1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হংকংয়ের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

৬ এপ্রিল ২০২২

বেইজিংয়ের আস্থা না থাকার কারণেই হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে অনেকে মনে করেন৷ তার উত্তরাধিকারী হিসেবে কাকে বেছে নিতে চাইছে চীন তা নিয়ে চলছে জল্পনা৷

https://p.dw.com/p/49Xld
ক্যারি ল্যাম আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না ছবি: Robert Ng/ZUMAPRESS.com/picture alliance

২০১৭ সালে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচিত হওয়ার পর ‘সত্যিকারের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের সব অংশের সমর্থন আদায়ের' ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্যারি ল্যাম৷ কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা৷ হংকংয়ের জনমত গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিওআরইআই-এর জরিপে দেখা গেছে ল্যামের জনসমর্থনের হার বর্তমানে মাত্র ২৬ দশমিক ছয় শতাংশ৷ এমনকি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা ১৮ শতাংশের নেমে যায়, যা ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে চীনের কাছে হংকং হস্তান্তরের পর কোনো প্রধান নির্বাহীর সর্বনিম্ন রেটিংয়ের রেকর্ড৷

গত সোমবার ল্যাম এক ঘোষণায় বলেছেন পরিবারকে সময় দিতে আসছে নির্বাচনে আর লড়বেন না তিনি৷ যদিও অনেক বিষেশজ্ঞ মনে করেন এর পেছনে মূল কারণ বেইজিং৷ পিওআরআই-এর উপ প্রধান নির্বাহী কিম ওয়াহ-চুং বলেন, ‘‘আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ক্যারি ল্যামের পুনঃনির্বাচনে তার প্রতি বেইজিংয়ের সমর্থন নেই৷'' তার মতে ২০১৯ সালের ‘প্রত্যর্পণ আইন' নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয় তাতে হংকংয়ের মানুষের কাছে ‘চীনের সুনাম' নষ্ট হয়েছে৷ সেটি বুঝতে পেরে ল্যামের উপর নাখোশ হয়েছে বেইজিং৷ 

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ল্যাম বলেছেন, ৩০ জুন তিনি হংকং সরকারের সঙ্গে নিজের ৪২ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন৷ চীনা কর্তৃপক্ষ তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি৷

যে কারণে থাকছেন না

২০১৯ সালে প্রত্যর্পন আইন প্রস্তাবের পর হংকংয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়৷ এই আইনে বলা হয়েছিল হংকং থেকে সন্দেহভাজন অপরাধীদের চীনের কাছে হস্তান্তর করা যাবে৷ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উপর দমন-পীড়ন চালায় সরকার৷ গ্রেপ্তার করা হয় নাগরিক সমাজ ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের৷ যে ল্যাম ব্যাপক অজনপ্রিয় এখন হংকংয়ের মানুষের কাছে৷

অন্যদিকে যথাযথভাবে করোনা সংকট সামাল দিতে না পারার কারণে ল্যামের উপর অসন্তুষ্ট বেইজিং৷ চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ইভান চোই-এর মতে, ‘‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে হংকংয়ের সরকারকে দায় দিয়েছিলেন৷ আমার মনে হয় তারপর থেকেই হংকংয়ের প্রত্যেকে বুঝে নিয়েছেন যে ল্যামের পুনঃনির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ৷''

চোই বলেন, চীনের রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী কোভিড ব্যর্থতার জন্য দায়িত্বশীল প্রশাসনকে সরিয়ে দেয়ার ঘটনাই স্বাভাবিক৷ দেশটির মূল ভূখণ্ডেও প্রাদেশিক প্রধান বা মেয়রদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার৷

পাশাপাশি অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, আস্থাভাজন নেতৃত্ব খুঁজে পেতে বেইজিংকে বেগ পেতে হলেও জনসমর্থন তলানিতে থাকার কারণে ল্যামকে আগামী নির্বাচনে সামনে আনতে চাইছে না চীন৷ এসব বিবেচনায় বেইজিংয়ের সঙ্গে আলাপের প্রেক্ষিতে ল্যাম সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে এসওএএস চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্টিভ সাং৷

উত্তরসূরী কে হবেন

৮ মের নির্বাচনে ল্যামের উত্তরসূরী কে হবেন তা এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না৷ হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনে ভোট দেয় ১৫০০ জনের একটি কমিটি৷ তাতে আছেন আইন প্রণেতা, বিভিন্ন শিল্পের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে চীন পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরাও৷

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, হংকং সিটির প্রধান সচিবের দায়িত্বে থাকা জন লি সম্ভাব্যদের একজন৷ ২০১৯ সালের বিক্ষোভের সময় তিনি হংকংয়ে নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ বর্তমান অর্থ সচিব পল চ্যানকেও এগিয়ে রাখছেন কেউ কেউ৷

ইভান চোই মনে করেন চীন আগামী পাঁচ বছর হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তায় বেশি জোর দিবে৷ কাজেই এই কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা যার রয়েছে তাকেই প্রধান নির্বাহী হিসেবে দেখতে চাইবে তারা৷ অন্যদিকে হংকংয়ের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন চাইলে চীনকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে পল চ্যানের মতো উপযুক্ত ব্যক্তিকেও বেছে নেয়া হতে পারে৷

তবে চোইয়ের মতে, সবশেষ প্রধান নির্বাহী নির্বাচন থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে এই পদের জন্য জনপ্রিয়তা বেইজিংয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ বরং আনুগত্যকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় তারা৷ যদি লি নির্বাচিত হন তাহলে সেটি আবারও প্রমাণিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

লির প্রধান নির্বাহী হওয়ার এমন সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন অনেক বিশ্লেষক৷ কারণ তিনি ক্ষমতায় আসলে ক্যারি ল্যামের চেয়েও নির্দয়ভাবে নাগরিক সমাজের উপর দমন-পীড়ন চালাবেন বলে উল্লেখ করেন ইন্টার পার্লামেন্টারি অ্যালায়েন্স অন চায়না নামের একটি সংগঠনের হংকং সমন্বয়ক গ্ল্যাসিয়ার কং৷

উইলিয়াম ইয়াং/এফএস