1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন বিধান পরিষদ করতে চাইছেন মমতা?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৬ জুলাই ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ গঠন করার জন্য এবার বিল পেশ করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

https://p.dw.com/p/3w5JW
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা আছে, বিধান পরিষদ দীর্ঘদিন আগেই অবলুপ্ত হয়েছে।ছবি: Payel Samanta/DW

ভোটের আগেই ঘোষণা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জিতে এলে বিধানসভার পাশাপাশি বিধান পরিষদ গঠন করবেন। যে সব নেতাকে এখন প্রার্থী করতে পারছেন না, তাদের বিধান পরিষদে নিয়ে আসা হবে। এখন সেই প্রতিশ্রুতি পালনে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধান পরিষদ গঠন করতে বিধানসভায় বিল পেশ করতে যাচ্ছেন তিনি।

রাজ্য বিধানসভায় এই বিল সহজেই পাস হয়ে যাবে। কারণ, সেখানে তৃণমূলকে থামবার সাধ্য বিজেপি-র নেই। এরপর রাজ্যপাল অনুমোদন করলে বিলটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। ভারতীয় সংসদ এটিকে অনুমোদন করলে তারপর রাষ্ট্রপতি তাতে সই করলে পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ হবে। এককথায়, দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আর বিজেপি এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাই ধরেই নেয়া যায়, পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ গঠনের আশা করলে তা দুরাশায় পরিণত হতে খুব বেশি দেরি হবে না। মমতা তো দীর্ঘদিন হলো  বিধানসভায় পাস করিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে বঙ্গ বা বাংলা করার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। এতদিন হয়ে গেল সেটাই কেন্দ্রীয় অনুমোদন পায়নি। 

বিধান পরিষদ হওয়া খুবই কঠিন তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন না এমন নয়। তা সত্ত্বেও কেন তিনি এই বিল এনেছেন? কেনই বা তিনি তা পাস করাতে উদ্যোগী হয়েছেন? কেনই বা তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এত আলোচনা হচ্ছে? এর সহজ উত্তর, যেটা সচরাচর রাজনৈতিক দলগুলি দিয়ে থাকে এবং তৃণমূলও দিচ্ছে, তা হলো, মমতা তো ভোটের আগে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন তিনি প্রতিশ্রুতি পালন করছেন। তিনি মানুষের রায় পেয়েছেন প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্যই।

ঘটনা হলো, করোনাকালে এর থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচন করার আছে, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার আছে। প্রথমে করোনার প্রকোপ কমাতে হবে, তার সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়েছে। মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। দিনের পর দিন দোকান বন্ধ থেকেছে। অফিস বন্ধ থেকেছে। কর্মচারীরা মাইনে পাননি। অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। এই অবস্থায় সাধারণ ও গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার উপরেই সব চেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর শাকসবজি থেকে শুরু করে তেল, চাল, ডাল সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া। নিয়মিত পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াটা তার একটা কারণ। কিন্তু তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাম বাড়াবার কৌশল কি নেই? এ সব ছেড়ে দিয়ে বিধান পরিষদ গঠন করার এই উদ্যোগ কেন?

বিধানসভা নির্বাচন কি বদলে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সমাজ?

এমন নয় যে, পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ ছিল না। ১৯৫২ সালে বিধানসভার পাশাপাশি বিধান পরিষদও গঠিত হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে বিধানসভা ও সংসদে আইন পাস করে তার অবলুপ্তি হয়। সেই বিধান পরিষদের অভিজ্ঞতা খুব একট সুখের ছিল না। সিংহভাগ বিলই আলোচনা না করে পাস করে দেয়া হয়েছিল। এখনো উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র ও কর্ণাটকে বিধান পরিষদ আছে। কিন্তু বিধান পরিষদে আলোচনা নিয়ে খবর হয়েছে এমন দুর্নাম কেউ দিতে পারবেন না। উদ্ধব ঠাকর বিধানসভায় প্রার্থী ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বিধান পরিষদ সদস্য হয়েছেন। ফলে তাকে আর ভোটে দাঁড়াতে হয়নি। উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ বিধান পরিষদ সদস্য। তিনিও বিধানসভার ভোটে দাঁড়াননি। বিহারে নীতীশ কুমারও বিধান পরিষদের সদস্য।  তিনজনেই দাঁড়ালে হেসে-খেলে জিততেন। তাও দাঁড়াননি। বিধান পরিষদ থাকার সুবিধাটা নিয়েছেন।  বিধান পরিষদ না থাকায় সেই সুবিধা মমতা সহ অন্য মুখ্যমন্ত্রীরা নিতে পারছেন না।

সাধারণত দেখা যায়,  বেশ কিছু নেতা, যারা ভোটে দাঁড়ালে জিতবেন না অথচ যাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য রাজ্যের আইনসভার সদস্য করতে হবে, তাদের বিধান পরিষদের সদস্য করা হয়। এর বাইরে বিধান পরিষদের কোনো উপযোগিতা আছে বলে মনে হয় না।

পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ হলে তার সদস্যসংখ্যা হবে ৯৮ জন। সেক্ষেত্রে ৯৮ জন পরিষদ সদস্য, তাদের জন্য আলদা সচিবালয়, পুরো সরকারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও তা চালানোর জন্য বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। সেই টাকা জনগণের পকেট থেকেই আসবে। কিছু নেতা-নেত্রীকে গুরুত্বহীন বিধান পরিষদের সদস্য করার দায়টা কেন বহন করবে জনগণ? এই নেতা ও নেত্রীদের সরকারি পদ দেয়ার হাজারটা সুযোগ তো মুখ্যমন্ত্রীর আছে!

তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এই চেষ্টা করছেন? শুধুই কি প্রতিশ্রুতি পালনের তাগিদে? দলের কিছু নেতাকে রাজ্যের আইনসভার সদস্য করে দেয়ার ইচ্ছেয় ? না কি অন্য কোনো কারণও আছে? বিশেষ করে মমতা যখন জানেন, বিধান পরিষদ বানানো মুশকিল। বিজেপি রাজি না হলে, এটা হতে পারে না। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগকে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার করেছিলেন মমতা। আগামী নির্বাচনগুলিতেও একই তাস তিনি খেলতে পারেন। বিধান পরিষদের অনুমতি না দেয়াও বঞ্চনার হাতিয়ার হিসাবে তুলে ধরতে পারেন। বলতেই পারেন, বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, বিহারে যদি বিধান পরিষদ থাকতে পারে, তা হলে বাংলা কি দোষ করল? এই রাজনৈতিক অস্ত্রের জন্যই কি মমতা বিধান পরিষদ গঠনের জন্য এত উদ্যোগী হয়েছেন?