ক্যাসিনির শনির দশা
ক্যাসিনি মহাকাশযান গত বিশ বছর ধরে মহাকাশের দূর দূর প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে৷ এখন তার অন্ত ঘটতে চলেছে – কিন্তু তার আগে ক্যাসিনি শনিগ্রহের বলয়গুলি পার হয়েছে৷ সে এক বিপদসঙ্কুল যাত্রা৷
ক্যাসিনি বেঁচে আছে!
ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায়, শনি গ্রহ ও তার বলয়গুলির মধ্য দিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ক্যাসিনি ৷ বলয়গুলির ভিতর দিয়ে যাবার সময় ক্যাসিনি আর মিশন কন্ট্রোলের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না৷ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অবধি ক্যাসিনি আরো ২১ বার এইভাবে শনির বলয় পার হবে, যার ফলে মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে ক্যাসিনির স্থান বাঁধা৷
একটি গ্রহের জন্ম হয় কিভাবে?
‘‘কোনো মহাকাশযান এই অনন্য এলাকা দিয়ে আগে যাত্রা করেনি,’’ নাসার প্রশাসক টমাস জুরবুখেন বলেছেন৷ ‘‘ক্যাসিনির সবশেষের দুঃসাহসী উপক্রমাগুলি থেকে আমরা যে তথ্য পাব, তা থেকে আমরা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারব, সুবিশাল গ্রহ ও গ্রহপুঞ্জগুলি কিভাবে জন্ম নেয়৷ এভাবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আবিষ্কার চলবে৷’’
বিধ্বংসী কণিকা
গ্যাসে তৈরি সুবিশাল শনি গ্রহ ও তার বলয়দের মধ্যে প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার বা ১,৪৯০ মাইলের ফারাক৷ ‘‘আমাদের হিসেব অনুযায়ী, এই ফাঁকটিতে এমন কোনো বড় কণা বা কণিকা নেই, যা ক্যাসিনির ক্ষতি করতে পারে,’’ বলেছেন নাসার প্রোজেক্ট ম্যানেজার আর্ল মেইজ৷ ‘‘আমরা জানি না এমন কিছু কিছু জিনিস আছে – যে কারণে আমরা যাত্রার শেষে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ গবেষণা করছি৷’’
অতিকায় গোলাপ
বিশ বছর ধরে ক্যাসিনি চমকপ্রদ সব ছবি পাঠিয়ে আসছে৷ এই ছবিটিতে শনিগ্রহের উত্তর মেরুর উপর ঘুরন্ত ঘূর্ণিঝড় দেখা যাচ্ছে৷ মাপজোক করে দেখা গেছে যে, ঘূর্ণিটির আবর্তের ব্যাস ২,০০০ কিলোমিটার (১,২৪৩ মাইল)৷ অপরদিকে এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৫৪০ কিলোমিটার বা ৩৩৫ মাইল৷
‘ছোটিসি ইয়ে দুনিয়া...’
ক্যাসিনির তোলা এই ওয়াইড অ্যাঙ্গল ছবিটিতে আমাদের পৃথিবীকে শুধু একটা ফুটকি হিসেবে দেখা যাচ্ছে (তাই অ্যারো দিয়ে দেখাতে হয়েছে)৷ ক্যাসিনি তখন পৃথিবী থেকে মাত্র ১৪৪ কোটি কিলোমিটার দূরে৷
শনির ‘চন্দ্র’
গরম থেকে ঠাণ্ডা: শনিগ্রহের মিমাস ও থেটিস ‘চন্দ্র’ দু’টিতে তাপমাত্রার এক আশ্চর্য নকশা দেখা যায়৷ ছবিটির ডাটা পাঠিয়েছে ক্যাসিনির ইনফ্রা রেড ক্যামেরা৷
মহাশূন্যে জীবনের সন্ধান?
শনিগ্রহের এনসেলেডাস উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত তথ্যও পৃথিবীতে পাঠিয়েছে ক্যাসিনি৷ এই হিমশীতল উপগ্রহটিতে জলের অণু আছে, বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস৷ কাজেই এখানে জীবনেরও উৎপত্তি হতে পারে অথবা হয়ে থাকতে পারে – অন্তত নীতিগতভাবে৷
মিথেন গ্যাসের হ্রদ
ক্যাসিনির চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারগুলির মধ্যে শনিগ্রহের টাইটান উপগ্রহের উপর অবস্থিত তরল মিথেন গ্যাসের হ্রদগুলিও পড়ে৷ শনির বৃহত্তম উপগ্রহটি আদতে আবিষ্কার করেন ওলন্দাজ জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টিয়ান হয়গেন্স – ১৬৫৫ সালে৷ ক্যাসিনি দশ বছরের বেশি সময় ধরে টাইটানের চারপাশে ঘুরেছে৷
মেঘের নদী
ক্যাসিনির ওয়াইড অ্যাঙ্গল ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি জুড়ে এই ইমেজটি সৃষ্টি করা হয়েছে: দেখলে মনে হবে যেন একটি বড় নদী৷ ছবিতে কিন্তু বস্তুত শনিগ্রহের উত্তরার্ধের মেঘপুঞ্জ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে৷
শেষের সে দিন
সব কিছু পরিকল্পনা মতো চললে, ক্যাসিনির জীবনাবসান ঘটবে ২০১৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে৷ ১২,৬০০ কিলোগ্রাম ওজনের মহাকাশযানটি শনিগ্রহের দিকে তার নিয়ন্ত্রিত পতন শুরু করবে – কিন্তু শেষ মুহূর্ত অবধি পৃথিবীতে ডাটা পাঠাতে থাকবে৷ ক্যাসিনি তার বিশ বছরের জীবনের শেষপাদে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য আবিষ্কার করবে, বলে নাসার গবেষকদের আশা৷