খাদ্যে বিষক্রিয়ার পাঁচ কারণ
বেশিরভাগ মানুষ জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও খাদ্যে বিষক্রিয়ার সমস্যায় আক্রান্ত হন৷ কীভাবে খাবার থেকে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে, কীভাবেইবা এর থেকে বাঁচবেন, জেনে রাখতে ছবিঘরটি দেখুন৷
অ্যাফলাটক্সিনস: বিষাক্ত ছত্রাক
ক্রান্তীয় ও উপক্রান্ত্রীয় অঞ্চলগুলোতে আর্দ্র আবহাওয়ায় সাধারণত অ্যাফলাটক্সিনস নামের বিষাক্ত এক ধরণের ছত্রাক জন্মে৷ বাদাম আর দানা জাতীয় খাবার এদের সবচেয়ে প্রিয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এই ধরণের ছত্রাকের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ২৫ ভাগ খাদ্য শস্য নষ্ট হয়৷
প্রাণঘাতী রোগের উৎস
খাদ্যে অ্যাফলাটক্সিনসের স্বল্প সংক্রমণও লিভার ক্যানসারের কারণ হতে পারে৷ এমনকি গর্ভে থাকা শিশুরও ক্ষতি করতে পারে এই ছত্রাক৷ উচ্চ মাত্রায় সংক্রমণে বিষক্রয়া ছড়াতে পারে মানুষের লিভারে, যার কারণে ঘটতে পারে মৃত্যু৷ রান্না করার পরও এরা ক্রিয়াশীল থাকতে পারে৷ তাই খাবারের ছবিটির মতো দেখতে কোনো ছত্রাক পেলে তা ফেলে দেয়াই নিরাপদ৷
স্যালমোনেলার যম উত্তাপ
বিভিন্ন প্রাণীর পাকস্থলীতে এই ধরণের জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে৷ কিন্তু সমস্যা হলো এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলেও অনেক সময় কোনো রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না৷ অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পর এই জীবাণুটি বিষক্রিয়া ঘটায়৷ মুরগী, ডিম, চা পাতা, তিলে এই জীবাণু থাকতে পারে৷ আশার কথা হলো স্যালমোনেলা উত্তাপ পছন্দ করে না৷ অর্থাৎ রান্না করার মাধ্যমে জীবাণুটি ধ্বংস করা যাবে৷
ই. কোলাই
এসেরিকিয়া কোলাই বা ই কোলাই শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়ার অতি কার্যকারিতা অনেকসময় বিভিন্ন সংক্রমণের কারণ হয়৷ বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য বিপদ ঘটাতে পারে ই কোলাই৷ এর বিষক্রিয়ায় প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা হয়৷
যারা সালাদ ভালোবাসেন
স্যালমোনেলার মতো কোলাই ব্যাকটেরিয়াও তাপে ধ্বংস করা যায়৷ ই কোলাই থাকতে পারে লেটুস কিংবা শসার মতো সবজিতেও৷ যা অনেকে সালাদ হিসেবে কাঁচা খেতে পছন্দ করেন৷ বাজার থেকে এ ধরণের সবজি যথাসম্ভব তরতাজা কেনাই কোলাই ব্যাকটেরিয়া থেকে নিরাপদ থাকার সহজ উপায়৷
বিপদজনক লিস্টেরিয়া
লিস্টেরিয়ার আছে টিকে থাকার অসামান্য ক্ষমতা৷ পাওয়া যায় সবখানেই, এমনকি মানুষের খাবারেও৷ শরীরে প্রবেশের পর এই জীবাণু রক্ত দূষিত করার পাশাপাশি মাথা ব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দেয়৷ বৃদ্ধ ও শিশুরা জীবাণুটি দ্বারা সংক্রমণের সবেচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে৷ তাপের মাধ্যমে লিস্টেরিয়া ধ্বংস করা যায়৷ তবে এজন্য কমপক্ষে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে অন্তত ১০ মিনিট ধরে খাবার রান্না করতে হবে৷
শুধু ব্যাকটেরিয়া নয়
পাকস্থলী সমস্যার অন্যতম একটি কারণ নরোভাইরাস৷ যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করা না হলে খাবারে এই ধরণের ভাইরাসে সংক্রমণ ঘটতে পারে৷ সবজি বা মাংসে এসব অনুজীব ১২ দিন পর্যন্ত টিকে থাকে৷ ভালো করে খাবার গরম করা, নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে ভাইরাস মুক্ত থাকা যায়৷
জানা থাকা ভাল
খাদ্যে দূষণ ঘটতে পারে উৎপাদন কিংবা পরিবহণ যে-কোনো স্তরেই, এমনকি ঘরের ভিতরেও৷ তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ সতর্কতা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নিরাপদে থাকতে পারেন যেকেউ৷ তারজন্য প্রথম শর্তটি হলো রান্নার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুবেন৷
রান্নাঘরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
কাঁচা মাংস আর কাঁচা সবজি কাটাকাটিতে একই ছুরি ব্যবহার করবেন না৷ বাজার থেকে হিমায়িত খাবার কিনলে তা আলাদা ব্যাগে রাখার চেষ্টা করবেন৷ মাংস কিংবা মাছ ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় অন্তত ১০ মিনিট ধরে রান্না করতে হবে৷ বাসি নয়, রান্না খাবারও যত দ্রুত সম্ভব খেয়ে নেয়া ভালো৷