ক্লাব, মদ, জুয়া নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী,  সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে এসব ক্লাবের সদস্য হন, এত টাকা তারা কোথায় পান, এসব ক্লাবে যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয় তার কতটা বৈধ- এসব প্রশ্নও এসেছে সাংসদদের কথায়৷

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্যদের অনির্ধারিত আলোচনায় বৃহস্পতিবার কিছুক্ষণের জন্য সংসদ সরব হয় ওঠে৷অধিবেশনে দিনের কর্মসূচির শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু৷ পরে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ আলোচনায় অংশ নেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন৷

আলোচনার শুরুতে চুন্নু বলেন, "কয়েকদিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, উত্তরা বোট ক্লাব, কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়৷ এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হয়? আমরাতো ভাবতেই পারি না৷ সারাজীবন এত ইনকামও করি না৷''

রাজধানীর কয়েকটি ক্লাবের নাম ধরে জাতীয় পার্টির এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, "এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়, জুয়া খেলা হয় ৷ বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে ৷ সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয় ৷ লাইসেন্স নিয়ে যদি খায়, তবে তো এত মদ বিক্রি হওয়ার কথা নয় ৷ সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হয়? এত টাকা কোথা থেকে আসে?”

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ‘ডিজে পার্টি' বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চুন্নু বলেন, "গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়, ড্যান্স, নেশা করা হয়, এসব আমাদের আইনে সংস্কৃতিতে, ধর্মে নেই৷ "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন- কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হয়? এসব দেখতে হবে৷”

রোববার এক ফেসবুক পোস্টে ‘হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার' অভিযোগ সামনে আনেন চিত্রনায়িকা পরীমনি৷

সোমবার সাভার থানায় ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেন চিত্রনায়িকা৷ মামলার প্রধান আসামি উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ৷ এজাহারের আরেক আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমিও বোট ক্লাবের সদস্য৷

পরীমনির অভিযোগ, গত ৮ জুন রাতে অমি তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে' বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা' চালিয়েছিলেন৷

আবাসন ব্যবসায়ী নাসির ও একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক অমিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ বোট ক্লাবের সদস্য শাহ এস আলমকেও ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷

পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ তুরাগ তীরের ওই ক্লাবের সভাপতি৷ তার সভাপতিত্বে ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাতেই তিনজনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়৷

চুন্নুর বক্তব্যের পর শেখ সেলিম ফ্লোর নিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন৷

তিনি বলেন, " বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ জিয়াউর রহমান আবার দিয়েছিল৷ যারা অপরাধের শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত৷

বিএনপির হারুনুর রশীদ এ সময় স্পিকারের কাছ থেকে ফ্লোর নিয়ে বলেন, "আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন৷ কিন্তু সিনিয়র একজন সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? ”

"বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন৷ এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে৷ কোনো মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই৷ জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন, যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব ৷” 

হারুন বলেন, "এই সব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত ৷ আমি চ্যালেঞ্জ করছি ৷ পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয় ৷ প্রধানমন্ত্রী কোনো দলের নন, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ৷ এসব খুঁজে দেখা হোক ৷” 

বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ রংপুরের ইসলামিক বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করার দাবি জানান৷

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)