খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিবাদ: কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত
অ্যামেরিকান ফুটবলে এনএফএল-এর সর্বশেষ মরশুমে কলিন কেপারনিক মার্কিন জাতীয় সংগীত বাজার সময় এক হাঁটু গেড়ে #টেকএনি প্রতিবাদ চালু করেন৷ খেলাধুলার ইতিহাসে প্রতীকী প্রতিবাদ এই প্রথম নয়৷
নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকারী এমিলি ডেভিসন
নিজের জীবন দিয়ে নারীদের ভোটাধিকারের দাবি জানিয়েছিলেন এমিলি ডেভিসন: এপসম ডার্বি ঘোড়দৌড় চলার সময় ছুটন্ত ঘোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান তিনি৷ সেই আঘাতেই তাঁর মৃত্যু ঘটে৷ এমিলির মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে ব্রিটেনে মহিলারা ভোটাধিকার পান৷
মোহাম্মদ আলী সামরিক সেবায় যোগদান করতে অস্বীকার করেন
বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী মার্কিন সেনাবাহিনীর বাধ্যতামূলক রংরুট হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে তৈরি ছিলেন না৷ সালটা ছিল ১৯৬৭ আর আলীর যুক্তি ছিল, প্রথমত তিনি মুসলিম; দ্বিতীয়ত তিনি যুদ্ধবিরোধী৷ ফলে আলীকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তাঁর সব খেতাব কেড়ে নেওয়া হয়৷ ১৯৭১ সালে সেই দণ্ডাদেশ বাতিল হওয়া অবধি আলী রিংয়ে নামতে পারেননি৷
ব্ল্যাক পাওয়ার মুষ্টি
১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিকে পুরুষদের ২০০ মিটার দৌড়ের পদক প্রদান অনুষ্ঠানে টমি স্মিথ ও জন কার্লোস ইতিহাস সৃষ্টি করেন তথাকথিত ‘ব্ল্যাক পাওয়ার স্যালুট’ দিয়ে৷ মাইকে তখন মার্কিন জাতীয় সংগীত বাজছে৷ বহু মার্কিনি দুই কৃষ্ণাঙ্গ দৌড়বীরের এই প্রতিবাদকে ভালো চোখে দেখেননি৷
আবদুল-রউফের প্রতিবাদ
কলিন কেপারনিকের দু’দশক আগেই এনবিএ-র বাস্কেটবল খেলোয়াড় আবদুল-রউফ খেলারআগে জাতীয় সংগীত বাজার সময় উঠে দাঁড়াতে অস্বীকার করেছিলেন৷ তিনি বলেন যে, তিনি মার্কিন পতাকাকে নিপীড়নের প্রতীক বলে গণ্য করেন৷ এছাড়া জাতীয় সংগীত বাজার সময় উঠে দাঁড়ানো তাঁর ইসলামি ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে মেলে না৷ এনবিএ আবদুল রউফ-কে সাসপেন্ড করে ও ম্যাচ প্রতি ৩১,০০০ ডলার জরিমানা করে৷ ক’দিনের মধ্যেই দু’পক্ষের মধ্যে আপোশ সম্ভব হয়৷
ক্যাথি ফ্রিম্যানের প্রতিবাদ
১৯৯৪ সালের কমনওয়েল্থ গেমসে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথি ফ্রিম্যান মহিলাদের ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড় জেতার পর ভিক্টরি ল্যাপের সময় যুগপৎ অস্ট্রেলীয় ও অ্যাবরিজিয়ানদের পতাকা বহন করে তাঁর উপজাতীয় উত্তরাধিকারকে সম্মান জানান৷ অলিম্পিক উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে তাঁর সমালোচনা করা হয়৷ তা সত্ত্বেও ফ্রিম্যান ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে, অর্থাৎ স্বদেশেও একটি স্বর্ণপদক জয় করার পর পুনরায় উভয় পতাকা বহন করেন৷
বোয়াটেং রুখে দাঁড়ালেন
ঘানা বংশোদ্ভূত ফুটবলার কেভিন-প্রিন্স বোয়াটেংয়ের জন্ম জার্মানিতে৷ ইটালির চতুর্থ ডিভিশন ফুটবল ক্লাব প্রো পাত্রিয়া-র বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে দর্শকদের বর্ণবাদী ধ্বনি দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বোয়াটেং মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান৷ বোয়াটেং তখন এসি মিলানের খেলোয়াড়৷ প্রো পাত্রিয়ার সমর্থকরা, বিশেষ করে বোয়াটেং-কে লক্ষ্য করে নানা বর্ণবাদী মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গী করছিল৷
‘আমি দম নিতে পারছি না’
‘আই কান্ট ব্রিদ’, কথাগুলো বলেছিলেন এরিক গার্নার৷ এক মার্কিন পুলিশ অফিসার তাঁকে মাটিতে চেপে ধরার পর এ কথা বলেছিলেন তিনি৷ এর পর অ্যামেরিকায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বা ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনেরও মূল্য আছে’ আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে৷ ২০১৪ সালে লেব্রন জেমস, কাইরি আর্ভিং, জ্যারেট জ্যাক ও কেভিন গার্নেট-এর মতো এনবিএ তারকারা এরিক গার্নারের শেষ কথাগুলি লেখা শার্ট পরে ঘটনার প্রতিবাদ জানান৷
#টেকএনি
২০১৬ সালের ঘটনা৷ স্যান ফ্রান্সিসকো ফর্টিনাইনার দলের কোয়ার্টারব্যাক কলিন কাপেরনিক মাঠে জাতীয় সংগীত বাজার সময় উঠে দাঁড়ানোর পরিবর্তে হাঁটু গেড়ে বসে পুলিশের নির্মমতা ও জাতিগত অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান৷ পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন৷ অপরদিকে কাপেরনিকের প্রতিবাদ থেকে #টেকএনি আন্দোলন জন্ম নিয়েছে৷