1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোভিডের বিরুদ্ধে বাংলার ‘‌লাল ফৌজ’‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৬ এপ্রিল ২০২১

কোভিড ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সামাল দিতে পারছে না সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।বেসরকারি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার মুখে। লড়াইয়ে নামল রেড ভলান্টিয়ার্স।

https://p.dw.com/p/3saO5
Indiens Krankenhäuser aufgrund der COVID-19-Pandemie
ছবি: Debarchan Chatterjee/NurPhoto/picture alliance

সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ওদের কথা। রেড ভলান্টিয়ার্স। কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড ধরে ধরে স্বেচ্ছাসেবকদের নাম এবং মোবাইল নম্বরের তালিকা। এই মুহুর্তে, যখন ভোটের বাংলায় রোজ বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ, সরকারি হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে আর জায়গা নেই, বেসরকারি হাসপাতালে টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না স্বাস্থ্য পরিষেবা, বাড়িতে রেখে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অন্তরায় হচ্ছে অক্সিজেন এবং জরুরি ওষুধের আকাল, তখন রাস্তায় নেমেছে এই স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। ফোন করলেই পাওয়া যাচ্ছে তাদের। কার খাবার দরকার, কার পানীয় জল, কার ওষুধ, কার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার, কে কোভিড টেস্ট করাতে পারছেন না— সব ব্যাপারেই সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন তারা। গতবারের লকডাউনে যে সব শ্রমজীবী বাজার, শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালু হয়েছিল, সেগুলো ফের সক্রিয় হয়েছে। তবে এবার উদ্যোগ আরও বেশি। সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি বাড়িতে। যারা প্রবীণ নাগরিক, যারা অসুস্থ, করোনায় বা অন্য কোনও রোগে, যারা হয়ত আর্থিকভাবে সক্ষম নন, তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে রেড ভলান্টিয়ার্স।

ভোট নিয়ে ব্যস্ত রাজ্যে যেখানে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত, মানুষের জন্য কাজ করতে চান বলে যে তারকারা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু এখন যাদের আর টিকি দেখা যাচ্ছে না, তখন রেড ভলান্টিয়ার্সদের দু হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, যারা এতদিন বুঝতে পারছিলেন না কার কাছে সাহায্য চাইবেন।

ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী

সিপিএম–এর যুব সংগঠন ডি.‌ওয়াই.‌এফ.‌আই–এর সাংগঠনিক ক্ষমতা এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মূল চালিকাশক্তি জানার পরেও তাই বহু মানুষ রেড ভলান্টিয়ার্সদের কথা শেয়ার করে চলেছেন সোশাল মিডিয়ায়। একজনের থেকে ১০ জন জানছেন। দিনরাত ব্যস্ত থাকছে ওই স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন, ওঁরাও সাড়া দিয়ে চলেছেন ক্লান্তিহীন। অন্যদিকে রাজ্য সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুরসভাগুলি যে ‘‌হেল্প লাইন'‌ চালু করেছে, সেখানে বার বার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই। তার একটা কারণ অবশ্য সংক্রমণের হার আচমকাই অনেক গুণ বেড়ে যাওয়া, যা সামাল দিতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

রেড ভলান্টিয়ার্সের পক্ষ থেকে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ ফোন আসছে, কোথায় কোভিড টেস্ট করানো যায়, জানতে চেয়ে। অনেকসময়, টেস্ট আদৌ করানো দরকার কি না, সেটাও অনেকে বুঝতে পারছেন না। ঠিক যেমন, অনেকেই স্রেফ আতঙ্ক থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রাখার চেষ্টা করছেন। ফলে একদিকে যেমন সিলিন্ডারের আকাল দেখা দিচ্ছে, তেমনই মওকা বুঝে কালোবাজারি শুরু হচ্ছে। বেশ কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। কিন্তু সরকারের কোনও নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী বললেন, ‘‌‘‌প্রশাসন বলে কিছু নেই!‌ কিচ্ছু নেই!‌ যারা অক্সিজেন চাইছেন এখন, তারা যদি চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ পান, তা হলে দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনের হয়ত অক্সিজেন দরকারই নেই। তারা নিজেরা ভয় পেয়ে অক্সিজেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কারণ সেই চিকিৎসা–সাহায্যই নেই, যে একজন ডাক্তার দেখে বলবেন, যে এই এই ব্যবস্থা নিলে আগামী ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন ছাড়াও আপনার চলবে।'‌'‌ এই অভিজ্ঞতাই বার বার হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের।

এই পরিস্থিতিতে আশার কথা একটাই। সরকারি ব্যবস্থার ওপরেই কেবল ভরসা না করে রেড ভলান্টিয়ার্স, বা তাদের মতো আরও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোভিডের বিরুদ্ধে, মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। পরামর্শ, সাহায্য এবং সাহস জোগাচ্ছে, যেগুলো এখন সবথেকে বেশি জরুরি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য