1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রিসে পানির তলে অভিনব মিউজিয়াম

৩ ডিসেম্বর ২০২০

সমুদ্রের নিচে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন দেখার সৌভাগ্য সাধারণত প্রত্নতাত্ত্বিক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ গ্রিসে পানির নিচে প্রথম মিউজিয়াম পর্যটকদেরও সেই সুযোগ করে দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3m9sI
গ্রিসের আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম
গ্রিসের আন্ডারওয়াটার মিউজিয়ামে পর্যটকরাছবি: DW

গ্রিসের ঐতিহাসিক সম্পদ শুধু জমির উপরে নয়, পানির নীচেও ছড়িয়ে রয়েছে৷ এজিয়ান সাগরের উত্তরে আলোনিসস দ্বীপের কাছে দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম অবস্থিত৷ ডাইভিং প্রশিক্ষক হিসেবে ইলিয়ানা ইয়ালামা পানির নীচে ভ্রমণের আয়োজন করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন ডাইভিং প্রশিক্ষক৷ গত পাঁচ বছর ধরে এই শিল্পক্ষেত্রে কাজ করছি৷ মানুষের সামনে ভিন্ন এক জগতের দ্বার খুলে দিতে আমার অসাধারণ লাগে৷ বিশেষ করে এখন পানির নীচে মিউজিয়াম হবার পর৷’’

আলোনিসস ও পেরিস্টেরা দ্বীপের মাঝে সমুদ্রের নীচে প্রায় চার হাজার প্রাচীন অ্যাম্ফোরে বা মাটির কলসি ছড়িয়ে রয়েছে৷ সে কারণে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এই মূল্যবান সম্পদ পরিদর্শন করতে হয়৷ ইলিয়ানা ইয়ালামা বলেন, ‘‘আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমি আপনাদের আরও কিছুটা সতর্ক করে দিতে চাই, যাতে চিরকালের জন্য এই সৌধ অক্ষত রাখা সম্ভব হয়৷ তাই আমাদের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের চারিপাশে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷’’

গ্রিসের প্রথম ‘আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম’

পর্যটকরা প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পানির নীচের মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারেন৷ প্রায় ২৮ মিটার গভরে প্রাচীন এক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷ জাহাজের কাঠ প্রায় পুরোপুরি ক্ষয়ে গেছে, মালপত্র হিসেবে শুধু সুরার পাত্রগুলি দেখা যায়৷ সেটি প্রায় আড়াই হাজার বছর পুরানো এক বাণিজ্য জাহাজ বলে অনুমান করা হয়৷ অজানা কোনো কারণে অগ্নিকাণ্ডের ফলে এথেন্সের জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল৷ পর্যটকদের কাছে সেই দৃশ্য সত্যি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ সেসিলিয়া ডার্সি সেই সুযোগ পেয়ে আপ্লুত৷ তিনি বলেন, ‘‘মিউজিয়ামে গেলে সব সময়ে ফলক ও লিখিত বর্ণনা দেখা যায়৷ এখানেও সে সব রয়েছে৷ সাধারণ মিউজিয়ামের সঙ্গে মিল দেখলে বেশ মজা লাগে৷ সম্পূর্ণ অন্যরকম পরিবেশে এমন বৈশিষ্ট্য সত্যি অসাধারণ৷’’

আকার অনুযায়ী পাত্রগুলির শৈলির মধ্যে পার্থক্য বোর্ডে তুলে ধরা হয়েছে৷ পানির নিচে মিউজিয়ামের দৌলতে এতকাল অপরিচিত আলোনিসস দ্বীপে আরও পর্যটকের সমাগম হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ফ্রান্সের পর্যটকরা সেখানে গিয়ে বেশ সন্তুষ্ট৷ প্যারিসের পর্যটক ফাব্রিস ডেরসি বলেন, ‘‘আমাদের ভাগ্য ভালো৷ আমরা প্রায় বিশ্বের সর্বত্র ডাইভিং করেছি৷ এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ অ্যামেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বিপপুঞ্জে গেছি৷ এই ছুটিকে সত্যি পারিবারিক প্রকল্প বলা চলে৷ যখন জানতে পারলাম যে এখানে আড়াই হাজার বছর পুরানো জাহাজের ধ্বংসস্তূপের কাছে ডাইভিং করা যায়, সঙ্গে সঙ্গে বুকিং করে ফেললাম৷ সত্যি অসাধারণ৷’’

গ্রিসের আন্ডারওয়াটার মিউজিয়াম
ছবি: DW

আলোনিসস দ্বীপের বাসিন্দারাও তাদের নতুন আকর্ষণ সম্পর্কে উৎসাহী৷ পেট্রোস ভাফনিস শুধু দ্বীপের মেয়র নন, তিনি এর মধ্যে বেশ দক্ষ ডুবুরি হয়ে উঠেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মেয়র হিসেবে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করি৷ নিজেই ডুব মেরে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখা আমার জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল৷’’

যারা ডাইভিং করতে পারেন না, তাঁদের জন্য আলোনিসস দ্বীপের বুকেও একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে৷ সেখানে পানির নিচের সম্পদের ছবি, ভিডিও ও কিছু নিদর্শন দেখা যায়৷ একটি মডেলে জাহাজের রূপরেখা বরাবর পাত্রগুলি দেখা যাচ্ছে৷ ভারচুয়াল রিয়ালিটি চশমা পরে মিউজিয়ামের দর্শকরা সমুদ্রের তলদেশের অনুভূতি পেতে পারেন৷ প্রকৃত অর্থে প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসে ডুব দেবার সুযোগ সত্যি আকর্ষণীয় বটে৷

টেওডোরা মাভ্রোপুলোস/এসবি