গুহার গভীরে উদ্ধার পর্ব
বাভারিয়ার আল্পসে জার্মানির গভীরতম গুহায় আটকে পড়া এক গবেষককে সম্প্রতি উদ্ধার করা হলো জার্মানির ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অভিযানের মধ্য দিয়ে৷ এতে অংশ নিতে রিজেনডিং গুহামুখে জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ অভিযাত্রী৷
পদে পদে বিপদ
গত ৮ জুন ওপর থেকে খসে পড়া পাথরে দারুণভাবে আহত হন গবেষক ইওহান ভেস্টহয়জার৷ কর্নভেস্টহাইমের এই গুহা বিশেষজ্ঞ এতটাই আহত হয়েছিলেন যে তাঁর পক্ষে পায়ে হেঁটে সেখান থেকে উঠে আসা সম্ভব ছিল না৷ তাঁকে উদ্ধারের পথেও ছিল পদে পদে বিপদ৷
রিজেনডিং গুহা
ইওহান ভেস্টহয়জার এবং তাঁর সহকর্মীরাই ১৯৯৫ সালে বিরাট এই ‘কেভ সিস্টেম’ আবিষ্কার করেন এবং নাম দেন রিজেনডিং৷ বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় ‘সুবিশাল’৷ অস্ট্রিয়া সীমান্তে পর্বতের ১ হাজার ১৪৮ মিটার গভীরে অসংখ্য গুহা আর সুড়ঙ্গ মিলিয়ে এই কেভ সিস্টেম আসলেই বিশাল৷ গুহামুখ থেকে এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯ কিলোমিটার৷
সাময়িক বিচ্ছেদ
৮ জুন প্রথম প্রহরে আকস্মিকভাবে একখণ্ড পাথর খসে পড়লে আহত হন ৫২ বছর বয়সি ইওহান ভেস্টহয়জার৷ তাঁকে বের করে আনা সম্ভব না হওয়ায় দুই সহযোগীর একজন তাঁর সঙ্গে গুহাতেই থেকে যান৷ সাহায্যের আশায় ১২ ঘণ্টা ধরে পাহাড় বেয়ে গুহামুখে পৌঁছান আরেক সহযোগী৷ তাঁর বার্তা উদ্ধারকর্মীদের কাছে পৌঁছায় দুর্ঘটনার ১৩ ঘণ্টা পর৷
উদ্ধার অভিযানে হেলিকপ্টার
৮ জুন বিকালে উদ্ধার অভিযানে গুহায় নামার সব প্রস্তুতি শেষ করেন উদ্ধারকর্মীরা৷ এরপর ১১ জনের তিনটি দলকে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছে দেয়া হয় পর্বতের ১ হাজার ৮০০ মিটার উচ্চতায় রিজেনডিং গুহামুখে৷ অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও হেলিকপ্টারেই পৌঁছে দেয়া হয়৷
কেভলিংক
গুহায় নামা উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে বাইরে থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হয় বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে, যার নাম কেভলিংক৷ আধুনিক এই প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোবাইল ফোনের টেক্সট মেসেজের মতো ক্ষুদে বার্তাও আদান-প্রদান করেন৷
সংকীর্ণ সুড়ঙ্গ
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রিয়া, ইটালি, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২০০ অভিযাত্রী ও গুহা বিশেষজ্ঞ ব্যার্শটেসগাডেন-এ পৌঁছান উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য৷ কিন্তু সংকীর্ণ সুড়ঙ্গ পথে গুহায় নামা সম্ভব না হওয়ায় তাঁদের অধিকাংশকেই অপেক্ষা করতে হয় বাইরে৷
প্রথম সুসংবাদ
দুর্ঘটনার তিন দিন পর উদ্ধারকারীদের প্রথম দলটি গুহার গভীরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান৷ সেখান থেকে তাঁরা জানান, ইওহান ভেস্টহয়জার বিপদমুক্ত৷ স্লিপিং ব্যাগ ও স্টাইরোফোমে শরীর মুড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে কোনোক্রমে টিকে গেছেন তিনি৷
দুর্গম যাত্রা
ছোটো ছোট সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যুক্ত একের পর এক গুহা মিলিয়ে রিজেনডিং কেভ সিস্টেম যেন এক গোলকধাঁধা৷ যে কোনো অভিযাত্রীর জন্যই এই গুহা একটি বড় চ্যালেঞ্জ৷ পর্বতের ওপরের প্রবেশমুখ থেকে এই গুহা প্রায় খাঁড়া নেমে গেছে ৩৫০ মিটার৷ এরপর মূল সুড়ঙ্গটি কখনো গুহা, কখনো ফাঁটলের চেহার নিয়ে ভূমির সমান্তরালে চলে গেছে বহু কিলোমিটার৷ আশেপাশেও ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি শাখা সুড়ঙ্গ৷
অবশেষে মুক্তি
দু’জন চিকিৎসক ও ছয়জন উদ্ধারকর্মীর চেষ্টায় ১২ জানুয়ারি ফিরতি পথে যাত্রা শুরুর অবস্থায় পৌঁছান ইওহান ভেস্টহয়জার৷ আরো ছয়জন রওনা হন ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেয়ার জন্য৷ দুর্ঘটনার ১১দিন পর, অর্থাৎ ১৯ জুন ইওহান ভেস্টহয়জারকে নিরাপদেই গুহার বাইরে নিয়ে আসা হয়৷