চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলীর দূষণ ও দখলদারি
অসাধু কিছু মানুষের কারণে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী আজ দখল ও দূষণের কবলে৷ বিভিন্ন সময় সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও আজও স্থায়ী কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি৷
অপরূপ কর্ণফুলী
শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় কালুরঘাট ব্রিজে দাঁড়ালে কর্ণফুলীর এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য চোখে পড়ে৷ ছোট বড় অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারে জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়৷
নদী দূষণে বাণিজ্যিক জাহাজ
কর্ণফুলীর মাঝ নদীতে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে অসংখ্য বিশালাকার বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করে অপেক্ষা করে৷ এসব জাহাজের তেল, বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য ইত্যাদি প্রতিনিয়ত কর্ণফুলীকে দুষিত করছে৷
ফিশারি ঘাটের দূষণ
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী তীরে গড়ে উঠা ফিশারি ঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা৷ দিনে দুই বার জোয়ার ভাটা সত্ত্বেও এ মাছের আড়তের দূষণ কর্ণফুলীকে প্রতিনিয়ত ভোগাচ্ছে৷
দূষিত পানিতেই চলছে দৈনন্দিন কাজ
কর্ণফুলীর তীর ঘুরে দেখা গেল দূষিত এ পানি দিয়েই চলছে গোসল, কাপড় ধোয়ার মতো নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ৷ স্থানীয় মানুষের সাথে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, বিকল্প না থাকায় এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা৷
সিংহভাগ বর্জ্যই অপচনশীল
এস আলম ঘাট, অভয়মিত্র ঘাটসহ একাধিক ঘাট ঘুরে দেখা গেল পলিথিনের বর্জ্যের আধিক্য৷ পলিথিনজাত পণ্যগুলো অপচনশীল হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে সেগুলো নদীতীরের দূষণ বাড়িয়েই চলেছে৷
নদী নয়, যেন ভাগাড়
ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেল একটি মৃত গরু সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে৷ স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এভাবে প্রায় প্রতিদিনই মৃত পশুগুলোকে সরাসরি এভাবে নদীতীরে ফেলে রাখা হয়৷ এতে যেমন দূর্গন্ধ ছড়ায়, তেমনি নদী দূষণ ও হয়৷
দূষণমুক্ত নয় খালগুলোও
কর্ণফুলীর নদীর একটি শাখা চাকতাই খাল৷ ফিশারি ঘাটের পাশেই এ খাল সরাসরি যুক্ত হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে৷ সরেজমিনে দেখা গেল, খালের পানি কুচকুচে কালো এবং সেখানে বিভিন্ন বর্জ্য ভেসে বেড়াচ্ছে৷ কিছুদিন আগে খালটি দখলমুক্ত করা হলেও করা যায়নি দূষণমুক্ত৷
নদীতীর দখল, কমেছে নদীর নাব্যতা
স্থানীয় একজন সংবাদকর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেল, ফিশারি ঘাটের পুরো এলাকাই দখলকৃত৷ আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও এখানে নদীর তীর ছিল৷ কিন্তু এখন প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গাজুড়ে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে৷
অবৈধ বালু উত্তোলন
স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় কর্ণফুলীতে সারাবছর ধরে বালু উত্তোলন করা হয়৷ অপরিকল্পিত এ ধরনের মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে নদীভাঙনের মুখে পড়ছেন তীরের বাসিন্দারা৷
প্রভাবশালীদের ভয়ে ভীত সবাই
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কর্ণফুলী নতুন সেতুর কাছে যে ট্রাক স্ট্যান্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ দখলকৃত জায়গা৷ সম্প্রতি নদীতীরে মাটি ভরাট করে এটি তৈরি করা হয়েছে৷ তবে কারা এটি করেছে জানতে চাইলে কেউই তা বলতে রাজি হননি৷
নদীতে শিল্পবর্জ্য ফেলা হয় রাতে
প্রশাসনের তৎপরতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নদীতে শিল্পের বর্জ্য ফেলার পরিমাণ অনেকটা হ্রাস পেলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি৷ দিনে বর্জ্য ফেলানো সেভাবে চোখে না না পড়লেও অনেকে রাতের আঁধারে গোপন পাইপের মাধ্যমে নদীতে শিল্পবর্জ্য ফেলছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা৷