খাবারের অপচয় ঠেকিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা
বিশ্বের মোট খাবারের এক-তৃতীয়াংশ খাওয়া হয় না৷ এর একটি বড় অংশের জায়গা হয় আবর্জনার স্তূপে, যেখান থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়৷
এত খাবার নষ্ট!
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ফাও-এর ‘ফুড লস অ্যান্ড ফুড ওয়েস্ট প্রোজেক্ট’-এর প্রধান রোসা রোলে জানিয়েছেন, ২০১১ সালের এক হিসেব বলছে, বিশ্বে যত খাবার উৎপাদিত হয় তার এক-তৃতীয়াংশের স্থান হয় আবর্জনার স্তূপ৷’’ ওজন করলে এটি প্রায় ১৩০ কোটি টন খাবার৷
পরিবেশের ক্ষতি
জাতিসংঘের হিসেবে নষ্ট হওয়া খাবার প্রায় ৩ দশমিক ৬ গিগাটনের সমপরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে ছাড়ে৷ এর সঙ্গে খাবার উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বিষয়াদি, যেমন পশুপালন কিংবা সয়াবিন ও পাম তেল চাষের জন্য বনজঙ্গল কাটা ইত্যাদি ধরলে, খাদ্য উৎপাদন শিল্প কর্তৃক কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ অনেক বেশি হবে৷ হিসেব করলে তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরেই হবে৷
কারা বেশি অপচয় করে?
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলছে, একেকজন ইউরোপীয় বছরে গড়ে ৯৫ কেজির সমপরিমাণ খাবার নষ্ট করে৷ নিম্ন আয়ের দেশ, যেমন সাহারার দক্ষিণের দেশগুলোর নাগরিকদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি মাত্র ছয় কেজি৷
মাংস বেশি দূষণকারী
গ্রিনপিস বলছে, এক কেজি গরুর মাংসের কারণে পরিবেশে ১৩ কেজির সমপরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড ছড়িয়ে পড়ে৷ কারণ, একটি গরু দিনে গড়ে কয়েকশ’ লিটার মিথেন গ্যাস ছাড়ে৷ মিথেন হচ্ছে একটি গ্রিনহাউস গ্যাস, যা পরিবেশের জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে ২৫ গুন বেশি ক্ষতিকারক৷ জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বে উৎপাদিত মোট মাংসের প্রায় ২০ ভাগই অপচয় হয়৷
আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ
আবর্জনার স্তূপ থেকে নির্গত গ্যাস পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ বিজ্ঞানীরা আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরির কৌশল বের করেছেন৷ অনেক কোম্পানি সেটি ব্যবহারও করছে৷ যেমন, ‘ইউরোপিয়ান কম্পোস্ট নেটওয়ার্ক’-এর সদস্য প্রায় ৭০টি সংস্থা আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে৷ চাইলে সেই বিদ্যুৎ গ্রিডেও সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংস্থার এক কর্মকর্তা স্টেফানি সিবার্ট৷
কম্পোস্ট তৈরি
শুধু বিদ্যুৎই নয়, আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর বেঁচে যাওয়া তরলের সঙ্গে কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে উন্নতমানের কম্পোস্ট সার তৈরি করাও সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্টেফানি সিবার্ট৷
খাবার অপচয় রোধ
জার্মানির ‘ফুডশেয়ারিং’ নামে একটি সংস্থা জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন সুপারমার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেলে দেয়া খাবার সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে৷ খাবার অপচয় রোধ করাই তাদের মূল লক্ষ্য বলে সংস্থাটি জানিয়েছে৷