1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেকের বিজয় কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ মে ২০১৮

খুলনা সিটি নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল হয়েছে৷ স্থগিত করে আবার ভোট হয়েছে এমন কেন্দ্র ১০টিরও বেশি৷ পাঁচটি কেন্দ্রে ব্যালট ফুরিয়ে গিয়েছিল৷ এমন নির্বাচনে জয়ী হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক৷

https://p.dw.com/p/2xm2M
Bangladesch Khulna - Talukder Khaleque
ছবি: bdnews24

ভোটগ্রহণের সময় ব্যালট বই ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভরার অভিযোগে তিনটি কেন্দ্রে ভোট বাতিলের কথাজানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুস আলী জানান, নির্বাচনে ব্যালট বই ছিনতাই করে সিল মেরে বাক্সে ভরার অভিযোগ পাওয়ায় তিনটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে৷ কেন্দ্রগুলো হলো: ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (২০২ নম্বর কেন্দ্র), লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (২৭৭ নম্বর কেন্দ্র) ও মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় (২৭৮ নম্বর কেন্দ্র)৷ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটের সময় ব্যালট সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে নিরালা স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টার পরই ব্যালট শেষ হয়ে যায়৷ ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্লাটিনাম স্কুল কেন্দ্রে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়৷ পুলিশ লাঠিচার্জ করে৷ সেখানে ৩৫ মিনিট ভোট স্থগিতও ছিল৷ তবে পরে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়৷ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্র দখল করে ভোট দিতে থাকলে ভোটারদের লাইন সৃষ্টি হয়৷ প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের গুলি বিনিময় হয়৷ এই ঘটনার কারণে সাড়ে তিনটার দিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়৷

হেদায়েত হোসেন

এই ব্যালট সংকট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন প্রার্থীর পক্ষে কিছু পোলিং অফিসার আগেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে রাখায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷

তবে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে নির্বাচন কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপত্র বা কার্ড নিয়ে৷ খুলানার সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন ডয়চে ভেলকে জানান, ‘‘দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাংবাদিকদের কার্ড বিলি করা হয়েছে৷ একটি দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গলায় সাংবাদিকের কার্ড (নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা) নিয়ে ভোটের সময় তৎপর থাকতে দেখা গেছে৷ রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেও কাজ হয়নি৷''

আরেক সাংবাদিক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এ নিয়ে খুলনা প্রেসক্লাবের নেতারা প্রতিবাদও জানান৷ এভাবে সাংবাদিকের কার্ড বিলি করায় প্রকৃত সাংবাদিকরা কেউ কেউ কার্ড পাননি৷'' তিনি বলেন, ‘‘দলীয় নেতা-কর্মীরা সাংবাদিকের কার্ড নিয়ে তৎপর ছিল এই অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে করেছে৷ অনেক অখ্যাত অনলাইনের সাংবাদিকের নামেও কার্ড দেয়া হয়েছে৷ আমার মনে হয়, দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সাংবাদিক সেজে কার্ড নিয়েছেন৷''

শামসুর রহমান

খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মল্লিক শুধাংশু অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দলীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের সময় সাংবাদিকের কার্ড নিয়ে তৎপর ছিলেন কিনা জানি না৷ তবে কার্ডের সংকট হয়েছিল৷ খুলনার বাইরের অনেক এলাকার সাংবাদিক কার্ডের জন্য আবেদন করায় এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার মনে হয়৷''

নির্বাচন কমিশন রাত ১২টা পর্যন্ত ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৩টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেছে৷ তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছেন ৯৪,৩৫২ ভোট আর বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ৫৯,৪৫৮ ভোট৷ তবে বেসরাকরি সূত্রের খবরে ১,৭৬,৯০২ ভোট পেয়ে খালেক জয়ী হয়েছেন আর মঞ্জু পেয়েছেন  ১,০৮,৯৬৫ ভোট৷

এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যর্থ হয়েছে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন৷

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও পুলিশি হামলার কারণে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাঁড়াতে পারেননি৷ সাধারণ ভোটাররাও ভোট দিতে পারেননি৷ এ কমিশন পুরোপুরি অযোগ্য৷ তাই ইসি পুনর্গঠন করতে হবে৷''

মল্লিক সুধাংশু

দেশে বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে৷ সরকারের তল্পিবাহক ইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে৷ নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে৷''

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘বিএনপি জনগণের মতকে মিসলিড করেছে৷ তারা সব সময় মনে করত, জনগণ তাদের ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ও মুখিয়ে আছে৷ কিন্তু খুলনা থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত৷ খুলনার অন্য অঞ্চলে আওয়ামী লীগের বিজয়ের রেকর্ড থাকলেও শহরাঞ্চলে তেমন ছিল না৷ এবার দেখুন ভোটের অবস্থা৷''

তিনি বলেন, ‘‘কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকই আজকের (মঙ্গলবার) সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি৷ নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়৷ বিএনপি ১০০ ভোটকেন্দ্র নিয়ে অহেতুক অভিযোগ তুলেছে, যার জবাব নির্বাচন কমিশন দিয়েছে৷''

নির্বাচন কমিশন খুলনার নির্বাচনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমেদ কমিশনের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩টিতে অনিয়মের কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে৷ বাকি ২৮৬টি কেন্দ্রে চমৎকার ভোট হয়েছে৷ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷''

এদিকে জয়ের ধারায় থাকায় রাতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খালেকেরসমর্থকরা আনন্দ, উল্লাস শুরু করেছেন৷ আর বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন৷ সকালে নির্বাচন শুরুর পর অবশ্য তিনি ভোট কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া, ব্যালটে সিল দেয়াসহ আরো কিছু অভিযোগ করেছিলেন৷