1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপহৃত বিশপ কি মুক্তি পাবে?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৯ ডিসেম্বর ২০১৬

ইয়েমেনে আইএস জঙ্গিদের কবল থেকে কেরালার বিশপ টমি জর্জকে উদ্ধার করতে কি পারবে ভারত? দিল্লি বলছে চেষ্টার ত্রুটি হবে না, কিন্তু সম্ভবনা প্রশ্নের মুখে৷ ওদিকে বন্দি অবস্থায় এক ভিডিও বার্তায় তাঁর কাতর আবেদন, ‘‘বাঁচান আমাকে৷''

https://p.dw.com/p/2UzRA
ছবি: Youtube

সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ইয়েমেনের বর্তমান রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি কারোর অজানা নয়৷ লাগাতার চলছে সংঘর্ষ সেখানে৷ দেশটিতে কেন্দ্রীয় সরকার বলতে কার্যত কিছু নেই৷ তাই দিল্লি ইয়েমেনের আশেপাশের দেশগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে৷ এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী স্বয়ং ফাদার টমিকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন, যাতে তাদের মাধ্যমে ইয়েমেনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়৷

‘‘সকলকে বাস্তব পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে'', বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ এবং এ প্রসঙ্গে এ কথাও মনে করিয়ে দেন যে, মোদী সরকারের চেষ্টাতেই আফগানিস্তান থেকে ফাদার অ্যালেক্স প্রেম কুমার এবং জুডিথ ডিসুজাকে তালেবান জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত করে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল৷ তাই এক্ষেত্রেও চেষ্টার ত্রুটি হবে না বলে জানান তিনি৷

এ বিষয়ে ভারতের ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্সের এক প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করেন যে, ফাদার টমি জর্জ সুস্থ আছেন৷ আর তাঁর প্রাণহানিরও কোনো আশংকা নেই৷

গত প্রায় দশ মাস আগে দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন শহরে মাদার টেরেসার মিশনারি অফ চ্যারিটিজ-এর এক বৃদ্ধাশ্রমে হামলা চালায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা৷ জোর করে ধরে নিয়ে যায় কেরালার কোট্টায়াম জেলার রামাপুরমর বাসিন্দা ক্যাথলিক বিশপ ফাদার টম উজহুন্নালিল ওরফে ফাদার টমি জর্জকে৷ তবে ঐ হামলায় মারা যায় বৃদ্ধাশ্রমের ১৬ জন সদস্য৷

দীর্ঘদিন বন্দি থাকাকালীন এক ভিডিও বার্তায় তিনি মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস, ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে নিজ জীবন বাঁচানোর জন্য কাতর আবেদন জানান৷ তাঁর সংবেদনশীল আবেদনে তিনি জানান, তাঁর মুক্তির জন্য কেউ সেভাবে এগিয়ে আসেননি৷ আর এর কারণ তিনি ভারতীয়৷ তাই নাকি তাঁর জীবনের দাম নেই৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি যদি ইউরোপীয় ধর্মযাজক হতাম, তাহলে আমার জীবনের দাম থাকতো অনেক বেশি৷ সবাই ছুটে আসতো মুক্তির জন্য৷'' এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে এক ফরাসি সাংবাদিককে অপহরণ করার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন ফাদার টমি৷ তাঁর ক্ষেত্রে মৌখিক সহানুভূতিই সার, বাস্তবে মুক্তির জন্য কিছুই হয়নি৷ ভিডিও বার্তাটি ইউটিউব, ফেসবুক প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পর সকলের নজর কাড়ে৷ তবে এটা কবে আপলোড করা হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি৷

ভিডিওটিতে ফাদার টমি জর্জকে খুবই দুর্বল দেখাচ্ছিল৷ দেখে মনে হচ্ছিল, দেহে মনে তিনি খুবই ভেঙে পড়েছেন৷ তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল৷ ফাদার টমি জর্জের পরিবারের সদস্য তাঁকে চিনতে পারলেও এই মুহূর্তে কী করণীয় বুঝে উঠতে পারছেন না৷ কেউ কেউ মনে করছেন, আসলে এটা মুক্তিপণের ব্যাপার৷ তাই আটকে আছেন তিনি৷ আবার অনেকের ধারণা, আইএস জঙ্গিরা হয়ত একটা মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করেছে, তাই সরকার অন্য দেশের মাধ্যমে গোপনে দর কষাকষি করছেন৷

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কলকাতার মিশনারি অফ চ্যারিটিজের মাদার হাউসে হামলার ছক কষেছিল আইএস জঙ্গি বলে সন্দেহ মহম্মদ মুসা ওরফে মসিউদ্দিন৷ অন্তত এমনটাই উঠে এসেছে জাতীয় তদন্তকারী এজেন্সি এনআই-এর চার্জশিটে৷ শোনা যায়, মুসার সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে আইএস জঙ্গিদের যোগাযোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তাকে জেরাও করেন এফবিআই-এর গোয়েন্দারা৷ এমনকি বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও জেরা করেছেন৷ মুসাকে ঢাকার গুলশন হামলা কাণ্ডের এক মাথা বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে৷ কিন্তু ইয়েমেন থেকে ফাদার টমি জর্জের মুক্তির ব্যাপারে কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সেখানকার মুখপাত্র, ডয়চে ভেলের কাছে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে অস্বীকার করেন৷

প্রশ্ন হলো, ইয়েমেনের পরিস্থিতিটা কী? কেন দিল্লি ফাদারকে ছাড়াতে পারছে না? মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন৷ একে গরিব, তার ওপর যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এই লড়াই শুরু হয় স্বৈরাচারী শাসক আলি আবদুল্লা সালেকে উচ্ছেদের পর ক্ষমতা দখল নিয়ে৷ কয়েক বছর ধরে লড়াই চলছে প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদির সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী হুতি বাহিনীর৷ এ পর্যন্ত যুদ্ধে মারা গেছে প্রায় সাত হাজার৷ এখন ইয়েমেনের অর্ধেক সরকারি বাহিনীর দখলে, অর্ধেক বিদ্রোহীদের৷ ইরানের সমর্থনপুষ্ট শিয়া এবং আল-আয়েদার সাহায্য পাচ্ছে বিদ্রোহীরা৷ অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট হাদির সরকারি বাহিনীর সমর্থনে বিমান আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নি প্রধান বহুরাষ্ট্রীয় বাহিনী৷