক শাকিব খান৷ (ফাইল ছবি)ছবি: Sazzad Hossain

সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘নবাব এলএলবি' নামে একটি চলচ্চিত্র৷ সেখানে অভিনয় করেছেন ঢালিউড তারকা শাকিব খানও৷ চলচ্চিত্রটিতে পুলিশের ভূমিকাকে ‘হেয় করে উপস্থাপনের' অভিযোগ এনে মামলা করেছে পুলিশ৷ পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা এই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ৷ শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়৷ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে৷ গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়৷ সেখান থেকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়৷''

একই মামলায় অভিনেত্রী স্পর্শিয়াকেও আসামি করা হয়েছে৷ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা৷

কী দেখানো হয়েছে চলচ্চিত্রে

প্রশ্ন উঠেছে চলচ্চিত্রটিতে কী এমন দেখানো হয়েছে যে পর্নোগ্রাফি আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং দ্রুত গ্রেপ্তার করা হল৷ বিডিনিউজ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘‘এই নির্মাতা ও অভিনেতার বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ‘নবাব এলএলবি' নামের ওই চলচ্চিত্রে ধর্ষণের শিকার এক নারী বিচারের আশায় থানায় গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা (অভিনেতা শাহীন মৃধা) তাকে (ভিকটিম) অরুচিকর, বিকৃত প্রশ্ন করেন, যাতে পুলিশকে অত্যন্ত খাটো করে দেখানো হয়েছে৷ এতে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে৷''

চলচ্চিত্রে পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাহীন মৃধা ও ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্রে ছিলেন অর্চিতা স্পর্শিয়া৷

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

চলচ্চিত্র অনুরাগী, বিশ্লেষক ও সাংবাদিকসহ অনেকেই এই ঘটনায় নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ অনেকেই বিদেশি চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে একে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসহিষ্ণু আচরণ হিসেবে দেখছেন৷ সাংবাদিক আমিন আল রশীদ লিখেছেন, ‘‘এইসব পুলিশ ও বিচারসংশ্লিষ্টরা জীবনেও স্টার ওয়ার্ল্ডের জনপ্রিয় শো ‘জিমি কিমেল লাইভ' দেখেননি৷ দেখলে জানতেন, শুধু পুলিশ নয়, খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে লাইভ অনুষ্ঠানে গালাগাল করলেও তা নিয়ে মামলা হয় না বা কাউকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয় না৷'' তিনি মনে করেন শুধু ভারতের বাংলা ও হিন্দি সিনেমায়ও পুলিশকে নিয়ে যেসব রসিকতা ও গালাগাল করা হয়, তা নিয়ে মামলা হলে বছরে জনাবিশেক পরিচালককে জেলে যেতে হতো৷

সিরাজুল হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘চলচিত্রে আপত্তিকর দৃশ্য থাকলে পুলিশ মামলা করবে কেন? সেন্সর বোর্ড আছে কি জন্য৷ পুলিশের পেছনে কাপড় নাই মাথায় টুপি৷ এটাই প্রমাণ যে চলচিত্রে যা দেখানো হয়েছে সেটা সত্য বটে তা না হলে এত গায়ে লাগে কেন?''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এবং চলচ্চিত্র সমালোচক ড. ফাহমিদুল হক তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী-কলাকুশলী সমিতি কি একটিও বিবৃতি দেবে, তাদের মুক্তির জন্য?’’ অবশ্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও পরিচালকদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোন বিবৃতি আসেনি৷ ফাহমিদুল হক তার আরেক স্ট্যাটাসে পুরনো বাংলা চলচ্চিত্রে বহুল ব্যবহৃত সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, ‘‘সেই ভালো ছিল! পুলিশ শেষ দৃশ্যে এসে বলতো, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’৷ খাকি-পরা রোগাপটকা দেখতে ‘ঠোলা'দের আসলে তেমন কোনো ক্ষমতাই ছিল না৷ আজ তাদের অনেক ক্ষমতা৷ চেহারায় জেল্লা, পোশাকে রঙ৷ তাদের কাছে প্রতিশ্রুতিশীল সরকারকে ধরে রাখে তারা৷’’

চলচ্চিত্র আন্দোলনকর্মী ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন মনে করেন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণে যে স্বাধীনতা নেই এই ঘটনা তারই একটি উদাহরণ৷ তার মতে, ‘‘চলচ্চিত্রের গল্পে কোনো পেশাজীবীর খারাপ আচরণের অর্থ এই নয় যে ওই পেশাজীবীদের পুরো সমাজই খারাপ... গল্পবলার ক্ষেত্রে এই টাইপের ‘লাল ফিতা' বেঁধে দিতে থাকলে বাংলাদেশে সত্যিকারের চলচ্চিত্র আর কখনও হবে না...''

উল্লেখ্য নাটক-সিনেমায় পুলিশের চরিত্র দেখাতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে, ২০১৫ সালের এপ্রিলে এমন একটি নির্দেশনা দেয়া হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির পক্ষ থেকে৷ নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়ে তখন চিঠি দেয়া হয় বলেও খবর বের হয় গণমাধ্যমে৷

সংকলনঃ ফয়সাল শোভন

সম্পাদনাঃ যুবায়ের আহমেদ

অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান