কমিক বই থেকে শিক্ষা
৩১ মে ২০১৮কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির সবচেয়ে বড় বস্তির নাম ‘কিবেরা’৷ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মানুষ বিনামূল্যের এক কমিক বই থেকে দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করছেন৷ ব্যাপক বেকারত্ব থেকে শুরু করে বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার মতো বিষয় তাতে তুলে ধরা হয়৷ স্থানীয় ব্যবসায়ী ডেরিক ওয়েরে বলেন, ‘‘শাসনব্যবস্থা ও তাতে তরুণ প্রজন্মকে সামিল করা অত্যন্ত জরুরি৷ শুধু যৌনতার বদলে সামগ্রিকভাবে সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ৷ তরুণ ব্যবসায়ীদের জন্য জরুরি বিষয়ও রয়েছে৷ তরুণ প্রজন্মের ইস্যুগুলি নিয়ে চর্চা হয়৷’’
সোয়াহেলি ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণে তৈরি শেং নামের কথ্য ভাষায় ‘শুজ্যাজ’ মানে হিরো৷ কেনিয়ার কয়েক লক্ষ তরুণ-তরুণী এ ভাষায় কথা বলেন৷ কমিক বইয়ের স্রষ্টারা একইসঙ্গে মনোরঞ্জন ও তথ্য দিতে চান৷ নানা পরামর্শ ও ‘রোল মডেল’-এর মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য৷ এই উদ্যোগের অনুরাগী লুসি নিয়ামবুরা বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত ঢিলেঢালা ছিলাম, জীবনে কোনোকিছুরই পরোয়া করতাম না৷ পত্রিকাটি পড়ে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলাম৷ কারণ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম৷ বাকি তরুণরা পারলে আমি কেন পারবো না!’’
‘শুজ্যাজ’ পত্রিকার টিম সমাজকল্যাণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়৷ পাঠকদের কাছেই প্রতিবেদনের বিষয় চাওয়া হয়৷ কমিক বইয়ের চরিত্রগুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছে৷ এই উদ্যোগের সোশাল মিডিয়া টিমের ফরিদা জিলানি বলেন, ‘‘এই পর্যায়ে আমি ভাবছি, কেনিয়ার সব তরুণ-তরুণীদের সোশাল মিডিয়ায় থাকা অত্যন্ত জরুরি৷ তারা খবর রাখতে চায়, চলতি প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চায়, নিজেদের বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে দেখতে চায়৷ ঠিক সেখানেই শুজ্যাজ এগিয়ে আসে৷ বন্ধুদের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলে৷ অফলাইন মিডিয়ায় যা ঘটে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন মিডিয়ায়ও যাতে কিছু ঘটে, তা নিশ্চিত করে৷’’
পাঠকরা এসএমএস-এর মাধ্যমেও সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷ কেনিয়ায় এসএমএস অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাঁরা এক দৈনিক রেডিও শো শুনতে পারেন৷ ২০টিরও বেশি স্টেশন সেটি সম্প্রচার করে৷
‘শুজ্যাজ’ ও ‘ওয়েল টোল্ড স্টোরি’-র পেছনে ব্যক্তির নাম রব বার্নেট৷ এই ব্রিটিশ নাগরিক প্রায় ২০ বছর ধরে কেনিয়ায় বসবাস করছেন৷ ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর হিংসার জের ধরে তাঁর মাথায় এই আইডিয়া আসে৷ তিনি দেখলেন, তরুণ প্রজন্মের মনে হচ্ছে যে রাজনৈতিক নেতারা তাদের হাতিয়ার করছে এবং মূল স্রোতের সংবাদ মাধ্যম তাদের উপেক্ষা করছে৷ তিনি তখন তরুণ প্রজন্মের সহায়তায় এগিয়ে এলেন৷ রব বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নামী অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান এক বিস্তারিত সমীক্ষা চালিয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে, ১৯ বা তার কমবয়সি যে সব নারী ‘শুজ্যাজ’ শোনে, ১৯ বছরের আগে তাদের বিয়ের সম্ভাবনা তিন গুণ কম৷ এবং ১৯ বছরেও অবিবাহিত থাকার অর্থ তুমি শিক্ষা গ্রহণ করছো, অথবা ব্যবসা করছো, আয় করছো৷ তোমার জীবনে অগ্রগতি ঘটছে, এখনো সন্তান হয় নি৷ বিয়ে না করার কারণে একগুচ্ছ ভালো দিক খুলে যায়৷’’
এখনো পর্যন্ত ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছে এই উদ্যোগের সুফল পৌঁছে গেছে৷ প্রতিবেশী দেশ তানজানিয়ায়ও অনুরাগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ গোটা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে অনলাইন উপস্থিতি বাড়ানোই আসল লক্ষ্য৷ রব বার্নেট বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ লক্ষ অনুরাগীদের মধ্যে উদ্যম ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে ইন্টারনেট আর কী করতে পারে? আমরা কিছু আইডিয়া কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি৷ শুজ্যাজ প্রভাবের প্রতিশ্রুতি কাজে লাগিয়ে আমরা ইন্টারেনেটে আরও বড় আকারে, আরও দ্রুত, আরও উন্নত, আরও সস্তায় কিছু দিতে চাই৷ সেই কাজই চলছে৷’’
কিবেরা-য় আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছেন৷ কিন্তু এই মুহূর্তে পুরানো যুগের কমিক বইই মানুষকে তাদের কাহিনি বলতে ও নতুন আইডিয়া গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগাচ্ছে৷
এলকে ওপিয়েলকা/এসবি