1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খুলছে স্কুল, অনলাইন-অফলাইন নিয়ে জটিলতা

২৭ অক্টোবর ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে স্কুল খুলছে। কিন্তু অনলাইন এবং অফলাইন ক্লাস একসঙ্গে কীভাবে হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

https://p.dw.com/p/42E9N
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: DW/P. Samanta

১৬ নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার। তবে অফলাইন ক্লাস, অর্থাৎ, স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পারবে শুধুমাত্র নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হবে অনলাইনে। দুইরকম ক্লাস আদৌ কি নেওয়া সম্ভব? গ্রামের স্কুলগুলিতে আদৌ কি সেই পরিকাঠামো আছে? উঠেছে প্রশ্ন। চলছে বিতর্ক।

সরকার বলেছে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের এখনই স্কুলে আসতে দেওয়া হবে না। তাদের যেমন অনলাইন ক্লাস চলছে, তেমনই চলবে। কিন্তু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে স্কুলে। অর্থাৎ অফলাইন। তবে কোনো ছাত্র স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে না চাইলে তার জন্য অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

বস্তুত, ভারতের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এভাবে ক্লাস শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। আইআইটি গান্ধীনগরের শিক্ষক অর্ক চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ''আইআইটি-তে এভাবেই ক্লাস শুরু হয়েছে। যাকে হাইব্রিড ক্লাস বলা হয়। কিছু ছাত্র ক্লাসে আসছে। কিছু ছাত্র বাড়িতে বা হস্টেলে বসে অনলাইনে সেই একই ক্লাসে যোগ দিচ্ছেন।'' বস্তুত, এর ফলে একসঙ্গে দুইটি সুবিধা হচ্ছে। যে ছাত্ররা এখনো ক্লাসে আসতে ভয় পাচ্ছে, তারা বাড়িতে বসেই পড়তে পারছে। আর ক্লাসে ভিড়ও কম হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানা যাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলে কি এভাবে হাইব্রিড ক্লাস করা সম্ভব? নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসে সমস্ত ছাত্র কি যোগ দিতে আদৌ পারবে? এ প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি স্কুলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সরকারি স্কুলে একটি ক্লাসে ৯০ জন ছাত্র থাকে। ফলে সব ছাত্রকে নিয়ে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে ক্লাস করা সম্ভব নয়। হয় ক্লাস ভেঙে দিয়ে দুইটি সেকশনে সকলকে পড়াতে হবে। নয়তো হাইব্রিড ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।''

সমস্যা হলো, শহরের স্কুলগুলিতে হাইব্রিড ক্লাসের পরিকাঠামো থাকলেও অধিকাংশ গ্রামের স্কুলে তা নেই। ফলে সব ছাত্রকে কীভাবে পড়ানো হবে, তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা আছে। পাশাপাশি একইসঙ্গে অফলাইনে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নিয়ে একই শিক্ষক অনলাইনে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস কীভাবে নেবেন, সে প্রশ্নও উঠছে।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তার স্কুলে এভাবে ক্লাস নিতে অসুবিধা হবে না। অনলাইনের জন্য চারটি ক্লাসরুম রাখা থাকবে। শিক্ষকরা সেখান থেকে ছোটদের ক্লাস নিতে পারবেন। আর উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের জন্য স্কুলের অন্য ক্লাসঘরগুলি খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষকরা সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস নিতে পারবেন।

কিন্তু মফসসল বা গ্রামের স্কুলগুলিতে এত সংখ্যক ক্লাসঘর নেই। নেই যথেষ্ট শিক্ষকও। শহরতলির এমনই এক স্কুলে শিক্ষক দেবলীনা চক্রবর্তী। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলে নতুন পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়া সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষকই নেই। বহু আসন শূন্য। ফলে যারা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস নেন, সেই শিক্ষকদেরই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নিতে হয়। একই সঙ্গে অনলাইন এবং অফলাইন ক্লাস তারা কীভাবে নেবেন?'' দেবলীনার সঙ্গে এ বিষয়ে সহমত দেবাশিস ভৌমিকও। তারও বক্তব্য, সামাজিক দূরত্ব মেনে উঁচু শ্রেণির ক্লাস ভেঙে পড়াতে হলে ওই একই শিক্ষকের পক্ষে অনলাইনে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া কার্যত অসম্ভব। তার উপর হাইব্রিড ক্লাস করতে হলে জটিলতা আরো বাড়বে।

দেবলীনার বক্তব্য, গত প্রায় দুই বছরে করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলে অনলাইন ক্লাস হলেও তার গুণগত মান মোটেই ভালো ছিল না। গ্রাম মফসসলের বহু ছাত্রছাত্রী স্মার্টফোনের অভাবে নিয়ম করে ক্লাস করতে পারেননি। শহরের স্কুল এবং শহরের ছাত্রদের সমস্যা না হলেও গ্রামের ছাত্ররা এই দুই বছরে যথেষ্ট পিছিয়ে পড়েছে। সরকার নতুন যে পদ্ধতির কথা বলছে, তাতেও গ্রামের ছাত্রদের সমস্যার সুরাহা হবে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের আরো চিন্তাভাবনা করা উচিত।

সরকার অবশ্য জানিয়েছে, স্কুলগুলিকে স্যানিটাইস করার কাজ শুরু হয়েছে। ছাত্র এবং শিক্ষকদের স্কুলে গিয়ে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লাস এবং অনলাইন-অফলাইন-হাইব্রিডের সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত সরকার কোনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)