1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌স্বর্ণযুগ’ ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন রাহুল

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২১ মার্চ ২০১৮

‘‌অপরিপক্ক’, ‘অপরিণত’, ‘‌পার্ট টাইমার’ এবং ‘‌পাপ্পু’, প্রায় এক দশক ধরে এই শব্দগুলি সোনিয়া-‌তনয় রাহুল গান্ধীর ডাকনামে পরিণত হয়েছিল৷ সেই রাহুল এখন দুঁদে রাজনীতিক৷

https://p.dw.com/p/2uhmo
ছবি: Reuters/A. Hussain

স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার একাকার৷ ছেলের কাঁধে জোয়াল তুলে দিয়েছেন মা সোনিয়া গান্ধী৷

ভারতীয় রাজনীতিতে এ যাবৎ রাহুলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিল তথাকথিত অভিজ্ঞ মহল৷ এমনকি শিকড়সহ জাঁকিয়ে বসা রাজনীতিকদের অনেকে তো এখনও রাহুলকে এক পঙক্তিতে বসতে দিতেই নারাজ৷ কিন্তু, কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ যে তাঁর হাতের তালুতেই, তা প্রমাণ করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন রাহুল৷ দু-‌দিন আগেই দিল্লিতে শেষ হলো জাতীয় কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন৷ সুবিশাল মঞ্চ থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মাত দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন৷ স্বভাতই, রাহুলকে নিয়ে নিছক কৌতুকের পথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে৷

কোন পথ ধরলেন রাহুল?‌ দেশের হতাশাগ্রস্ত যুবক, কৃষক ও সাধারণ মানুষকে শান্তি, অহিংসা ও ভ্রাতৃত্বের পথে নিয়ে যেতে চান তিনি৷ শুধু বলেননি, করে দেখিয়েছেন৷ এবার কংগ্রেসের অধিবেশনের মঞ্চ ছিল ফাঁকা৷ শুধু বক্তা আর কারও জায়গা নেই৷ কোনও নেতা নেই৷ রাহুল সেই মঞ্চ দেখিয়ে বললেন, ‘‘‌অন্যদের সভা দেখুন৷ কোনও বৈঠকে এমন খালি মঞ্চ দেখতে পাবেন না৷ ভারতের যুবরা, এই মঞ্চ আপনাদের জন্যই ফাঁকা রেখেছি৷ দেশকে যদি বদলাতে হয়, তাহলে সবাইকে দলে আনতে হবে৷ আপনারাই বদলাতে পারেন৷ যাদের মেধা আছে, মনে ভারতের জন্য আগুন জ্বলছে, তাঁদের এই মঞ্চে আনবো৷ যেভাবে ৭০-৮০ সাল আগের কংগ্রেস ছিল, গান্ধী, নেহেরু, সর্দার প্যাটেল, আজাদ, জগজীবন রাম৷ যে কেউ এর মধ্যে দেশকে চালাতে পারতেন৷ ওটাই আমার স্বপ্ন, ওই দিনের মতো কংগ্রেস দলকে দেখতে চাই৷’’

রাজধানীর প্রবীন সাংবাদিক গুলসন খাতরির মতে, ‘‌‘‌‌গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ‘‌পাপ্পু’ তকমা ঝেড়ে ফেলে সিরিয়াস রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন রাহুল গান্ধী৷ সোশাল মিডিয়ায় বিজেপি বহু কৌশলে রাহুলকে নিয়ে খিল্লি করে আসছিল৷ ইদানিং ঠিক উলটো ছবি ধরা পড়ছে৷ ব্যাংক জালিয়াতি ইস্যুকে জনসমক্ষে তুলে ধরার পর মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিজেপি, আরএসএস এবং নরেন্দ্র মোদীর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবেন রাহুল এবং তাঁর দল কংগ্রেস৷’’

‘সিরিয়াস রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন রাহুল গান্ধী’

প্রথম সুযোগেই দলের নেতাদের তাঁর পরিকল্পনার কথা জানাতে ভোলেননি৷ বলেছেন, ‘‌‘সংগঠনকে বদলাতে হবে৷ কিছু লোকের এটা ভালো লাগবে না৷ কিন্তু আমাকে বলতেই হবে৷ কীভাবে বদলাবো? ওই যে পিছনে কর্মীরা বসে আছেন, তাঁদের মধ্যে শক্তি আছে দেশকে বদলানোর৷ কিন্তু তাঁদের ও আমাদের নেতার মধ্যে একটা দেওয়াল রয়েছে৷ আমার প্রথম কাজ ভালোবেসে, প্রবীণদের জন্য শ্রদ্ধা রেখে, ভালোবেসে৷’’

রাহুলের মতে, ‘‌‘এই দেওয়াল ভিন্ন ধরনের৷ একটা রূপ হলো, প্যারাস্যুট থেকে ওপর থেকে টিকিট (‌প্রার্থীপদ)‌ নিয়ে লোকে নেমে আসে৷ দ্বিতীয় রূপ, ১০-১৫ বছর কর্মী ঘাম-রক্ত ঝড়ায়, কিন্তু তাঁদের বলা হয়, তোমাদের কাছে টাকা নেই, তাই টিকিট দেবো না৷ কিন্তু না, প্রকৃত কর্মীরাই টিকিট পাবে৷’’

কীভাবে আসবে সফলতা?‌ রাহুলের দাবি, ‘‌‘গুজরাট ছোট উদাহরণ৷ কংগ্রেস কর্মীদের টিকিট দেওয়া হয়েছিল৷ যার ফল দেখেছেন৷ মোদী সি প্লেনে উড়ছেন৷ আগামীতে যেদিন প্রকৃত কংগ্রেস কর্মীদের টিকিট দেওয়া হবে, সি প্লেন তো দূর মোদীজিকে সাবমেরিনে দেখা যাবে৷’’

দলের সাধারণ কর্মী ও নেতাদের মাঝখানের দেওয়াল ভাঙার কথা বলেছেন রাহুল৷ সাধারণ কর্মীদের প্রার্থী করবেন৷ প্রতিভাকে গুরুত্ব দেবেন৷ আর স্বাধীনতার পরের কংগ্রেসের মতো দলকে তৈরি করবেন৷ যেখানে একগুচ্ছ প্রতিভাবান নেতা থাকবেন, তাঁদের যে কেউ দেশকে চালাতে পারবেন৷ মহা অধিবেশনে সেটা করে দেখিয়েওছেন৷

‘জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীদের দেখানো পথেই এগোচ্ছেন রাহুল’

অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির বাঙালি সদস্য ‌শুভঙ্কর সরকারের মতে, ‘‌‘‌জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীদের দেখানো পথেই এগোচ্ছেন রাহুল৷ আরও উন্নতি, অনেক বেশি উন্নতি চাইছেন৷ রাহুলের বাবা রাজীবই এদেশে ১৮ বছরের প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার দিয়েছিলেন৷ কংগ্রেসের কর্মকাণ্ডের জেরেই দেশের নাগরিকের আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে৷ মোদীজির মা এখনও সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন৷ প্রবীনদের অভিজ্ঞতাকে পাথেয় করে তাঁদের হাত ধরে পথ চলতে শেখাচ্ছেন তিনি৷ দেশে কৃষির উন্নতি, কর্মসংস্থান, সামাজিক সম্প্রীতি, পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ফিরিয়ে আনতে চাইছেন৷ নরেন্দ্র মোদীর ভারতে এসব দূর দূর অবধি নেই৷’’

ছত্তিসগড়, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশের এমন সব নেতাকে তিনি ‌ভাষণ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, যাঁরা এতদিন এই ধরনের বৈঠকে মঞ্চ থেকে মুখ খোলার কথা ভাবতেই পারেননি৷ তবে, অবশ্য ইচ্ছে থাকলেও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি নির্বাচন করতে পারেননি৷ তাঁর লক্ষ্য, ২০১৯-‌এর সাধারণ নির্বাচন৷ প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি৷

দলের কর্মীদের রাহুল বলেছেন, ‘‘‌ঝগড়া করতে হলে ভোটের পর করুন৷ অল্পস্বল্প ঝগড়া হয়েই থাকে৷ কিন্তু, আগামী ৬-‌৭ মাস দলে কড়া শৃঙ্খলা থাকবে৷ তাতে কারও কারও ধাক্কা লাগতে পারে৷’’

মোদী-‌সরকারকে কুপোকাত করতে রাজনৈতিক কৌশলের কথাও আছে রাহুলের মাথায়৷ পাশাপাশি দল ও দলীয় কর্মীদের ‘‌অক্সিজেন’ জুগিয়েছে সেই কৌশল৷ শুধু বিজেপি নিন্দা?‌ শুধুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ?‌ না, সেই গণ্ডিতে আটকে থাকতে চাইছেন না কংগ্রেস সভাপতি৷ দেশ ও দলীয় কর্মীদের রাহুল গান্ধীর বার্তা, ‘‌‘মোদী মায়া শেষ৷ ‌তৈরি থাকুন৷ ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস৷‌’’ আরও একবার কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সরকারের অগ্রাধিকার কি হবে, কীভাবে হবে, তা-‌ও জানিয়েছেন৷ কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি-‌র নীতিগত পার্থক্য তুলে ধরার সময় বলেছেন, ‘‘‌‌বিজেপি একটি সংগঠনের কন্ঠস্বর৷ কিন্তু, কংগ্রেস এই দেশের কন্ঠস্বর৷’’ টেনে এনেছেন মহাভারতের কৌরব ও পান্ডবদের প্রসঙ্গও৷

এতকিছুর মাঝে মনমোহন, সোনিয়াদের সামনেই ২০১৪-‌তে ইউপিএ সরকারের পতনের কারণ অনুসন্ধানও করেছেন কংগ্রেস সভাপতি৷ রাহুলের মতে, ‘‌‘‌সরকারের শেষ কয়েকটা বছর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল কংগ্রেস৷ সেই কারণেই মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখান করেছে৷’’ সরকারে এলে কী করবেন?‌ কীভাবে করবেন?‌ বলেছেন, কৃষি ও কর্মসংস্থানের ওপরে জোর দেবেন৷ দেশের প্রতি জেলায় ‘‌ফুড পার্ক’ গড়বেন৷ সমাজের সব শ্রেণী, সব ধর্মের মানুষকে রক্ষা করবে সরকার৷ দেশের প্রতিটি কোণে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন৷ আর একটি স্বপ্নের কথা বলেছেন রাহুল৷ তা হলো, গোটা বিশ্বে চীন এবং আমেরিকার দুটি মতবাদ চালু আছে৷ তিনি চান আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভারতের নিজস্ব মতবাদ তৈরি হোক৷ এবং তা হবে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও অহিংসার মতবাদ৷