গ্লাসগোর পরিবহন মিউজিয়াম স্থানীয় মানুষকেও টানে
১৩ মে ২০২২২০১১ সালে স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহরে ক্লাইড নদীর তীরে সাবেক শিপইয়ার্ডের জমিতে নতুন পরিবহণ মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে৷ স্টুয়ার্ট টমসন গ্লাসগো শহরের সেই রিভারসাইড মিউজিয়ামের ম্যানেজার৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মিউজিয়াম গ্লাসগোর সব ইতিহাস তুলে ধরছে৷ পরিবহণ, পাতালপথ, জাহাজ নির্মাণের ইতিহাস এখানে আছে৷’’
ঢেউয়ের মতো দেখতে ভবনটির ডিজাইন করেছেন ব্রিটিশ-ইরাকি তারকা স্থপতি জাহা হাদিদ৷ ২০১৬ সালে তার মৃত্যু হয়৷ তার অভিনব অবদান সম্পর্কে টমসন বলেন, ‘‘মিউজিয়ামে এক হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন হাজারেরও বেশি বস্তু প্রদর্শন করার জন্য বাড়তি জায়গা সৃষ্টি করা ছিল জাহার অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷ সে কারণে জাহা এই ‘ওয়াল অফ কার্স’ ডিজাইন করেছেন৷ ফলে মিউজিয়ামের ভেতর গাদা করে যত বেশি সম্ভব গাড়ি রাখা যায়৷’’
সবচেয়ে পুরানো গাড়িগুলি ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি৷ এমন মূল্যবান সম্পদ সুরক্ষার জন্য কাচের উপর সূর্যের তাপ নিরোধক প্রলেপ লাগানো হয়েছে৷ এছাড়া সব সময়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷ স্টুয়ার্ট টমসন জানালেন, ‘‘জাহা হাদিদের কাছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল এমন এক ‘সেল্ফ সাপোর্টেড’ ভবন নির্মণ করা, যেটির কোনো স্তম্ভ নেই৷ যেমনটা মিউজিয়ামে দেখতে পাচ্ছেন৷ বিশাল বস্তু নড়াচড়া করার জন্য আমাদের মনে সেই আইডিয়া এসেছিল৷’’
রিভারসাইড মিউজিয়ামে বেশ কয়েকটি দোতলা বাস ও ট্রামও রয়েছে৷ বিশাল উঁচু ভবনটিতে এমনকি রেলের বাষ্পচালিত ইঞ্জিনও রয়েছে৷ স্টুয়ার্ট জানালেন, ‘‘২০১১ সালে মিউজিয়াম খোলার পর থেকে বছরে ১৩ লাখ দর্শক এসেছেন৷ তাঁরা আমাদের বলেন, যে এটাই মিউজিয়ামের সবচেয়ে জনপ্রিয় বস্তু৷ এটা ভিক্টোরিয়ান আমলের সড়ক৷ আমরা গ্লাসগোর দোকানপাটের পুরানো ছবি দেখে সে আমলের একটি সড়ক সৃষ্টি করেছি৷ ভবনটি উদ্বোধনের পর কিছু মানুষের মনে সংশয় ছিল৷ কারণ পুরানো ভবনটির জন্য মানুষের মনে অনেক ভালোবাসা ছিল৷ কিন্তু নতুন ভবনে ঢুকে সবকিছু দেখে, সেগুলির সংখ্যা ও নতুন সংযোজন দেখে মানুষের খুব পছন্দ হলো৷ তারপর আচমকা দর্শক সংখ্যা বেড়ে গেল৷’’
২০১৩ সালে রিভারসাইড মিউজিয়াম সরকারি সম্মানও পেয়েছে৷ ইউরোপীয় মিউজিয়াম ফোরাম ‘বছরের সেরা মিউজিয়াম’ হিসেবে রিভারসাইডকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ স্টুয়ার্ট টমসন মনে করেন, ‘‘রিভারসাইড মিউজিয়াম গ্লাসগোয় অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ অনেক দর্শক এখানে আসেন৷ আমি রিভারসাইড মিউজিয়াম নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত৷ মানুষ বার বার ফিরে আসেন বলে আমি খুশি৷’’
খাড়া এই ভবনটি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতির ঝড় সামলাতে পারে৷ প্রায় ২৪,০০০ দস্তার প্যানেলও ভবনটিকে বাড়তি সুরক্ষা দেয়৷ নজর কাড়া এই ভবনটি দর্শকদের খুবই প্রিয়৷
স্থাপত্যের এই মাস্টারপিস দর্শকদের শহরের পরিবহণের ইতিহাসের জগতে পৌঁছে দেয়৷ সত্যি গ্লাসগোর রিভারসাইড মিউজিয়ামে ঢুঁ মারা অবশ্যই সার্থক৷
নাদিন ওসিনস্কি/এসবি