‘সম্প্রচার নীতিমালা প্রত্যাহার'
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪
এইচআরডাব্লিউ তাদের বিবৃতিতে বলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন – যা গ্রহণযোগ্য নয়৷ তারা জানায়, সম্প্রচার নীতমালা সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গত ৬ই আগস্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷ এই নীতিমালায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি৷ যেমন, রাষ্ট্র বিরোধী, জাতীয় আদর্শ সমুন্নত রাখা, বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতি আস্থাবান, সহিংসতা, বিদ্রোহ প্রভৃতি৷ এইসব অস্বচ্ছ শব্দই প্রতিবেদন তৈরি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করে এইচআরডাব্লিউ৷
সংগঠনটির দক্ষিণ এশীয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘এই অস্বচ্ছ নীতিমালা সরকারকে তার বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে৷ আর এতে বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে যাবে৷''
ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সম্প্রচার নীতিমালার পক্ষ নিয়ে হুমকির সুরে কথা বলেছেন বলে মনে করেন ব্র্যাড অ্যাডামস৷ তিনি বলেন, ‘‘গত ২৮শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সীমা লঙ্ঘন না করতে বলেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘যে ডালে বসে আছেন সেই ডাল কাটবেন না৷ তাহলে নীচে পড়ে যাবেন৷' আমার মনে হয়, এই ইঙ্গিতই বুদ্ধিমানের জন্য যথেষ্ঠ৷''
তিনি বলেন, ‘‘নতুন নীতিমালা স্বাধীন সাংবাদিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ, সরকারের কাজের ভারসাম্য রক্ষা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য৷ নতুন নীতি সরকারের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে সরকারকে ক্ষমতাবান করেছে৷ তাই সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে এই নীতিমালা বাতিল করা, কারণ এই সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷''
এইচআরডাব্লিউ তাদের বিবৃতিতে বলে, বাংলাদেশ সরকার গত ৩রা সেপ্টেম্বর স্থানীয় চলচ্চিত্রে ইংরেজি ‘সাব টাইটেল' নিষিদ্ধ করেছ৷ নীতিমালায় বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ ও মিশ্রণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে৷
ব্র্যাড অ্যাডামস মনে করেন, ‘‘নতুন নীতিমালায় বাংলাদেশি সংস্কৃতি তুলে ধরার যতটা না উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷''
তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ যা দেখতে চায়, যা শুনতে চায়, যা পছন্দ করে তার ব্যবস্থা করতে হবে৷'' তিনি কথায়, ‘‘সরকার যেন সেই আগের সময়ে ফিরে যাচ্ছে – নাগরিকদের কি দেখতে হবে, বলতে হবে, পছন্দ করতে হবে – তা ঠিক করে দিচ্ছে৷ কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, সেসব দিন পার হয়ে গেছে৷ এখন ডিজিটাল যুগ৷''
এইচআরডাব্লিউ জানায়, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুশীল, নগারিক এবং রাজনৈতিক অধিকার কনভেশনে স্বাক্ষর করা একটি দেশ৷ তাই সরকারকে তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে৷ ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে বিবিসি-র নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে বিবিসি-র নীতিমালায় যা আছে, তা এখানে অনুপস্থিত৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিবিসি তার নীতিমালায় স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং বহুমতের কথা বলেছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের সরকার নীতিমালার মাধ্যমে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷''