ক্যান্সার কেড়ে নিল ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেলের জীবন
১৯ এপ্রিল ২০২২হুট করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মোশাররফকে৷ সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷ সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনারের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর৷
বাংলাদেশের হয়ে ৫টি ওয়ানডে খেলা মোশাররফ ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন দারুণ সফল৷ সবশেষ মাঠে নামেন তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে৷ বিপিএল চলাকালে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ টুর্নামেন্ট শেষে অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক দফা জ্ঞান হারালে পরীক্ষা করানো হয় নানারকম৷ তাতেই ধরা পড়ে, তার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে টিউমার৷ দ্রুতই তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে অস্ত্রোপচারও সফল হয়৷
প্রায় এক বছর ধরে চিকিৎসার পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠেন রুবেল৷ টুকটাক মাঠে আসাও শুরু করেন সেসময়৷ আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার আশাও করেন কিন্তু কোভিডের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের খেলাধুলা৷ ওই বছরের নভেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ পরীক্ষায় ধরা পড়ে, টিউমার ফিরে এসেছে আবার৷
এরপর দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসা চলতে থাকে৷ কেমোথেরাপি দেওয়া হয় দফায় দফায়৷ গত কয়েক মাস ধরেই একদমই ছিলেন শয্যাশায়ী৷ গত মাসে অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে৷ সেখানে বেশ কিছুদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার পর অবস্থার একটু উন্নতি হয়৷
গত ১০ এপ্রিল ফেসবুকে একটি পোস্টে নিজের জন্য দোয়া চান মোশাররফ রুবেল৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিই তার শেষ উপস্থিতি৷ দিন তিনেক আগে তার স্ত্রী চৈতি ফারহানা ফেসবুকে জানান, বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে মোশাররফকে৷ কিন্তু আচমকা শরীর খারাপ করার পর এবার পাড়ি দিলেন ওপারে৷
২০০৮ সালে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মোশাররফের৷ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে এক উইকেট নেওয়ার পর বাদ পড়েন৷ দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৬ সালে ফিরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলে ৩ উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন দলের জয়ে৷ কদিন পর আরেকটি ওয়ানডে খেলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে৷ সেটিতে উইকেটশূন্য থাকার পর জায়গা হারান দলে, আর ফেরা হয়নি৷
ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে তার ক্যারিয়ার প্রায় দুই দশকের৷ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচ খেলে ৩৯২ উইকেট তার৷ সেরা বোলিং ১০৫ রানে ৯ উইকেট৷ ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন যথেষ্ট কার্যকর৷ ২টি সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটিতে রান করেছেন ৩ হাজার ৩০৫৷
লিস্ট ‘এ' ক্রিকেটে ১০৪ ম্যাচে তার উইকেট ১২০টি, ৮ ফিফটিতে রান দেড় হাজারের বেশি৷ টি-টোয়েন্টিতে ৫৬ ম্যাচে উইকেট ৬০টি৷
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তার লড়াইয়ে নানাভাবে পাশে থেকেছে ক্রিকেট বোর্ড, বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষ ও সংগঠন৷ কঠিন এই লড়াইয়ে নিরন্তর সঙ্গী ছিলেন তার স্ত্রী৷ কিন্তু সবার প্রচেষ্টা আর ভালোবাসাকে ছিন্ন করে চরম নিয়তি মেনে নিতে হলো রুবেলকে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)