1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরীয় উপকূলে উত্তেজনা কেন?

১৭ জুন ২০২০

সম্প্রতি আবারো উত্তেজনা দেখে দিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে৷ দু'বছর আগে তৈরি আন্তঃলিয়াজোঁ অফিসটি বোমা মেরে ধংস করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ তাদের দাবি, দক্ষিণের লোকেরা উত্তরের সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3dv27
আন্তঃকোরীয় লিয়াজোঁ অফিসটি মঙ্গলবার বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া ছবি: Reuters/Kcna

আন্তঃকোরীয় লিয়াজোঁ অফিসটি গত ১৬ জুন বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেয় কিম জং-উনের উত্তর কোরিয়া৷ ২০১৭-১৮ জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন সমর্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার দ্বন্দ্ব এবং এর ফলে উত্তেজনা ছড়াতে শুরুকরলে এক পর্যায়ে কিম তার প্রতিপক্ষদের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি হন৷ এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জাই-ইনের সঙ্গে বৈঠকও করেন৷ এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮-এর এপ্রিল মাসে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী পানমানজম গ্রামে যৌথ নিরাপত্তা এলাকায় দুই কোরীয় নেতা সমঝোতার ঘোষণা দেন৷ এই ঘোষণার ফলশ্রুতিতে সে বছর সেপ্টেম্বরে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে লিয়াজোঁ অফিসটি চালু হয়৷

বেলুনে প্রতিবাদ ও সংহতি

সম্প্রতি উত্তেজনা ছড়িয়েছে উত্তর কোরিয়া থেকে বেলুনে করে পিয়ং ইয়ং বিরোধী প্রচারণাকে নিয়ে৷ উত্তর কোরিয়ায় গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই প্রচারণা চালান একদল দক্ষিণ কোরীয় অধিকার কর্মী৷ তারা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বেলুনে করে লিফলেট পাঠান উত্তরে৷ সেখানে বিভিন্ন বার্তা, উত্তরের জনগণের জন্য সমবেদনা ও তাদের প্রতি সংহতি এসব বক্তব্য থাকে৷ উত্তর থেকে পলাতক অনেক অধিকার কর্মীও এ কাজে যুক্ত আছেন৷

পার্ক সাং-হাক এমন একজন দক্ষিণ কোরীয় অধিকার কর্মী৷ পশ্চিমা গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘‘আমরা গত বছর ১১ বার সীমান্তের ওপারে লিফলেট বিলিয়েছি৷’’ ‘ফাইটার্স ফর এ ফ্রি নর্থ কোরিয়া’ নামের সংগঠনের চেয়ারম্যান তিনি৷ সবশেষ তিনি ও তার কর্মীরা ৩১ মে বেলুনে করে লিফলেট বিতরণ করেন৷ তাতেই ক্ষেপে যায় পিয়ং ইয়ং৷ কিম জং-উনের বোন কিম ইয়ো-জং প্রতিশোধের হুমকি দেন৷

কিম জং-উন বরবারের সরকার বরবারই এই লিফলেট প্রচারের বিপক্ষে ছিল৷ সবশেষ পানমানজম যৌথ ঘোষণাতেও এই প্রচারণা বন্ধের বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছিল৷

লিফলেট বিতরণের এই সংস্কৃতি অবশ্য নতুন নয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই এর শুরু৷ রাষ্ট্রীয়ভাবে সোলের পক্ষ থেকেও নানা সময়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে৷ এমনকি পিয়ং ইয়ংও বেশ কয়েকবার এপার থেকে ওপারে লিফলেট বিলিয়েছে৷

মেরুকরণের রাজনীতি

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা বা তৈরির বিপক্ষে বরাবরই অ্যামেরিকাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও বলবৎ বহু বছর ধরে৷ এ অবস্থা কাটাতে চাইছিল পিয়ং ইয়ং৷ সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও সৌলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় চেষ্টা দৃশ্যমান ছিল৷ কিন্তু কিম তাতে খুব একটা লাভবান হচ্ছেন না বলে সংক্ষুব্ধ এমন ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের৷

সূত্রের দাবি, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের চাপে পড়ে পিয়ং ইয়ং বড্ড বেশি ছাড় দিয়ে ফেলেছে বলে কিম আক্ষেপ করছেন৷ এর বদলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়নি এবং উত্তর কোরিয়া কোনো প্রত্যক্ষ সুফল পায়নি৷ কয়েক মাস আগে কিম পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার আরও বাড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে৷  নতুন ‘কৌশলগত অস্ত্র’ তুলে ধরার পাশাপাশি পরমাণু পরীক্ষা আবার শুরু করার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন কিম জং উন৷

গবেষকরা একে ‘নতুন শীতল যুদ্ধ’ বলছেন৷ তাদের মতে, পিয়ং ইয়ং লিয়াজোঁ অফিসটি ধংস করে বুঝিয়ে দিল যে, দক্ষিণকে তাদের আর প্রয়োজন নেই৷ সৌলকে ছাড়াই শীতল যুদ্ধ চলতে পারে৷ বেইজিং ও মস্কোকে নিয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটনের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় পিয়ং ইয়ং এদের সঙ্গে পুরানো সম্পর্ক আবারো ঝালাই করে নিয়েছে৷ চীন ও রাশিয়ার কাছেও বরাবরই ভূ-রাজনৈতিক কারণে উত্তর কোরিয়া গুরত্বপূর্ণ৷ তাই পিয়ং ইয়ংও গলার জোর আবার বাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়াও চুপ করে বসে থাকবে বলে মনে হচ্ছে না৷ ধারণা করা হচ্ছে, জবাব দিতে চায় তারাও৷ সেক্ষেত্রে কোরীয় উপত্যকায় উত্তেজনা প্রশমিত হতে আরো সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

আধুনিক কোরিয়ায় জাপান থেকে দখলমু্ক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর৷ শীতল যুদ্ধের মার্কিন বনাম সোভিয়েত মেরুকরণের মধ্যেই ১৯৪৮ সালে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও তাদের কমিউনিস্ট সতীর্থদের সমর্থন পায় উত্তর কোরিয়া আর অ্যামেরিকা ও তার পশ্চিমা সহযোগীদের সমর্থন পায় দক্ষিণ কোরিয়া৷ এরপর ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে কোরীয় উপকূলে৷ তখনকার শীতল যুদ্ধ শেষ হলেও এ উপত্যকায় সংঘাত ও উত্তেজনা শেষ হয়নি৷ আজও চলছে৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় আজও মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে৷

জেডএ/কেএম