কে কার উপর গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে?
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল-এর ফোনে এনএসএ-র আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে জার্মানি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ এবারের অভিযোগ, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এনএসএ-র অনুরোধে ফ্রান্স, ইইউ সহ ইউরোপীয় নেতাদের উপর নজরদারি চালিয়েছে৷ এর পরিণাম কী হবে?
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
‘বন্ধুদের মধ্যে এ সব চলে না’
মোবাইল-কেলেঙ্কারির জের ধরে ক্ষুব্ধ ম্যার্কেল এমন মন্তব্য করেছিলেন৷ ফলে অ্যামেরিকার উপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ এখন যদি প্রমাণিত হয় যে, খোদ জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর উপর নজরদারি চালিয়েছে – তাও আবার সেই অ্যামেরিকার এনএসএ-র অনুরোধে, তখন ম্যার্কেল কীভাবে মুখ দেখাবেন?
শুধুই রাজনীতি, নাকি ব্যবসা?
শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারির কী কারণ থাকতে পারে? তাদের সাফল্যের ফর্মুলা চুরি করা? এয়ারবাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ইএডিএস এই সন্দেহের বশে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে – তবে সরাসরি এনএসএ-র বিরুদ্ধে নয়৷ মনে রাখতে হবে, শুধু যাত্রীবাহী বিমান নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও তৈরি করে ফ্রান্স ও জার্মানির এই কোম্পানি৷
ক্ষুব্ধ ইউরোপ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার তাঁর দপ্তরের উপর এনএসএ ও বিএনডি-র গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অত্যন্ত বিচলিত৷ তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি বলেছেন, জার্মান কর্তৃপক্ষ ও সংসদকে এর তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে হবে৷
কেঁচো খুঁড়তে সাপ
এনএসএ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আনতে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ রাশিয়ায় নির্বাসিত এই ‘হুইসেলব্লোয়ার’-কে জার্মানিতে এনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব পাবার চেষ্টা করেছিলেন সবুজ দলের সদস্য হান্স ক্লিস্টিয়ান স্ট্র্যোবেলে৷ সে যাত্রায় ফল হয়নি৷ ওয়াশিংটন-কে চটাতে সাহস পায়নি অনেক মহল৷ এবারের কেলেঙ্কারির পর সেই আপত্তি ধোপে টিকবে কিনা, বলা কঠিন৷
কোণঠাসা ম্যার্কেল প্রশাসন
এনএসএ-বিএনডি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর আস্থার পাত্র বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের-এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে৷ চ্যান্সেলর-এর দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কতটা জানতেন, কোন তথ্য গোপন করেছেন এবং সংসদে প্রশ্নের মুখে মিথ্যা কথা বলেছেন কিনা, তা জানতে চাপ বেড়েই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সহ অনেকেরই গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷