1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

২৪ জানুয়ারি ২০১৯

বলিউড নগরী মুম্বইয়ের প্রাণ বলা যায় আরে বনকে৷ কিন্তু সেখানে মেট্রো স্টেশন বানানোর জন্য সম্প্রতি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ফলে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3C4Vu
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Paul

মুম্বইয়ের উত্তর-পশ্চিমের আরে বনে রয়েছে গাছ, বন্যপ্রাণী আর জলাভূমি৷ তিন হাজার একরের বেশি জায়গা নিয়ে গঠিত আরে বন আয়তনে এক হাজার ফুটবল স্টেডিয়ামের চেয়ে বড়৷ সেখানে আছে প্রায় পাঁচ লক্ষ গাছ, যার মধ্যে কয়েকটির বয়স শহরের অন্য গাছগুলোর চেয়ে বেশি৷ এছাড়া বনে বাস করেন ওয়ারলি আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রায় সাত হাজার জন৷

মহানগরী এলাকার মধ্যে অবস্থিত বিশ্বের গুটিকয়েক জাতীয় পার্কের একটি মুম্বইয়ের ‘সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় পার্ক’৷ এই পার্কের পাশেই আরে বন৷ এই বনের গাছপালাকে মুম্বইয়ের ‘সবুজ ফুসফুস' মনে করা হয়৷

কিন্তু আরে বনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন হুমকির মুখে৷ কারণ, সম্প্রতি রাজ্য সরকার বন এলাকায় একটি মেট্রো রেল ডিপো ও স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে তিন হাজারের বেশি গাছ কাটা পড়তে পারে৷

মুম্বই মেট্রো রেল কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালক এসকে গুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের মূল লক্ষ্য, মানুষের পরিবহণ সমস্যা দূর করা আর গণপরিবহণ নেটওয়ার্কের উপর চাপ একটু কমানো৷ এখানে মেট্রো রেল হলে ত্রিশ লক্ষ মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে, তাঁরা ভালো পরিবহণব্যবস্থা পাবেন৷ এটা প্রথম বিষয়৷ আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এর ফলে শহরের দূষণ সমস্যার সমাধান হবে৷ কারণ, মেট্রো রেল চালু হলে সাড়ে চার লক্ষ পরিবহণ যাত্রার আর প্রয়োজন হবে না৷’’

কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রো ডিপো ও স্টেশন বানাতে বনের মাত্র ৩৩ হেক্টর এলাকা ব্যবহৃত হবে৷ তবে বিশেষজ্ঞ ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, নির্মাণকাজের জন্য নিশ্চিতভাবেই বনের ইকোলজি নষ্ট হবে৷

আর এই অঞ্চলের প্রকৃত অধিবাসী ওয়ারলিরা বাস্তুচ্যুত হবেন৷ আশা কিশেন ভোয়ে বলেন, ‘‘আমাদের যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে সবজি ছাড়াও আমরা প্রায় আড়াইশ’ গাছ লাগিয়েছি৷ এর মধ্যে কিছু ফলের গাছ আছে, ফুলের গাছও আছে৷ তারা ১৫টি গাছ কেটে ফেলেছে৷ যখন তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, গাছ কাটার অনুমতি আছে কিনা, তারা বলেছিল, কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে৷’’

পরিবেশকর্মীরা সরকারকে মেট্রো ডিপো ও স্টেশনের জন্য সাতটি বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দিয়েছিল, যার সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করা হয়৷

‘বনশক্তি’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা স্টালিন দয়ানন্দ বলেন, ‘‘যেখানে তাপমাত্রা আর দূষণের মাত্রা অনেক বেশি, সেখানে এই প্রকল্প আরো বিপজ্জনক৷ মুম্বই শহরের শেষ সবুজ এলাকা হচ্ছে এই বন৷ এখানকার গাছপালা অক্সিজেন দেয়, আর তাপমাত্রা কম রাখতে সহায়তা করে৷ এই বনের কারণে শহরটি এখনো বাসযোগ্য আছে৷’’

তবে এসকে গুপ্ত বলছেন, ‘‘বাস্তবভাবে বিষয়টি চিন্তা করুন৷ প্রকল্পের কারণে প্রায় ছয় হাজার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ আমি ক্ষতিগ্রস্ত বলছি, কারণ, প্রায় অর্ধেক গাছ আবার লাগানো হবে৷ এই ছয় হাজার গাছ বছরে প্রায় ১৩০ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতো৷ কিন্তু প্রকল্পের কারণে বছরে প্রায় ২ দশমিক ৬ লক্ষ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমবে, লাভের হিসেব করলে যা প্রায় দুই হাজার গুন বেশি৷’’

মুম্বইয়ের অনেক নাগরিক বন বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ প্রকাশ ভইর বলেন, ‘‘মুম্বইয়ে আজ যা ঘটছে তাকে ‘উন্নয়ন’ বলা হচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের কাছে এটি ধ্বংসের তুল্য৷ উন্নয়ন বলতে শুধু মেট্রো কিংবা বড় মল বা বুলেট ট্রেন হতে পারে না৷ উন্নয়নের সংজ্ঞায় কি বন, পাহাড় আর গাছপালা ঢুকতে পারে না?’’

তিনি বলেন, ‘‘সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে টাকা রাখার মতো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা গাছও রেখে যেতে চাই৷ কিন্তু আমাদের তা করার অনুমতি নেই৷’’

শন সতীশ/জেডএইচ