ঘরে ইন্টারনেট নেই, তবুও চলছে লেখাপড়া
করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে অনলাইন ক্লাস৷ কিন্তু ফিলিপাইনসের কিছু জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগের অবস্থা এমন যে লেখাপড়ার জন্য একরকম যুদ্ধেই নামতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷ দেখুন ছবিঘরে...
ফিলিপাইনসের পরিস্থিতি
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশোনার পরিস্থিতি কেড়ে নিয়েছে৷ অনলাইনে পড়াশোনার দিকে সবাই ঝুঁকলেও বিশ্বের বহু জায়গায় পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পরিষেবা নেই৷ ফলে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত অসংখ্য শিক্ষার্থী৷ ফিলিপাইনসের অবস্থাও অনেকটা এমনই৷
ছাদে সংযোগ
দশ বছর বয়েসি ঝায় আর চালমার বাসার ভেতরে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না৷ তাই করোনাকালে পঞ্চম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থীকে ছাদে উঠে চালের ওপর বসে বসেই করতে হয় অনলাইন ক্লাস৷ তার মা জানিয়েছেন, ‘‘মাঝে মাঝে আমরা সিমকার্ড পরিবর্তন করি যাতে আরেকটু ভালো সংযোগ পাওয়া যায়৷ কিন্তু সবসময় তা করার মতো টাকা হাতে থাকে না৷’’
সরকারের সাহায্য
ফিলিপাইনসের সরকার অন্যান্য দেশের মতোই শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতিতে ট্যাব বা মোবাইল ফোন দিয়েছে, যার সাহায্যে তারা অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারে৷ কথা ছিল জানুয়ারি মাসেই স্কুল খুলবে৷ কিন্তু ফিলিপাইনসে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত৷ ফলে, আরো কিছু দিন অনলাইনেই চলবে পড়াশোনা৷
পরিসংখ্যান যা বলছে
অনলাইন পড়াশোনায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলি সাফল্য পেলেও ফিলিপাইনসে বাস্তবতা ভিন্ন৷ দশ কোটি আট লাখ মানুষের দেশটিতে মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগের হাতেই, অর্থাৎ মাত্র দুই কোটি মানুষের কাছে রয়েছে ইন্টারনেটের সুবিধা৷ এছাড়া আরো অনেক পরিবারেরই নেই মোবাইল কেনার সামর্থ্য৷ অন্যদিকে ইন্টারনেট না থাকায় স্কুলছুট হয়েছে সেদেশের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ, জানাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷
পরিবারের ভূমিকা
এগারো বছরের লাভলি তার পরিবারের সাথে ম্যানিলার একটি কবরস্থানেই থাকে৷ মুরগি বেচে সংসার চালান তার বাবা-মা৷ বাসার মানুষের কাছ থেকে সে পড়াশোনায় সাহায্য না পেলেও তাদের পাশে, কবরের ওপরে বসেই, পড়ার কাজ শেষ করে৷ লাভলির মা জানেন, এই পরিস্থিতি পড়াশোনার জন্য অনুকূল নয়৷ তবে পরিস্তিতি মেনে নিয়েই তাকে বলতেহয়, ‘‘ব্যবসা না দেখলে ওকে খাওয়াবো কী? ও পড়াশোনা করে চাকরি পেলে তবেই আমরা এখান থেকে বেরোতে পারবো৷’’
পড়ার জন্য পাহাড় চড়া
কলেজপড়ুয়া মার্ক ফিলিপাইনসের বাতাঙ্গাস অঞ্চলের বাসিন্দা৷ ইন্টারনেট সংযোগের জন্য তাকে কখনো জঙ্গলের ভেতর, কখনো পাহাড়ে চড়তে হয়৷ পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেটের খরচ জোগাতে পার্ট-টাইম কাজও করে সে৷
তবুও নাছোড়বান্দা যারা
হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অনড় মার্ক৷ তার বক্তব্য, ‘‘আমি জানি, আমরা ধনী নই, তাই পড়াশোনা শেষ করেই আমি বাবা-মায়ের ঋণ শোধ করতে চাই৷ হাল না ছেড়ে, ধৈর্যের সাথে এই কঠিন সময়েও আমি পড়ায় মন দিতে চাই৷ উন্নতি করতে চাই৷’’