1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খনির কাছে থাকলে বিপদ সম্পর্কে সাবধান!

২ জুলাই ২০১৯

আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিবেশ সংরক্ষণের মানদণ্ডের ফলে খনিতে প্রাকৃতিক সম্পদ তোলার কাজ অনেক পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু পেরুতে লাগামহীন খননকার্যের ফলে সাধারণ মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3LPfO
Kongo Goldhandel
ছবি: Robert Carrubba

দূষণের শিকার শিশুরা

সেরো দে পাস্কো শহরের প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চাদের দেখলে বোঝা যায় না, তাদের শরীরে কী পরিমাণ বিষ রয়েছে৷ স্কুলের প্রধান ওয়াল্টার তিতোবাল তোরিবিও জানালেন, শুরুতে তাদের শেখা ও মনোনিবেশের সমস্যা চোখে পড়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চারা হাঁচলে প্রায়ই তাদের নাক থেকে রক্ত পড়ে৷ বেশি সময় ধরে মনোযোগ দিতে তাদের অসুবিধা হয়৷ আমি নিশ্চিত. তাদের রক্তে সীসার কারণে এমনটা হচ্ছে৷''

স্কুল ভবনটি সেরো দে পাস্কো শহরের পরিচিত গহ্বরের ঠিক পাশেই অবস্থিত৷ বিশাল এই খনিতে বিশ্ববাজারের জন্য দস্তা, রুপো ও সীসা তোলা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের কাঁচামাল কোম্পানি গ্লেনকোর এই খনির মালিক৷

কিছুকাল আগে এই কোম্পানি এখানে বেশ কয়েক'শো কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে৷ তবে স্থানীয় মানুষকে আরও বড় মূল্য চোকাতে হচ্ছে৷ সেরো দে পাস্কো শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত৷ এখানকার বাসিন্দারা সারা জীবন ধরে কলের পানির মাধ্যমে হেভি মেটাল বা ভারি ধাতু গ্রহণ করেন৷ অনেকেই এ বিষয়ে সচেতন৷

ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র

পাশেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে৷ বাইরে ‘সীসা অভিযান' লেখা বোর্ড শোভা পাচ্ছে৷ সেখানে সবাই শরীরে হেভি মেটালের মাত্রা পরীক্ষা করাতে পারেন৷ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী হানিনা কিসপেরতেন্সে বলেন, ‘‘সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্যালিয়াম ও পারদ – সব হেভি মেটালের ক্ষেত্রে আমরা বাড়তি মাত্রা পরিমাপ করি৷ সব বাসিন্দার ক্ষেত্রে বিষের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড ছাড়িয়ে যায়৷''

পেরুর সাংবাদিকরা সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করেছেন৷ কিছু শিশুর শরীরে চার গুণ বেশি সীসা প্রবেশ করায় আজ তাদের হুইলচেয়ারে আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে৷ অনেকের শরীরে অপারেশনের চিহ্নও রয়ে গেছে৷

এখানকার পাহাড়ের উপর প্রায় এক সেন্টিমিটার পুরু বিষাক্ত কণার স্তর রয়েছে বলে শোনা যায়৷ কাছেই ধাতু গলানো হয়৷ ইয়োলান্দা বলেন, লা ওরোয়া শহরে কারখানার চিমনি অবশ্য কিছুটা কম পরিমাণ সালফার ডাই অক্সাইড, সীসা ও আর্সেনিক নির্গমন করছে৷ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ধাতু গলানোর প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছিল৷ লা ওরোয়া শহরের বাসিন্দা হিসেবে ইয়োলান্দা সুরিতা বলেন, ‘‘সে সময়ে আমাদের কাছে এটা স্বাভাবিক ছিল৷ আমরা তো কখনো শহরের বাইরে যাইনি৷ তাই মনে হতো, সব জায়গায় এমনটাই দেখা যায়৷'' 

আজও শহরের বাসিন্দাদের বায়ু দূষণের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে৷ অনেকেরই ক্রনিক রোগ রয়েছে৷ তাছাড়া রক্তের মধ্যে চার গুণ বেশি সীসার মাত্রাও ধরা পড়ে৷ স্নায়ুরোগে ক্ষতিগ্রস্ত পাবলিতো-কে সঙ্গে নিয়ে ইয়োলান্দা পরিবেশ সংক্রান্ত মানদণ্ডের উন্নতির জন্য লড়াই করেছেন৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাফল্য আসেনি৷ লা ওরোয়া শহরের বাসিন্দা হিসেবে পাবলো মিগেল মার্তিনেস বলেন, ‘‘প্রথমদিকে মানুষ আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলতো৷ তবে তাতে আমাদের কিছু এসে যায়নি৷ কারণ ইয়োলান্দার মতো মানুষের সহায়তা ছিল৷ ক্যাথলিক গির্জা সংগঠন ও বিদেশি সংগঠনও আমাদের সাহায্য করেছে৷ ফলে অনেক বছর পর রাষ্ট্র হিসেবে পেরু আমাদের বিষক্রিয়ার ঘটনা ও আমাদের রোগব্যাধীকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷''

গণস্বাস্থ্য বনাম অর্থনীতি

সে কারণে লা ওরোয়া শহরের  ধাতু গলানোর কারখানার  কাজ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে সেটি পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি৷ ফলে এখনো হেভি মেটাল আশেপাশের এলাকাগুলিকে দূষিত করছে৷ তাই বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর৷ কারণ এই কারখানার সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে৷ এমনকি অনেক পরিবারের মধ্যেও এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে৷

যারা এই পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন, পেদ্রো বারেতো সব সময় তাঁদের পক্ষ নিয়েছেন৷ তিনি পেরুর খনি অঞ্চলের কার্ডিনাল বা ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা৷ বারেতো বলেন, ‘‘ক্যাথলিক গির্জা মোটেই খনির বিরোধী নয়৷ কিন্তু আমরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন খননকার্যের বিরোধিতা করি, যার আওতায় রাষ্ট্র হিসেবে পেরু বিদেশি কোম্পানিগুলিকে চুটিয়ে মুনাফা করতে দেয়৷ তারা মানুষ ও পরিবেশের তোয়াক্কা না করে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে৷''

গ্লেনকোর খনি কোম্পানি আমাদের সাক্ষাৎকারের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি৷ পেরুর সরকারও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি৷ বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের লোভ মেটানোর অন্যতম দৃষ্টান্ত এই স্থান৷ সেখানে খননকাজের ফলে মানুষের শরীরে বিষ প্রবেশ করছে৷

মাটিয়াস এবার্ট/এসবি