গানের সুরে ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠছে গ্রাম
বোমা বা রকেটে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস হলেও মন থেকে সুর মুছে দেয়া যায় না৷ তারই প্রমাণ দিচ্ছেন ইউক্রেনের একদল স্বেচ্ছাসেবী৷ গ্রামের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নতুন করে সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ছেন তারা৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
সুরের লড়াই
ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চলের ইয়াহিদনে গ্রামে একজন শিল্পী বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত৷ তিনি পারফর্ম করছেন৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবনের ছন্দে ফিরতে চাইছেন৷একে তারা বলছেন টেকনো পার্টি৷
বাঁচার লড়াই তালে তালে
রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সেখানকার ইয়াহিদনে গ্রামে পারফর্ম করছেন শিল্পীরা৷ তাদের পারফর্ম্যান্সের সঙ্গে নাচতে নাচতে শোক ভুলে নতুন করে বাঁচতে চাইছেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷ পারফর্ম্যান্স উপভোগ করতে করতেই একজন কিন্তু ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করে চলেছেন৷
হার না মানা লড়াই
এই স্বেচ্ছাসেবী নারী ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াহিদনেকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর৷ ইউক্রেনীয় তরুণদের ‘ক্লিন-আপ রেভ’-এ অংশ নিয়েছেন তিনিও৷ নাচ গানের পার্টি চলছে৷ পাশাপাশি নতুন করে গ্রামকে, কালচারাল হাউসকে গড়ে তোলার কাজও চলছে৷ শিল্পীরাও সাহস জোগাচ্ছেন৷
ডিজে পারফর্ম্যান্স
ডিজের সুর বোমার শব্দ ভুলিয়ে দেবেই৷ এমনই মনে করছেন শিল্পীরা৷ বোমা হামলায় ইটের পাঁজর বেরিয়ে পড়া বাড়িতে পারফর্ম করছেন শিল্পী৷ সেই সুরের ছন্দেই অন্যদিকে বেলচা হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন কেউ৷ রুশ রকেট হানায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রামে ফের প্রাণ আনবেন তারা৷ গোলাবারুদের স্তূপের পাশে ডিজের টার্নটেবিল যেন সরাসরি প্রশ্ন করছে, ‘‘তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল৷’’
স্বেচ্ছাশ্রমই জীবন
হাতে কোদাল, বেলচা নিয়ে পোড়া কালো ছাইয়ের স্তূপ সরাচ্ছেন এক তরুণ৷ সেই কাজটিও করছেন বেশ স্টাইলের সঙ্গে৷ রোদচশমা পরতে ভোলেননি তিনি৷ তার সঙ্গীরাও একই কাজে ব্যস্ত৷ ‘রিপেয়ার টুগেদার’ নামের উদ্যোগের এক স্বেচ্ছাসেবী স্পষ্ট বলেন, ‘‘এটাই আমার জীবনযাপন৷’’
‘ডু ইট ইন এ রকিং ওয়ে’
ইলেকট্রনিক মিউজিক ভালোবাসেন যে তরুণরা, যারা পার্টি করতে ভালোবাসেন, এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন তারাই৷ যেমন এই তরুণী হাতে গ্লাভস পরে পুড়ে যাওয়া ইটগুলি সরানোর কাজ করছেন৷ এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘‘যুদ্ধের সময় আমরা সাহায্য করতে চাই৷ আমরা সংগীতের মাধ্যমে সেটা করছি৷’’
পাঁজরে বোমার দাগ
কংক্রিট ভেঙে পড়েছে, ইটগুলোও খসে পড়ছে আস্তে আস্তে৷ মার্চ মাসে রাশিয়ার ছোঁড়া বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এই বাড়িটি৷ গোলাবর্ষণে বিপর্যস্ত বাড়ির ঠিক মাঝখানে নিজের ডিজে সেট নিয়ে মন দিয়ে পারফর্ম্যান্সের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক তরুণ৷ নির্বিকার ভাবলেশহীন এই তরুণ কি ডিজে মিউজিকের মাধ্যমে সব ক্ষত মুছে দিতে পারবেন ?
একজোট হয়েই সম্ভব
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে চলছে কারফিউ৷ একাধিক জায়গায় রকেট হামলার হুমকিও আছে৷ কিন্তু সংস্কৃতিপ্রেমীরা এইভাবে নিজের দেশ পুনর্গঠনের কাজ করছেন৷ ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷ পাশাপাশি সংগীতেই নতুন করে স্বাধীনতা খুঁজছে তরুণ প্রজন্ম৷ পারফর্ম্যান্স শুনতে শুনতে কাজ, আর এভাবেই সবাই একজোট হওয়ার চেষ্টা করছেন৷
নির্বিকার খুদে
রুশ হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন৷ গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছে অনেক শিশু৷ তারা আর ফিরবে না৷ ‘হাউস অফ কালচার’ অর্থাৎ সংস্কৃতি কেন্দ্রের সামনে ট্রাইসাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক খুদে৷ সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে–এ কথাই বলতে ইচ্ছে করবে নিষ্পাপ শিশুর আপনমনে খেলে বেড়ানো দেখে৷
অমানুষিক পরিশ্রম
সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি পরিষ্কার করার কাজটি ছিল এই স্বেচ্ছাসেবীদের অষ্টম প্রকল্প৷ তারা ইতিমধ্যেই গ্রামের ১৫টি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মেরামত করতে সাহায্য করেছে৷ নিকটবর্তী শহরে লুকাশিভকাতে ‘বিল্ডিং ক্যাম্প ইভেন্ট’ করার পরিকল্পনা করেছে তারা৷ ধ্বংসস্তূপের পোড়া ছাই, মাটি তুলে রাখছেন লরিতে৷ জীবন তো আর থেমে থাকে না৷ আর সঙ্গে যদি সুর থাকে, তাহলে তো কথাই নেই৷ জীবন এগোবে সুরের ছন্দ মিলিয়েই৷