1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাদ্য সংরক্ষণে সহায়তা করে পাম অয়েল

১৯ মে ২০২২

আমরা খেয়াল না করলেও আমাদের আশেপাশের অনেক খাদ্যপণ্যের মধ্যে পাম অয়েল রয়েছে৷ এই তেলের বৈশিষ্ট্যই এমন, যে গোটা বিশ্বে এর চাহিদা হু হু করে বেড়ে চলেছে৷

https://p.dw.com/p/4BXm7
ফাইল ফটোছবি: Lim Huey Teng/REUTERS

এত রকম পণ্যে কেন পাম অয়েল থাকে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের দিকে ফিরে তাকাতে হবে৷ গবেষণায় স্বাস্থ্যের জন্য ‘ট্রান্স ফ্যাট'-এর বিপদ জানার পর খাদ্য শিল্পজগতে দুশ্চিন্তা দেখা দিলো৷ ‘ট্রান্স ফ্যাট' খেলে তথাকথিত ‘খারাপ' কোলেস্টরালের মাত্রা বাড়ে এবং ‘ভালো' কোলেস্টরাল কমে যায়৷ ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ 

বেশিরভাগ উদ্ভিদজাত তেলে ‘আনস্যাচুরেটেড' বা অসম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে৷ সেগুলি তেমন স্থিতিশীল নয় এবং তরল৷ ফলে মার্জারিনের মতো খাদ্যের উপাদান হিসেবে সেগুলি উপযুক্ত নয়৷ এমন ফ্যাটের বৈচিত্র্য বাড়াতে ‘স্যাচুরেট' বা সম্পৃক্ত করা যায়৷ কিন্তু তার ফলে আবার ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট সৃষ্টি হয়৷ শরীর এমন চর্বি সহজে ত্যাগ করতে পারে না৷

সেখানেই পাম অয়েলের জাদু খাটানো যায়৷ বায়োকেমিস্ট্রি ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস চাক এ বিষয়ে বলেন, ‘‘পাম অয়েলের অন্যতম বড় সুবিধা হলো, সেটির মধ্যে বেশি মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে৷ অর্থাৎ অত্যন্ত স্থিতিশীল হওয়ায় সহজে গলে যায় না৷''

পাম অয়েল গাছের ফলের মধ্যবর্তী অংশ থেকে পাওয়া যায়৷ সেই গাছের মানানসই নাম অয়েল পাম৷ ফল এবং দানা – দুই জায়গা থেকেই তেল পাওয়া যায়৷ পাম অয়েল স্বাস্থ্যকর এক বিকল্প৷ যথেষ্ট ঘন হওয়ায় অনেক খাদ্য দীর্ঘদিন তাজা রাখতে সেটি ব্যবহার করা হয়৷ অন্য কোনো তেল তা পারে না৷ অস্বাস্থ্যকর ট্রান্স ফ্যাটের সেই ক্ষমতা নেই৷

৬৮ শতাংশ পাম অয়েল খাদ্যে ব্যবহার করা হয়৷ ২৭ শতাংশ কসমেটিক্স, ডিটারজেন্ট এবং অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য তৈরির কাজে লাগানো হয়৷ এমন বহুমুখী ব্যবহারের সুবিধার কারণে ১৯৯০ সাল থেকে পাম অয়েলের উৎপাদন প্রায় সাত গুণ বেড়ে গেছে৷

এই গাছ মূলত আফ্রিকার পশ্চিমে দেখা যেতো৷ আজ গোটা বিশ্বে পাম অয়েল উৎপাদনের প্রায় ৮৫ শতাংশের ভাগিদার ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া৷ ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী পাম অয়েল লাখ লাখ মানুষের দারিদ্র্য দূর করছে৷ মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলেনা ভারকি মনে করিয়ে দেন, ‘‘আমাদের সংস্কৃতির অংশ, আমাদের পরিচয়৷ ৫০ রিংগিতের নোটেও অয়েল পামের ছবি রয়েছে৷''

এই গাছের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য সত্ত্বেও একটি সমস্যা রয়েছে৷ একমাত্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে রেন ফরেস্ট এলাকায় এই গাছ বাড়তে পারে৷ পাম অয়েলের বেড়ে চলা চাহিদার কারণে এমন অরণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ মাত্র এক বছরেই প্রায় ইসরায়েলের আয়তনের সমান রেন ফরেস্ট উধাও হয়ে গেছে৷

রেন ফরেস্টের ধ্বংসলীলার কারণে আদিবাসিরাও বিতাড়িত হয়েছে৷ মানবাধিকার কর্মীরা পাম অয়েল প্লান্টেশনে শ্রমিকদের শোষনেরও অভিযোগ করেন৷ অরণ্য নিধনের কারণে সুমাত্রা টাইগার থেকে ওরাংওটানের মতো অসংখ্য লুপ্তপ্রায় প্রাণীর আবাসও ধ্বংস হচ্ছে৷

তবে সমস্যা শুধু রেন ফরেস্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ পিট এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ অয়েল পাম চাষের কারণে ইকোলজির জন্য মূল্যবান এমন জলাভূমিও শুকিয়ে গেলে দাবানল তথা বায়ুদূষণের আশঙ্কা রয়েছে৷

প্রতিবেদন: আডাম লেভি/এসবি

অন্বেষণ – পর্ব ৪৬৬