1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্লাসগো সম্মেলনের কাছে প্রান্তজনের প্রশ্ন

পাভেল পার্থ
৫ নভেম্বর ২০২১

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তজার্তিক সম্মেলনের ২৬ তম আসরটি চলছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে৷ প্রায় ১২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সক্রিয় জলবায়ুকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, অ্যাক্টিভিস্ট যোগ দিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/42cTU
ছবি: Andrew Milligan/picture alliance/empics

জলবায়ু সুরক্ষায় এই বৈশ্বিক দরবার নতুন নয়, এর আগে পঁচিশটি আসর হয়েছে৷ কিন্তু এসব সম্মেলন কিংবা জলবায়ু-রাজনীতি দুনিয়াকে কী উপহার দিতে পেরেছে? বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণের এক জলবায়ু-বিপর্যস্ত গ্রামীণ জীবনে৷ ২১তম আসরে আমরা প্যারিস চুক্তি করেছিলাম, কিন্তু দুনিয়ার ধনী দেশগুলো সেই চুক্তি মানেনি৷ কার্বণ নি:সরণ কমেনি৷ বন্ধ হয়নি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার৷ কথা দিয়েও জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য দায়ী দেশগুলো বৈশ্বিক জলবায়ু-তহবিল গড়ে তুলেনি৷ বেড়েছে লাগামহীন ভোগবিলাসিতা আর বৈষম্য৷ থামেনি অস্ত্রউৎপাদন কিংবা যুদ্ধ-সন্ত্রাস৷ প্রতিদিন উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ, ভাঙছে বাস্তুতন্ত্র, চুরমার হচ্ছে প্রকৃতির ব্যাকরণ৷ ঘূর্ণিঝড়, খরা, লবণাক্ততা, বন্যা, ভাঙন, জলাবদ্ধতা, বালাইয়ের উপদ্রব, তীব্র তাপদাহ, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত সবই বাড়ছে প্রতিদিন৷ মানুষ কিংবা ব্যাঙ, বৃক্ষ-গুল্ম কিংবা একটা অণুজীবও আবহাওয়ার এমন উল্টোপাল্টা আচরণ সহ্য করতে পারছে না৷ বলা হয় মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড়, আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ৷ তাই হয়তো আবারো সবাই মাতৃদুনিয়ার সুরক্ষাপ্রশ্নে গ্লাসগোতে যোগ দিয়েছেন৷ জলবায়ু ডিসকোর্সে রাষ্ট্রপক্ষসমূহের এমন আলাপ বাহাস যতোটা না প্রতিবেশকেন্দ্রিক তারচে বেশি কাঠামোগতভাবে রাজনৈতিক৷ এই রাজনীতি আবার নয়াউদারবাদী ব্যবস্থার করপোরেট বাণিজ্যের মোড়কে ঢাকা৷ তাই হয়তো এবারের সম্মেলনে চীন ও রাশিয়া যোগ দেয়নি৷ অথচ রাষ্ট্র হিসেবে চীন একাই পৃথিবীতে সবচে বেশি কার্বন নির্গমণ করে৷ বিশ্বায়িত ক্ষমতার দুর্ধর্ষ মেরূকরণ কিংবা রাজনীতির জাঁদরেল বাহাদুরি যখন জলবায়ুর মুমূর্ষ ধমনী চেপে ধরে তখন লবনপানিতে তলিয়ে যাওয়া কিংবা খরায় দগ্ধ বাংলাদেশের কোনো এক ভূমিহীন কৃষকের এসব বৈশ্বিক দরবারের কাছে কী চাওয়ার থাকতে পারে? অনেকে বলবেন জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ এক প্রশ্নহীন বৈষম্যের দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে কার কাছে আমরা এই ন্যায্যতা দাবি করছি, কীভাবে করছি? এটি তো সেই দুনিয়া যেখানে ‘অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মদিগ্লিয়ানি’ ব্যান্ডের ৭৫০ মি.লি এক বোতল পানি বিক্রি হয় বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পঞ্চাশ লাখে৷ আর অন্যদিকে দেশের উপকূল কী বরেন্দ্রভূমি থাকে দিনের পর দিন পিপাসার্ত৷ এসব পানি কারা ব্যবহার করে, কারা এই দুনিয়া এভাবে টিকিয়ে রাখতে চায়? গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, দুনিয়ার অন্যতম ধনী মুকেশ আম্বানীর পরিবার এই পানি ব্যবহার করে৷ অন্যদিকে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের শেফালী বিবি বা অঞ্জনা মন্ডলকে প্রতিদিন তিন কলস পানির জন্য লবনঘেরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হয় কয়েক মাইল৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়লে প্রতাপনগরের মতো সমুদ্র উপকূলের নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে যাবে৷ শেফালী বিবি কিংবা অঞ্জনা মন্ডলরা তাহলে যাবেন কোথায়? তাদের কী দোষ? তারা তো কোনোদিন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করেনি, লাখ টাকার পানি খাননি, কোনো ভোগ বিলাসিতা নেই জীবনে৷ বছর বছর সামলাতে হচ্ছে ঝড় কিংবা লবনের জ্বালা৷ অঞ্জনা মন্ডল কিংবা শেফালী বিবির চোখে কী কখনো আয়োজিত হয় এইসব বিশ্ব দরবার? জলবায়ু-দুর্গত মানুষের আহাজারি কী পৌঁছে এসব দুর্গম বাহারি আয়োজনে? এসব সম্মেলন কী এ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দুনিয়ার ধনী দেশের মানুষের ভোগবিলাসিতা আর বৈষম্যের জীবনকে প্রশ্ন করতে পেরেছে? লাগাম টানতে পেরেছে দু:সহ দূষণ, দখল ও লুটতরাজের?

গরিব, দিনমজুরদের টাকা নিয়ে বাঁধ সংস্কার

জাগে প্রাণ, জাগে আলো

প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের ২১ তম আসরে দেখেছিলাম ফ্রান্স দু'পাশে দু'টি কৃতজ্ঞতার বিজ্ঞাপন টানিয়েছে৷ বিশ্বের ৬৩টি বহুজাতিক কোম্পানিকে জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছিল৷ লরেল, ফিলিপস, স্যানোফি, বিক, পুমা, অরেঞ্জ, নেক্সটারের মতো কপোর্রেটদের লোগোগুলি ডানে-বায়ে রেখেই বিশ্ব জলবায়ু দরবারে প্রবেশ করতে হয়েছিল৷  যদিও বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের রাসায়নিক দূষণে পৃথিবীর মাটি, জল ও বাতাস আজ মুমূর্ষু৷ অরণ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ নি:শেষ৷ আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণের ঐতিহাসিক জীবনধারা লন্ডভন্ড৷ বহুজাতিক কোম্পানির চোখরাঙানিকে সামলেও ২১তম আসরে সবাই মিলে প্যাসি চুক্তির মতো এক আশা জাগানিয়া দলিল তৈরি করেছিল৷ এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে ২৬ তম আসরের দিকে৷ ইতোমধ্যেই প্রায় ২০০টি দেশ অরণ্য সুরক্ষার প্রতিজ্ঞা করেছে গ্লাসগোতে৷ ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০ এর চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অ্যা বাংলাদেশ ভিশন ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রসপারিটি' শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেছেন গ্লাসগোতে৷ এনডিসি, জলবায়ু তহবিল, অভিযোজন, জলবায়ু-উদ্বাস্তু এবং কার্বন নির্গমণ হ্রাস বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও বিশ্লেষণ গুরুত্ববহ৷ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সুরক্ষায় যেসব প্রস্তাব রেখেছে তা কী ধনী দেশ গুলো মানবে? ধনী দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো? যারা প্রশ্নহীন কার্বণ-পদচ্ছাপে চুরমার করে দিচ্ছে পৃথিবীর অস্তিত্ব৷ ২০১৭ সনে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়েছিল পৃথিবীর ১০০টি বহুজাতিক কোম্পানির তালিকা, যাদের মাধ্যমে পৃথিবীর মোট ৭১ ভাগ কার্বন নির্গমণ হয়৷ দেখা যায় এর ভেতর কেবল ‘চায়না কোল' নির্গমণ করে ১৪.৩২ ভাগ কার্বণ৷ জলবায়ু সম্মেলনগুলো কীভাবে এইসব কোম্পানি ও রাষ্ট্রপক্ষকে দায়বদ্ধ করবে? এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা কীভাবে আরো জোরালো ও সক্রিয় হতে পারে? জলবায়ু বিপর্যয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা নেই বললেই চলে, বিশ্বব্যাপী আমরা কার্বন নির্গমণ করি ০.৪৭ ভাগ৷ অথচ বাংলাদেশের জনগণ জলবায়ু সুরক্ষায় মাতৃদুনিয়াকে বাঁচাতে জীবন দিয়ে লড়ছে৷

সাগরের পানি বাড়ছে, ঢাকায় বাড়ছে মানুষ

বাড়ছে তাপ, পুড়ছে জীবন

উষ্ণতা বেড়ে এক দু:সহ যন্ত্রণার দিকে হাঁটছে পৃথিবী৷ অনিয়মিত বৃষ্টিপাত আর খরার প্রাবল্য বাড়ছে৷ রাজশাহীর তানোরের বাধাইড় ইউনিয়নের এক প্রাচীন গ্রাম ঝিনাখোর৷ উচ্চবরেন্দ্রর এই গ্রামখানি চৈত্র মাসের কিছুদিন পাড়ি দিত তীব্র তাপদাহ৷ স্থানীয় আদিবাসীরা বলতেন ‘পইচ্ছ্যা ঝাটি'৷ এলাকার খাঁড়ি ও দীঘিগুলো ছিল পানির উৎস৷ কিন্তু গত ৩০ বছরে এ চিত্র বদলে গেছে৷ ঝিনাখোরে এখন মাটির তলায় পানি নেই৷ বছর বছর বাড়ছে তাপ৷ তাপে পুড়ে ঝলসে গেছে জমিন৷ মানুষ ছাড়ছে গ্রাম, হচ্ছে শহরে নিরুদ্দেশ৷ ঝিনাখোর গ্রামের প্রবীণ কৃষক সুশান্ত মাহাতো (৭০) জানান, ...আমার দাদা-ঠাকুমার কাছেও এমন গরমের কথা শুনিনি, গরমের জ্বালায় ফসল হয় না, মাঠে পানি নাই, মেঘের দিনে মেঘ নাই, আবার যখনতখন এমন মেঘ নামে ক্ষেতকৃষি তখন পানিতে তলায় যায়৷ দেখা গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাঁড়ির ধারে চিরু, কাশ এরকম ঘাস গুলি এখন তেমন জন্মাচ্ছে না৷ এমনকি খরাসহিষ্ণু কাউন, বজরা, চীনা, জোয়ার, গমের তো ফসল গুলোও এখন খুব বেশি চাষ হয় না৷ বরেন্দ্র উপযোগী শংখবতী, ধারিয়াল, হাসিকলমী, মরিচবাটি, ইন্দ্রশাইল, বিন্যাফুল, রাধুনীপাগল এর মতো ধানজাত গুলো সুরক্ষা করতে পারছেন খুব কম কৃষকেরাই৷ কেবল কৃষিকাজ নয়, তাপমাত্রা বাড়ায় প্রভাব পড়েছে বরেন্দ্রর ঐতিহাসিক রেশম ও লাক্ষা চাষেও৷ অবস্থা এমন হয়েছে যে, কেবল চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের কয়েকটি পরিবার ধরে রেখেছেন লাক্ষা চাষ৷

ভাসমান সবজি চাষ, লবণ সহিষ্ণু ধানের ব্যবহার

ঘূর্ণিঝড়  লবণ পানির জ্বালা

১৯৭০ সনে দেশে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয় উপকূল, নিহত হয় কয়েক লাখ প্রাণ৷ ২০০৭ সনের সিডরের পর উপকূলে বছর বছর ঘূর্ণিঝড়ের প্রাবল্য বাড়ছে৷ জোয়ারের উচ্চতা ও ঝড়ের স্থায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে৷ ২০০৯ সনের আইলায় আবারো বিপর্যস্ত হয় উপকূল৷ এরপর মহাসেন, ফণী, বুলবুল, আমফান ও ইয়াসের মতো ঝড় গুলো সামাল দিতে হয়েছে উপকূলবাসীকে৷ প্রতিনিয়ত বাড়ছে লবণাক্ততা, উধাও হয়েছে সুপেয় পানির উৎস, নিশ্চিহ্ন হচ্ছে কৃষিজমি৷ এই পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে বাণিজ্যিক চিংড়ি ও কাঁকড়াঘেরের কারণে৷ যেসব খাদ্যপণ্যের মূল ভোক্তা জাপান ও ইউরোপের ধনী দেশ গুলোই৷ সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের নূর মোহাম্মদ গাজী (৪৭) জন্মেছিলেন উপকূলের এক সচ্ছ্বল কৃষক পরিবারে৷ কিন্তু গত বিশ বছরে তারা লবণ পানির কারণে সব জমি হারিয়েছেন৷ কৃষিকাজ ছেড়ে আজ কৃষক পরিচয় মুছে আজ নিজেকে বিক্রি করেছেন ইটের ভাটায়৷ শ্যামনগরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় এরকম অসংখ্য তরুণ, মধ্যবয়সি কী শিশুদের দেখা যায় গ্রামের পর গ্রাম ফেলে জীবন বাঁচাতে ছুটছে ইটের ভাটায়৷ অথচ এরা সবাই আজীবন সুরক্ষা করে এসেছেন পৃথিবীর সবচে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন৷ দুনিয়ার এক অন্যতম কার্বণ শোষণাগার হিসেবে যা ধনী দেশের নির্গত কার্বন শুষে নিয়ে মাতৃদুনিয়া নির্মল রাখছে৷ নিদারুণভাবে কার্বণ শোষণাগার সুরক্ষাকারী মানুষেরা আজ জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে নিজ জন্মমাটি ছেড়ে শহরে নিরুদ্দেশ হচ্ছেন৷

পাহাড়ি ঢলের এখন আগামাথা নাই’

বাংলাদেশ ভূখন্ডের ছয়ভাগের একভাগে জুড়ে হাওর জলাভূমি৷ এককালে হাওরে জন্মাত টেপী, রাতা, বইয়াখাওড়ি, কাচালত, সমুদ্রফেনার মতো গভীর পানির ধান৷ চৈত্র-বৈশাখে উজানের হিমালয় পাহাড় থেকে নামতো পাহাড়ি ঢল, হয়তো কখনো ভাদ্র মাসে আরেকবার৷ কিন্তু গত ৩০-৩৫ বছর ধরে পাহাড়ে বৃষ্টিপাতের এ ধরণ পাল্টে গেছে৷ বিশ্বের সবচে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল চেরাপুঞ্চির ঠিক ভাটিতেই বাংলাদেশের হাওরের অবস্থান৷ এখন উজানে অনিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সময় অসময়ে ভাটিতে নামছে পাহাড়ি ঢল৷ মেঘালয় পাহাড়ে অপরিকল্পিক খনন, বনউজাড় ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশের ভাটিতে পাহাড়ি ঢলের সাথে আসছে পাহাড়ি বালি, রাসায়নি ও পাথরের কণা৷ বাংলাদেশের হাওর সীমান্তের একরের পর একর কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে৷ কৃষক কী জেলে আজ জীবিকা হারিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে পাথরখনি কি নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে৷ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের রাজাই গ্রামের লক্ষীরানী হাজং (৫০) পাহাড়ি বালিতে কৃষিজমি হারানোর কারণে প্রতিদিন ছোট দুই শিশু নিয়ে পাথরখনিতে কাজে যান৷ জানালেন, ...'আগে বন আছিল পাহাড়ত, ঢল নামলেও আমরা সবকিছু সামলাইতে পারছি, অখন পারি না, অখন পাহাইড়্যা ঢলের কোনো আগামাথা নাই, মেঘের কোনো সময় অসময় নাই, এখন আমরার কষ্ট আরো বেশি বাড়ছে৷'

পাভেল পার্থ, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক ও লেখক
পাভেল পার্থ, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক ও লেখকছবি: Privat

প্রশ্নটি সাধারণকিন্তু নিশ্চুপ বিশ্ব?

জলবায়ু সুরক্ষায় বাংলাদেশসহ সকল জলবায়ু-দুর্গত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর প্রান্তজনের মৌলিক জিজ্ঞাসাখানি খুবই সাধারণ এবং সুপ্রাচীন৷ সেটি হলো, বৈষম্য আর ক্ষমতার পৃথিবী টিকিয়ে রেখে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সম্ভব কীনা? এর উত্তর সম্ভন নয়৷ দরকার এক আমূল পরিবর্তন৷ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, সংঘ, সংগঠন, রাষ্ট্র, দেশ সবাই মিলে দরকার এক সামগ্রিক রূপান্তর৷ নয়াউদারবাদী অস্থির জলবায়ুবিমুখ পণ্যসর্বস্ব জীবনব্যবস্থা দিয়ে কোনোভাবেই কার্বণ নির্গমণ কমিয়ে আনা সম্ভব নয়৷ প্রথমত মানুষকে নিজের অস্তিত্ব এবং এই দুনিয়ার সকল প্রাণ-প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের সাথে তার সম্পর্ক ও অবদানকে বুঝতে হবে৷ মানতে হবে এবং দুনিয়ার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি নতজানু হতে হবে৷ মানুষই বাধ্য করতে পারে পরিবার, সমাজ, সংঘ, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রকে৷ মানুষের শক্তি ও সংহতির কাছে সকল বহুজাতিক বাহদুরিই নি:স্ব৷ এখনো দুনিয়াজুড়ে অযুত কোটি লাখো মানুষই জাগিয়ে রেখেছে দুনিয়ার প্রাণস্পন্দন৷ আসুন আমরা এই তৎপরতাকে আরো জোরালো করি, জলবায়ু সুরক্ষার সংহতিকে জোরদার করি৷ আশা করি গ্লাসগো সম্মেলনে আমরা সত্যিকারের একটা সাড়া পাব যাতে জলবায়ু-দুর্গত প্রান্তজনের টগবগে জীবনজয়ের শক্তি আছে৷