1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেজরিওয়াল ৬৩, বিজেপি ৭

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কামাল করলেন কেজরিওয়াল ৷ দিল্লিতে জয়ের হ্যাটট্রিক করে ৷  উচ্চগ্রামে প্রচার, দলের পুরো সংগঠন, নেতা, সাংসদদের নামিয়েও বিজেপি দশ ছুঁতে পারল না ৷   

https://p.dw.com/p/3XZrN
ছবি: picture-alliance/dpa

দিল্লিতে আবার নায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ মাস ছয়েক আগে লোকসভা নির্বাচনে যিনি দিল্লির সবক'টি আসনে শোচনীয়ভাবে হেরেছিলেন, তিনিই আবার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হেলায় হারালেন ৷ গতবার কেজরিওয়াল জিতেছিলেন ৬৭ আসনে ৷  পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ বার পেয়েছেন ৬৩ আসন ৷ সেটাও পুরোপুরি ইতিবাচকপ্রচার করে, শুধুমাত্র নিজেদের সাফল্যকে তুলে ধরে ৷ সাধারণত, কোনও দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের বিরুদ্ধে লোকের ক্ষোভ তৈরি হয় ৷  কিন্তু কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রে দেখা গেল, সেই ক্ষোভ একেবারেই নেই ৷ তাঁর আসন মাত্র চারটি কমেছে ৷ 

সব চেয়ে বড় কথা, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ তাঁদের পুরো শক্তি দিয়ে দিল্লিতে নেমেছিলেন কেজরিওয়ালকে হারানোর জন্য৷ তারা ভোটে জেতার জন্য সম্পূর্ণ মেরুকরণের চেষ্টা করেছেন, বিভাজনের চেষ্টা করেছেন ৷ শাহিনবাগের বিক্ষোভকে সামনে রেখে পুরো নির্বাচনটা তারা হিন্দু-মুসলিম, সিএএ-এনআরসি নিয়ে ভোটে পরিণত করার চেষ্টা করেছেন ৷ সেই জায়গা থেকে কেজরিওয়াল আবার চমকপ্রদ জয় পেয়েছেন ৷ ফলে দিল্লি প্রমাণ করে দিল, ভালো কাজ করলে, সাধারণ মানুষের পাশে থাকলে, কঠিন আর্থিক সময়ে তাঁদের সংসার খরচ কিছুটা বাঁচাতে পারলে লোকে দু'হাত ভরে ভোট দেন। তখন শাহিনবাগ, সিএএ, এনআরসি, মেরুকরণ কিছুই কাজ করে না ৷ 

এত উচ্চগ্রামে প্রচার করে, পুরো সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে  বিজেপি সাতটি আসন পেয়েছে। কেজরিওয়াল পেয়েছেন ৬৩টি ৷  তার মানে বিজেপি অন্তত বিধানসভায় বিরোধী নেতার মর্যাদা পাবে ৷ দিল্লির পরিস্থিতি অনুকূল নয়, সেটা বিজেপি নেতারা জানতেন ৷  প্রচারের প্রথম দিকে সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ৷  তা হলে অমিত শাহ সর্বশক্তি দিয়ে, পুরো সংগঠন, সব সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বাইরের রাজ্য থেকে কর্মী এনে দিল্লির নির্বাচনে নামলেন কেন? বিজেপি নেতাদের যুক্তি হল, তাঁরা ভাবতে পারেননি ফলাফল এরকম হবে ৷ এর ফলে মোদী-শাহ বড় ধাক্কা খেলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বিধানসভা নির্বাচনে লোক শুধু যে কেজরিওয়ালকে বেছে নিয়েছেন তাই নয়, মোদী-শাহর কথায় কান দেননি ৷ সিএএ, এনআরসি, শাহিনবাগ, জামিয়া নিয়ে যে প্রচার চলছিল, তাও তাঁদের মনে রেখাপাত করেনি ৷ তারা নিজেদের দৈনন্দিন সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়েছেন ৷ কেজরিওয়ালের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন ৷'' 

 

কেজরিওয়াল প্রমাণ করে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করলে তাঁরাও প্রতিদানে দুই হাত ভরেই দেবেন। প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''লোকে কী চান? তাঁরা নিজের জীবনটা সহজে, শান্তিতে কাটাতে চান ৷ কেজরিওয়াল তাঁদের জীবনযাপন কিছুটা সহজ করার চেষ্টা করেছেন। বিদ্যুতের মাসুল কম করা, জল কার্যত বিনা পয়সায় সরবরাহ করা, মেয়েদের সরকারি বাসে বিনা পয়সায় চড়ার সুযোগ করে দেওয়া, মহল্লা ক্লিনিকে বিনা পয়সায় ডাক্তার দেখানো ও ওষুধের ব্যবস্থা করে কেজরিওয়াল সধারণ মানুষের জীবনধারন সহজ করেছেন ৷ তার ফলও পেলেন ৷'' 

জয়ের পর দলের সদর দফতরে এসে কেজরিওয়াল দিল্লিবাসীর উদ্দেশে বললেন, 'আই লাভ ইউ দিল্লি৷' দিল্লিবাসীর পাশাপাশি ধন্যবাদ দিলেন তাঁর আরাধ্য দেবতা হনুমানকে ৷ বিজেপি যবে থেকে কট্টর হিন্দুত্বের প্রচার করেছেন, তখন থেকেই কেজরিওয়াল হনুমানের শরণ নিয়েছেন ৷  হনুমান চালিশার কথা বলেছেন ৷  অর্থাৎ, তিনিও কিঞ্চিত নরম হিন্দুত্বের লাইন নিয়ে চলেছেন ৷  

তবে আজ তাঁর দিন ৷  মোদী-শাহের প্রতিরোধ ভেঙে এমন চমৎকার বিজয় পেয়েছেন তিনি ৷ এ বার কি তিনি জাতীয় রাজনীতির দিকে পা বাড়াবার চেষ্টা করবেন? সেই প্রশ্নের জবাব ভবিষ্যৎ দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতত এই জয় বিরোধীদের বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উজ্জীবীত করবে ৷