1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাজায় মৃত্যুর মিছিল

১৪ মে ২০১৮

ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকা ইসরায়েলি বাহিনির গুলিতে অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে৷

https://p.dw.com/p/2xfzU
ছবি: Reuters/M. Salem

ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকার ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ 
বিক্ষোভরতরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে এ সংঘর্ষে আড়াইশ থেকে ৩০০ লোক আহত হয়েছে৷ আর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগুনে ২০০ বিক্ষোভকারী পুড়ে গেছেন৷ 

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনি দিকে আগুন ছুড়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আনা হলেও তারা বলছে, ‘‘বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে ১০ হাজার বিক্ষোভকারীকে নিয়ন্ত্রণে ঠিক যতোটুকু আগুন ছুড়ে নিয়ন্ত্রণের বিধিমালা রয়েছে, তারা সে অনুযায়ীই আগুন ছুড়েছে৷’’ 

গত ছয় সপ্তাহ ধরেই মে মাসের ১৪ তারিখ এবং জেরুসালেম সারা বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে৷ কেননা, সেখানেই পুরোদমে চালু হতে যাচ্ছে অ্যামেরিকার দূতাবাস, যা নিয়ে রয়েছে সমালোচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷

Libanon Palästinenser verbrennen Bild von Trump in Sidon
লেবাননে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদছবি: Reuters/A. Hashisho

জেরুসালেমকে নিজেদের রাজধানী বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল৷ অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা তাঁদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুসালেম দাবি করে আসছে৷ তাঁরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে৷

ফিলিস্তিনিরা মার্কিন এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এর প্রবল বিরোধিতা করেছে৷ দূতাবাস উদ্বোধনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদের জন্য জেরুজালেমে জমায়েত হচ্ছে তারা৷

Israel Palästinensische Protestierende
কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে গাজায় ফিলিস্তিনিরা পালাচ্ছেনছবি: Getty Images/AFP/M. Abed

মে মাসের ১৪ তারিখ জেরুসালেম সারা বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে৷ কেননা, সেখানেই পুরোদমে চালু হচ্ছে অ্যামেরিকার দূতাবাস, যা নিয়ে রয়েছে সমালোচনা এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷

দক্ষিণ জেরুজালেমের শান্ত আবাসিক এলাকা আরনোনায় এ দূতাবাস উদ্বোধন উপলক্ষে ইতিমধ্যে দু'পাশের রাস্তায় সারি সারি করে অ্যামেরিকা ও ইসরাইলের পতাকা লাগানো হয়৷ হিব্রু, আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় নির্দেশিকাও দেওয়া হয়৷

তবে তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস খোলা নিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সমালোচনা৷ তাঁরা বলছেন, জেরুসালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস নিয়ে আসার এই পদক্ষেপ এ অঞ্চলের সাত দশকেরও বেশি রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও উসকে দেবে৷

এমনকি সাধারণ ইসরায়েলি জনগণের মধ্যেই দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ইউরিয়েল বেরেনস্টেইন পূর্ব জেরুসালেমের রাস্তায় তাঁর কুকুর নিয়ে হাঁটছিলেন৷ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটা ঠিক আছে৷ এখানে অ্যামেরিকার দূতাবাস সরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, কেননা, এটিই তো শেষ পর্যন্ত রাজধানী৷ এমনকি একটি শিশুও এ কথা বলবে৷ যদি কখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হয়, ঐক্যমতের মাধ্যমে দু'পক্ষের সমঝোতা হয়, তাহলে অন্যকিছু হবে হয়ত, কিন্তু এখন তো জেরুসালেমই ইসরায়েলের রাজধানী৷’’  

২৫ বছর বয়সি এই ইসরায়েলি অবশ্য মনে করেন এ বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি বিবাদমান দুইপক্ষের সম্পর্ককে আরও তিক্ততায় নিয়ে যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি অবশ্যই অস্থিরতা তৈরি করবে, কিন্তু আমরা কেবল এটুকু আশা করতে পারি দু'পক্ষের নেতারা সাধারণ জনগণকে শান্ত করতে সমর্থ হবেন৷’’

জেরুসালেমে অ্যামেরিকার যে কনসুলেট ভবন আছে সেখানেই ছোট পরিসরে অন্তর্বর্তীকালীন এ দূতাবাসটি চালু করা হচ্ছে৷ পরে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস ভবন নির্মিত হলে তেল আবিব থেকে দূতাবাসের অপরাপর অংশও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে৷

ইসরায়েলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সঙ্গে মিলানোর জন্য মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এগিয়ে আনা হয়৷

Proteste im Gazastreifen an der Grenze zu Israel
ইসরায়েলি সেনারা আগুন নেভাতে ব্যস্তছবি: Reuters/A. Cohen

রেনা রাবা নামের আরেক ইসরায়েলি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটা নিয়ে কোনো দ্বিধার অবকাশ নেই, জেরুসালেম ইসরায়েলের রাজধানী৷ এখানেই অ্যামেরিকার দূতাবাস হওয়া উচিত৷’’

জেরুজালেমকে নিজেদের ‘শাশ্বত ও অখণ্ড’ রাজধানী বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল৷ অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেম দাবি করে আসছে৷ তারা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে৷

এদিকে জেরুজালেম দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ও তার স্বামী জারেড কুশনার এখন সেখানে অবস্থান করছেন৷ তাঁরা দুজনই হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা৷ কুশনার দম্পতির পাশাপাশি অ্যামেরিকার অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মুচিন ও উপ-পরাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভানও অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন৷

গত বছর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ এর মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার কয়েক দশক ধরে অনুসৃত নীতি থেকে সরে আসে অ্যামেরিকা৷ দেশটির এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ৷

ফ্রান্স, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অনেক মিত্র দেশের আহ্বান উপেক্ষা করেই অ্যামেরিকার দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ 

অ্যামরিকার দূতাবাস স্থানান্তরে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জেরুসালেমে অ্যামেরিকার দূতাবাস উদ্বোধন তাঁদের জন্য উদযাপনের একটি বিষয়৷ অপরদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে বর্ণনা করেছেন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টার ওপর ‘শতকের সবচেয়ে বড় আঘাত’ হিসেবে৷

মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে রাজধানী হিসেবে চায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ ইসরায়েল বরাবরই জেরুসালেমকে তাদের রাজধানী বলে দাবি করে আসছে৷ অন্যদিকে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলিদের দখলে যাওয়া পূর্ব জেরুসালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চান ফিলিস্তিনি নেতারা৷

কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে জেরুসালেমের বিষয়টি৷ পবিত্র ওই নগরীর ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়৷ ১৯৯৩ সালের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চুক্তি অনুযায়ী জেরুসালেমের পরিচয় কী হবে তা শান্তি আলোচনায় ঠিক হওয়ার কথা৷

এইচআই/এসিবি (রয়টার্স)

গত ১২ ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...