1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাতে তৈরি ওয়ালপেপার

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দেওয়ালে ওয়ালপেপার ঘরের চরিত্রই বদলে দিতে পারে৷ একটি ব্রিটিশ সংস্থা গোটা বিশ্বে তাদের উচ্চ মানের ওয়ালপেপার সরবরাহ করে চলছে৷ হাতে আঁকা অথবা ডিজিটালি প্রিন্টেড সৃষ্টিকর্মের কদর বেড়েই চলেছে৷

https://p.dw.com/p/2tKaL
ছবি: DW

তুলির প্রথম টান থেকে শেষ পর্যন্ত যত্নের ছোঁয়া৷ ডে গোরনেই সংস্থায় ওয়ালপেপার অপরূপ সৃষ্টিকর্ম হয়ে ওঠে৷ প্রত্যেকটি রোল হাতে আঁকা৷ ১৯৮৬ সাল থেকে লন্ডনের এই পারিবারিক সংস্থা গোটা বিশ্বে সাফল্যের মুখ দেখছে৷ সংস্থার প্রধান ডিজাইনার জেমা কেভ বলেন, ‘‘চীনের অঙ্কন ঐতিহ্য অনুযায়ী হাতে দু'টি ব্রাশ রাখতে হয়৷ একটি ব্রাশ পিগমেন্ট বা রঙ্গক তুলে নেয়, অন্যটি দ্রুত সেই পিগমেন্ট ওয়ালপেপারের উপর ছড়িয়ে দেয়৷ সেই পদ্ধতির কারণে ঘন থেকে পাতলা রংয়ের এই অসাধারণ পরিবর্তন দেখা যায়৷’’

খুঁটিনাটি নক্সা, নানা রংয়ের সম্ভার৷ ডে গোরনেই সংস্থার বেশিরভাগ সৃষ্টি আসে চীনের শাংহাই শহরের কাছে এক স্টুডিও থেকে৷ রেশম অথবা সোনা লাগানো কাগজের উপর রং করা হয়৷ ঘরে এই সংস্থার ওয়ালপেপার লাগাতে ক্রেতারা ৫ থেকে ২০ হাজার ইউরো ব্যয় করেন৷ কোম্পানির প্রধান হানা সেসিল গোরনেই বলেন, ‘‘হাতে তৈরি কিছু দেখলে খুঁতগুলিও চোখে পড়ে৷ সেটাই তার আসল সৌন্দর্য৷ তুলির টানের চিহ্ন দেখা যায়৷ মানুষের হাতেই যে তৈরি, সেটা স্পষ্ট দেখা যায়৷ ঘরে ঢুকলে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে শিল্পীর ভাবাবেগও অনুভব করা যায়৷’’

সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ক্লোদ সেসিল গোরনেই-এর টাউনহাউসের ভিতরটাও দেখার মতো৷ শিশু বয়সেই তিনি তাঁর বাবা-মার সংগ্রহে থাকা হাতে আঁকা ওয়ালপেপার দেখতে ভালবাসতেন৷ পরে নিজের বাড়ির জন্য সে রকম ওয়ালপেপার নির্মাতা খুঁজে পাননি৷ তখনই নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আইডিয়া মাথায় আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাকে আসলে ঠিক ওয়ালপেপার বলা ঠিক হবে না৷ বরং ট্যাপেস্ট্রি বা মিউরাল বা সে রকম কিছু বলা উচিত৷ যেখানে বাইরে বের হলেই মোটর গাড়ি, চিমনি, ধুলা, বালি, নোংরা ও দূষণ দেখা যায়, সেখানে বাড়ির ভিতর সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে এই আবরণ৷ সত্যি খুবই সুন্দর৷’’

হাতে তৈরি এমন বস্তু কেনার সামর্থ্য সবার না থাকলেও ইন্টিরিয়র ডিজাইনারদের কাছে ওয়ালপেপার অত্যন্ত জরুরি উপকরণ হয়ে উঠেছে৷ যেমন মাউরিৎসিও পেলিৎসোনি মনে করেন, ‘‘ওয়ালপেপার দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠছে৷ আরও বেশি গ্রাহক ওয়ালপেপার লাগাতে চাইছেন৷’’

এর মধ্যে অসংখ্য সংস্থা নানা ডিজাইন বাজারে এনেছে৷ প্রায়ই ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সেগুলি প্রিন্ট করা হয়৷ ফলে দাম মোটামুটি আয়ত্তের মধ্যেই থাকে৷ ওয়ালপেপারের ডিজাইনের ক্ষেত্রেও কিছু প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ যেমন ফুলের ডিজাইন ফ্যাশন ব়্যাম্প থেকে বাড়িঘরেও স্থান পাচ্ছে৷ মাউরিৎসিও পেলিৎসোনি বলেন, ‘‘গত বছর সবুজ গাছপালার বড় প্রবণতা দেখা গেছে৷ ওয়ালপেপার ছিল লতাপাতায় ভরা৷ নতুন বছরে আলট্রাভায়োলেট বা অতি-বেগুনি রং প্রাধান্য পাচ্ছে৷ প্রবণতা সেদিকেই যাচ্ছে৷ এটি খুবই সুন্দর ও শক্তিশালী রং৷’’

গোরনেই কোম্পানির কাছে প্রবণতা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ ক্রেতাদের নির্দিষ্ট চাহিদাকেই এই সংস্থা বেশি গুরুত্ব দেয়৷ বছরের শেষে লন্ডন, প্যারিস, নিউ ইয়র্ক, সান ফ্রানসিস্কো, মস্কো, শাংহাই ও বেইজিং শহরে কোম্পানির শোরুমে চরম ব্যস্ততার ছাপ দেখা যায়৷ সংস্থার প্রধান কর্ণধার হানা সেসিল গোরনেই বলেন, ‘‘নতুন বছরে মানুষ বেশ যোশ অনুভব করছেন৷ তারা একেবারে নতুন আইডিয়া নিয়ে তাঁরা আমাদের কাছে এসেছেন৷ বলেছেন, গতানুগতিক নক্সা ছেড়ে তাঁরা নতুন বছরে বেশ চমকপ্রদ কিছু চাইছেন৷’’

সংস্থা নিয়মিত বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কাজ করে৷ যেমন ২০১৭ সালে ব্রিটিশ সুপারমডেল কেট মস ‘অ্যানিমোনস অফ লাইট’ নামের সংগ্রহ তুলে ধরেন৷ প্রত্যেক রোলের দাম ১,৩৫০ ইউরো৷ কিন্তু বাসা বদল করলে দামি ওয়ালপেপারের কী দশা হয়? হানা সেসিল গোরনেই বলেন, ‘‘রেশমের বুনন অত্যন্ত শক্ত৷ ফলে নীচ থেকে সিল্ক ছাড়িয়ে নেওয়া যায়৷ আমাদের কাছে সেটা পাঠালে আমরা তার পেছনে নতুন কাগজ বসাতে পারি৷ নতুন বাড়িতেও অনায়াসে সেই ওয়ালপেপার লাগাতে পারেন৷’’

তবে উচ্চ মানের ওয়ালপেপার অত সহজে বদলানো যায় না৷ হাতে আঁকা ওয়ালপেপারের জন্য প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়৷

মাল্টে রোভেয়ার-কালমান/এসবি