1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খরার কবলে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ

২৫ জানুয়ারি ২০১১

ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ বালি পর্যটকদের স্বর্গভূমি বলে খ্যাত৷ কিন্তু পানীয় জলের দূষণ ও স্বল্পতা ইত্যাদি কারণে খুব বেশিদিন হয়তো এই সুনাম আর টিকে থাকবেনা৷ বিশেষ করে হোটেল, সুইমিং পুল, গল্ফ খেলার জায়গাগুলি খরার কবলে পড়েছে৷

https://p.dw.com/p/102OG
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ

পর্যটকরা যখন বালির সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হোটেলগুলিতে তাঁদের ছুটি উপভোগ করেন, তখন স্থানীয় বাচ্চারা নদী ও পুকুরের নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে খেলাধুলা ও হুটোপাটি করে৷ অজান্তেই শিকার হয়ে পড়ে অনেক অসুখবিসুখের৷

ইন্দোনেশিয়ায় দূষিত জল শোধনের কোনো ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে৷ কল-কারখানা, চাষের খেত ও মানুষের বাড়িঘর থেকে দূষিত পানি নদী ও পুকুরে গিয়ে পড়ে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউ এইচ ও'র তথ্য অনুযায়ী ইন্দেনেশিয়ায় বছরে পঞ্চাশ হাজারের মত মানুষ দূষিত পানি বাহিত রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে৷ অসংখ্য মানুষ দূষিত পানির কারণে পেটের অসুখ ও নানাবিধ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ সাহায্য সংস্থা বালিফোকাসের মুখপাত্র ইউইউন ইসমাভাটি মনে করেন, এই অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নোংরা পানি মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ স্থানীয়দের অনেকেই এত অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন৷ তাদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাও খাপ খাইয়ে নিচ্ছে দূষিত পানির সঙ্গে৷ পর্যটকদের ক্ষেত্রে অবশ্য এ কথা প্রযোজ্য নয়৷ তবে দেশের বহু মানুষও বিভিন্ন ধরনের পেটের অসুখ বিসুখে ভুগছে৷''

দূষিত জলের কারণে শুধু যে স্বাস্থেরই ক্ষতি হচ্ছে তাই নয়, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটি৷ ইসমাভাটি বলেন,‘‘বিশেষ করে বাচ্চারা অসুখের কবলে পড়ে বেশি৷ যার ফলাফল ভোগ করতে হয় মা বাবাকেও৷ তারা কাজে যেতে পারেননা, উপার্জনও বন্ধ থাকে৷ বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারেনা৷ উচ্চ শিক্ষার দ্বারও রুদ্ধ হয়ে যায়৷ অর্থাৎ দূষিত পানি গোটা পরিবারকেই আর্থিক দিক দিয়ে কাবু করে ফেলে৷''

BdT Indonesien UN Klimakonferenz Bali Klimawandel
বালির জিমবারান সমুদ্র সৈকতছবি: AP

পর্যটকের দ্বীপ বালিতে ২৭ লক্ষ মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু সেখানে ৩৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন৷ তার ওপর প্রতি বছর ৪০ লাখেরও বেশি পর্যটক আসেন দ্বীপটিতে৷ কতটা পানি তারা ব্যবহার করেন, সে সম্পর্কে অনেক পর্যটকেরই ধারণা নেই৷ এক পর্যটক বলেন, ‘‘মনে হয়না খুব বেশি পানি খরচ করি না আমি৷ খুব বেশি হলে ৪০ লিটার৷ খুব অল্প পানিতে স্নান সেরে নেই৷'' আরেক পর্যটক বলেন, ‘‘স্নান ও পানি পান করা, সবমিলিয়ে ১০০ লিটার খরচ হয় প্রতিদিন''৷ এছাড়া পর্যটক এলাকায় হোটেলের প্রত্যেকটি ঘরে প্রতিদিন ৫০০ লিটারের মত পানি খরচ হয়, জানায় সাহায্য সংস্থা বালিফোকাস৷ দূষিত পানি ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে সংস্থাটি৷ এই সংস্থার মতে স্থানীয় জনসাধারণের চেয়ে অনেক বেশি পানি খরচ করে পর্যটকরা৷ সুইমিং পুল ও বাগানের জন্যও কম পানি খরচ হয়না৷ এই ভাবে চললে ‘দেবতার দ্বীপ' বলে কথিত এই জায়গাটি পর্যটকহীন হয়ে পড়বে৷ মনে করেন ‘বালিফোকাসের ইউইউন ইসমাভাটি৷ তাঁর ভাষায় ‘‘এই ভাবে চললে ২০ বছর পর আমাদের আর ভূস্বর্গ বলে মনে করা হবেনা৷ কোনো স্বর্গের এত দুর্গন্ধ হয়না৷ আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে এই স্বর্গের অস্তিত্ব আর থাকবে কিনা৷''

বালি দ্বীপটিকে রক্ষা করার জন্য ‘বালিফোকাস' ব্রেমেনের একটি সংস্থার সঙ্গে দূষিত পানি শোধনের ব্যাপারে এক গবেষণা প্রকল্প গড়ে তুলেছে৷ ২০০৯ সালে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য গোল্ডমান প্রাইজ পেয়েছেন ইউইউন ইসমাভাটি৷ ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের ছয় কৃতি ব্যক্তিত্বকে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে৷

প্রতিবেদন : রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন