1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাছে বাঁধা আহত জিতেন এবং আড়ালের সত্যগুলো

হারুন উর রশীদ স্বপন
২ মে ২০২২

পটিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহকে ইফতার মাহফিলে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। কেউ তাকে বাঁচায়নি৷ পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে৷ তবে তা-ও হয়েছে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে৷

https://p.dw.com/p/4AjIF
পটিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহকে ইফতার মাহফিলে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। কেউ তাকে বাঁচায়নি৷ পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে৷ তবে তা-ও হয়েছে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে৷ 
ফাইল ছবিছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

সাধারণ বিবেচনায় জিতেনকান্তি গুহকে কিন্তু ‘ক্ষমতাহীন’ বলা যাবে না। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। আর তাকেই কিনা গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে ওই ইউনিয়নেরই চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ জসিম (বি কে জসিম) ও তার লোকজন। জসিমও আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পাস করেন। বিদ্রোহী হওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান  আহ্বায়ক হলেন মাহফুজুল হক হাফেজ।

গত শুক্রবার ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ব্যানারে অনেকের নাম থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান বি কে জসিমের নাম ছিলনা। আর সেই ‘অপরাধেই' জিতেন গুহকে বিকেল ৩টার দিকেউপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সামনেই গাছে বেধে পেটানো হয়।

এবার ওই ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান যুবলীগ নেতা আবু হাসনাত ফয়সাল। বি কে জসিম বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আর তখন থেকেই জিতেন গুহকে ‘শায়েস্তা করার' সুযোগ খুঁজছিলেন বি কে জসিম। বহিস্কৃত হলেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় দলের বড় নেতাদের আশীর্বাদ বঞ্চিত হননি তিনি। জিতেন গুহ এর আগেও কখনো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাননি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদও বলেছেন, জিতেন গুহ একজন ত্যাগী নেতা।

এই ঘটনা ঘিরে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন জরুরি:

১. ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। জিতেন গুহ সাবেক সভাপতি হলেও এখন যিনি আহ্বায়ক তিনিই আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন । তাহলে সাবেক সভাপতিকে কেন পিটানো হবে?

২. ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়কসহ অন্য নেতা-কর্মীরাও তো সেখানে ছিলেন। তাদের সামনে একজনকে বাঁধলো, পিটালো বিদ্রোহীরা৷ অন্যরা কী করলেন? তারা কি জিতেন গুহকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন?

৩. জিতেন গুহ গত ইউপি নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী বি কে জসিমের পক্ষে কাজ করেননি। দলের প্রতি অনুগত থাকায় কি তাকে এই ‘পুরস্কার' দেয়া হলো?

৪. জিতেন গুহকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল না হলে একদিন পর কি ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলেকে প্রেপ্তার করা হতো?

এই প্রশ্নগুলোর জবাব পেলে আসলে অনেক কিছু পরিস্কার হবে। আমার কাছে এখানে দুইটি বিষয় আছে বলে মনে হয়েছে।

হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে
হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলেছবি: Harun Ur Rashid/DW

প্রথমত, আওয়ামী লীগের লোকজন এখন আর কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করে না। এমনকি দল থেকে বহিস্কার হলেও তাদের ক্ষমতা কমে না। কারণ, বহিস্কার নামেমাত্র। তাদের ওপর ছায়া দেয়ার লোকজন আছে। তাই তারা প্রকাশ্যে কাউকে গাছে বেঁধে পিটাতে পারে। 

দ্বিতীয় বিষয় হলো জিতেন গুহ সংখ্যালঘু। তাই নির্বাচনে পক্ষে কাজ না করার ‘শাস্তি' বিদ্রোহী ইউপি চেয়ারমান সহজেই তাকে দিতে পেরেছেন। তার দলের লোকজনও তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি, প্রতিবাদ করেনি। কারণ, বাংলাদেশে সংখ্যাঘুদের পিটানো বেশ সহজ।

বিদ্রোহী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরোধিতা তো আরো অনেকে করেছেন। তাদের কি তিনি গাছে বেঁধে পিটাতে পেরেছেন? জিতেন গুহ সংখ্যালঘু বলেই তাকে তিনি পিটাতে পেরেছেন। আর ইফতার মাহফিলের আয়োজক তো ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ইউপি চেয়ারম্যানের নাম যদি ব্যানারে না গিয়ে থাকে আর সেটা যদি ‘দোষের' হয় তার জন্য তো প্রথম দায়ী তিনি। তার ওপরে কিন্তু কোনো হামলা করার সাহস দেখাননি ইউপি চেয়ারম্যান।  যত দোষ ওই সংখ্যালঘুর। দুর্বলকে মেরে হয়ত সবলকে তিনি ‘মেসেজও’ দিয়েছেন।

জিতেন গুহ যে আওয়ামী লীগের জন্য, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য কাজ করে বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্যাতনের শিকার হলেন, সেই আওয়ামী লীগের লোকজনের নীরব থাকা বা তাকে রক্ষার চেষ্টা না করাও আরেকটি বার্তা দেয়। সেটা হলো, নির্যাতনের সময়ে তারা জিতেন গুহকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে হয়ত দেখেননি, দেখেছেন সংখ্যালঘু হিসেবে। নয়তো আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিকে বহিস্কৃত নেতা গাছে বেঁধে পেটাবেন এমন সাহস থাকার কথা নয়।

জিতেন গুহ কিন্তু আওয়ামী লীগের পদ-পদবীতে ইউপি চেয়াম্যানের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু সেটা আসলে কাজ করেনি সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে।

এমনিতে কোথাও আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখানে কিন্তু পুলিশ যায়নি। ‘ত্যাগী নেত’ জিতেন গুহকে পিটানো শেষ হওয়ার পরে তাকে স্থানীয়রা হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ অনেক পরে সেখানে যায়। ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন তখনো সেখানে ছিল। কাউকেই তখন আটক করা হয়নি৷

পরে ভিডিও ভাইরাল হলে, উপরের নির্দেশ এলে, পরদিন পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলেকে বাড়ি থেকে আটক করে। সংখ্যালঘু না হয়ে সংখ্যাগুরু আওয়ামী লীগ নেতা হলে পুলিশ হয়ত কারো নির্দেশের অপেক্ষা করতো না৷

শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কি উপায় আছে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান