গুপ্তধন!
কিংবদন্তির গুপ্তধন সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল চিরকালের৷ তা নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক রোমাঞ্চকর কাহিনী, তৈরি হয়েছে কত রোমহর্ষক ছায়াছবি৷ ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’-এর মতো বই বা ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স-এর মতো ছবি আজও মানুষকে টানে৷
নিমজ্জিত স্বর্গপুরী
শুরু করতে হবে স্বভাবতই ‘অ্যাটলান্টিস’ দিয়ে৷ প্রাচীন ইউরোপীয় সভ্যতা ও কিংবদন্তির সেই অবিশ্বাস্যরকম সমৃদ্ধিশালী হারানো শহর, যা নাকি এগারো হাজার বছরেরও আগে সমুদ্রে ডুবে যায়৷ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গবেষক, ডুবুরি, অ্যাডভেঞ্চার পাগলেরা সেই আশ্চর্য জায়গাটির সন্ধান করেছেন, গ্রিক দার্শনিক প্লেটো পর্যন্ত যার উল্লেখ করতে ভোলেননি৷
হারিয়ে যাওয়া অ্যাম্বার রুম
সেন্ট পিটার্সবুর্গে সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিনের প্রাসাদে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে কিংবদন্তির সেই অ্যাম্বার কক্ষ, যাকে অনেকে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলে মনে করতেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দখলদারি জার্মান সেনাবাহিনী কক্ষের প্যানেলগুলি খুলে ২৮টি বাক্সে ভরে ক্যোনিগসব্যার্গ দুর্গে পাঠিয়ে দেয়৷ কিন্তু তা কোনোদিনই সেখানে পৌঁছায়নি৷ পরে কিছু কিছু অংশ আবিষ্কৃত হলেও, বাকিটা যুদ্ধের ধোঁয়াশায় অন্তর্হিত হয়েছে৷
পবিত্র ধন
লিমার গুপ্তধন৷ উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে স্পেনের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যখন বাড়ছে, তখন পেরুর প্রশাসক ও গির্জ্জার হর্তাকর্তারা তাদের ধনসম্পদ বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন৷ সেই ঐশ্বর্যের মধ্যে নাকি মাদার মেরির একটি ১,৭০০ মণিমুক্তা খচিত মূর্তি ছিল, যা কোকোস দ্বীপে আজও লুকানো রয়েছে বলে শোনা যায়৷ রবার্ট লুইস স্টিভেনসন এই কিংবদন্তিকে তাঁর ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ বইতে কাজে লাগিয়েছিলেন৷
অমূল্য
ঈশ্বর স্বয়ং নাকি ইসরায়েলাইটদের এই কাঠের বাক্সটি তৈরি করতে বলেছিলেন আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে৷ বাক্সটি মোড়া ছিল কাঁচা সোনায়৷ তা’তে সুবিখ্যাত ‘টেন কমান্ডমেন্টস’ খোদাই করা পাথরের ফলকগুলো পরিবহণ করা হতো৷ তথাকথিত ‘আর্ক অফ দ্য কোভেন্যান্ট’ নাকি ২,৬০০ বছর আগে উধাও হয়৷ আজও জেরুসালেমের টেম্পল মাউন্টের নীচে তা লুকনো আছে বলে শোনা যায়, যদিও তার কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷
নদীবক্ষে
জার্মানির ভর্মস শহরের কাছে রাইন নদের জলে নাকি একটি গুপ্তধন লুকানো আছে - অন্তত ত্রয়োদশ শতাব্দীর নিবেলুং গাথায় তেমনই বলা হয়েছে৷ হাগেন ফন ট্রনিয়ে নাকি বারো গাড়ি সোনা আর মণিমুক্তা নদীতে ফেলেন৷ ফলে আজও অসংখ্য ডুবুরি সেই গুপ্তধনের খোঁজে রাইনের জল ঘোলা করে চলেছেন৷
হোলি গ্রেইল
বাইবেলে কথিত ‘লাস্ট সাপার’বা শেষ নৈশভোজে যিশু যে পাত্র থেকে পান করেছিলেন, পরে যে পাত্রে ক্রুশবিদ্ধ যিশুখ্রিষ্টের রক্ত ধরা হয়েছিল, হোলি গ্রেইল হল সেই পাত্র৷ কিংবদন্তির রাজা আর্থারের আমল থেকে অর্থাৎ দ্বাদশ শতাব্দী থেকে সেই পবিত্র পাত্রের খোঁজ চলেছে৷ ১৯৮৯ সালের ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড’ ছবিতে হ্যারিসন ফোর্ড ও শন কনারি হোলি গ্রেইলের সন্ধান করছেন৷
রামধনুর অপর পারে
এও এক কাহিনী৷ কোনো একজন মানুষের নাকি বদ্ধ ধারণা ছিল যে, রামধনুর শেষে এক গুপ্তধন লুকনো আছে৷ অনেক খোঁজ করার পরে সে রামধনুর শেষে পৌঁছাল বটে, কিন্তু নিজেকে ছাড়া আর কিছু খুঁজে পেল না৷ তখন সে বুঝল যে, যে ঐশ্বর্যের খোঁজ সে করছিল, তা হলো মানসিক সুখ ও শান্তি৷ পৃথিবীতে আমাদের সব অ্যাডভেঞ্চারের লক্ষ্যই কি তাই নয়?