1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কে বলে জিন্স পরে পুজো দেয়া যায় না!

২৮ জুলাই ২০২১

জিন্স পরে পুজো দিতে গিয়েছিল নেহা। সেটাই হলো তার মৃত্যুর কারণ।

https://p.dw.com/p/3y9YP
জিন্স পরার শাস্তি মৃত্যু!ছবি: picture-alliance/E.Topcu

জিন্স-টপ পরা অপরাধ। তাই পিটিয়ে মারা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলায় এক নারীকে। তার মৃতদেহ সেতু থেকে নদীতে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। মৃতের নাম নেহা পাসওয়ান। তাকে হত্যা করেছে নিজের পরিবারেরই সদস্যরা।

এ কোনো নতুন ঘটনা নয়। উত্তর প্রদেশ, বিহার, হরিয়ানার মানুষের কাছে এমন খবর স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কারণ, এসব অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মেয়েদের কমোডিটি বা পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। অনার কিলিং বা সম্মানরক্ষার্থে খুন তাই এ সব অঞ্চলের বহু মানুষ স্বাভাবিক বলেই মনে করেন।

কী ঘটেছিল নেহার সঙ্গে? জিন্স এবং টপ পরে তিনি পুজোর রীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাতেই রেগে যান তার দাদু দিদা এবং কাকারা। প্রথমে বচসা তারপর মারধর। রীতিমতো বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় মেয়েটিকে। পুজোর জন্য উপোস করেছিলেন নেহা। ফলে মার খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েন তিনি। কাকার পরিবার নেহার মা শকুন্তলাকে জানান মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে তার দেহ মিলেছে নদীর উপর ব্রিজে। সেখান থেকে ঝুলছিল তার দেহ।

বিজ্ঞানী, শিক্ষক এবং সমাজকর্মী কপিল কুমারের বক্তব্য, ''ক্লাসিকাল অনার কিলিংয়ের ঘটনা না হলেও, একে অনার কিলিংই বলতে হবে। নেহার পরিবার মনে করেছে, জিন্স পরে পুজো করা অপরাধ। সমাজে একথা ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের বদনাম হবে। তাই তাকে মেরে দেওয়া হয়েছে।''

কপিলের বক্তব্য আকছাড় এমন ঘটনা ঘটছে সমাজে। পুলিশও ব্যবস্থা নেয় না। কারণ পুলিশও ওই সমাজেরই অংশ। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খাপ পঞ্চায়েতই শেষ কথা। গ্রামের মাতব্বররা সমাজ কী ভাবে চলবে, তা স্থির করে।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ. ডয়চে ভেলে।ছবি: privat

সেখানে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির সামাজিক জীব বলে মনে করা হয়। সে কেবল সন্তান উৎপাদন আর ঘরের কাজ করার যন্ত্র। তার কোনো নিজস্ব মতামত থাকতে পারে না। ফলে নারী যদি একটুও অন্যরকম কথা বলে, তাহলে তাকে হত্যা করো। অবিলম্বে এটা বন্ধ হওয়া দরকার।

মন-সমাজবিদ মোহিত রণদীপও কপিলের সঙ্গে সহমত। তার বক্তব্য, ভারতে মেয়েদের অধিকার বিষয়ক বহু আইন আছে। কিন্তু তা ব্যবহার করা হয় না সব সময়। বিশেষ করে হিন্দি বলয়ে। সমাজের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার না ঘটলে, এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

কপিল দীর্ঘদিন ধরে সেই কাজটিই করছেন। সমাজে মেয়েদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছেন। তার বক্তব্য আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন ভালো। কিন্তু আরো অনেক কাজ বাকি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কে কী পরবে, কে কী খাবে, সেটা একান্তই তার নিজস্ব বিষয়। সে ব্যাপারে অন্য কারো নাক গলানোর অধিকার নেই। পুজো করতে গেলে শুদ্ধ বস্ত্র পরার কথাই বলা হয়েছে। তার মানে কাচা, পরিস্কার বস্ত্র। তা জিন্স-টপ, কুর্তা-পাজামা, শাড়ি বা অন্য যে কোনো পোশাকই হতে পারে। জিন্স পরা হয়েছে বলে হত্যা করা হবে? এই কুসংস্কারের কোনো স্থান একুশ শতকে থাকা উচিত নয়।