1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুসংস্কারের কাছে আবার হার মানল যুক্তিবাদ

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ভারতের একটি গ্রামে ঈশ্বরের কাছে সন্তানকে বলিদান দিয়েছেন এক মা। কুসংস্কারের এমন ঘটনায় বিহ্বল হয়ে পড়েছে সমাজের একাংশ।

https://p.dw.com/p/3p33m
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ছবি: picture-alliance/dpa

একুশ শতকের ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বলছে। কিন্তু সমাজ কি সত্যিই সেই গতিতে এগোতেো পারছে সভ্যতার দিকে? প্রশ্ন তুলে দিল কেরালা। কিছু দিন আগে অন্ধ্রপ্রদেশও সেই একই আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। কেরালায় ব্ল্যাকম্যাজিকের মোহে ছয় বছরের সন্তানকে মেরে ফেলেছেন মা। অন্ধ্রে গত মাসে বাবা-মা হত্যা করেছিলেন দুই কন্যা সন্তানকে।

কুসংস্কার ছেয়ে আছে সমাজে। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত-- সব শ্রেণির মানুষের মধ্যেই নানা রকম কুসংস্কার কাজ করছে বলে মনে করছেন যুক্তিবাদীরা। কোনো সমাজে তা প্রকট ভাবে বেরিয়ে পড়ছে। কোথাও বা থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।

ভারতের অন্য অনেক প্রদেশের চেয়ে কেরালা অনেক বেশি প্রগতিশীল বলে পরিচিত। কিন্তু রোববার সেখানকার একটি গ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, তা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা ভারতকে। সোমবার কেরালার পালাক্কার জেলার পুলিশ জানিয়েছে, এক মা তাঁর ছয় বছরের পুত্র সন্তানকে নিজের হাতে হত্যা করেছেন। ওই মায়ের নাম শাহিদা। তিনি এবং তাঁর স্বামী এক সঙ্গেই থাকতেন। তিনটি সন্তান ছিল তাঁদের। শাহিদা চতুর্থ সন্তানের মা হতে চলেছেন। সেই উপলক্ষেই কোনো এক ভণ্ড সাধুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সাধু বা ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়নের পরামর্শে নিজের ঘরেই ছয় বছরের একটি সন্তানকে হত্যা করেন তিনি। মাঝরাতে যখন এ ঘটনা ঘটে, অন্য ঘরে বাকি দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। ছয় বছরের সন্তানকে হত্যা করার পরে ওই নারী নিজেই পুলিশকে খবর দেন এবং পুরো ঘটনা জানান। পুলিশ বাড়িতে আসার পরে তাঁর স্বামী এবং অন্য দুই সন্তান পুরো বিষয়টি জানতে পারেন।

পুলিশ ওই নারীকে গ্রেফতার করেছে। যে সাধুর কথা শাহিদা উল্লেখ করেছেন, তাঁর খোঁজও চলছে।

প্রায় একই ধরনের ঘটনা গত মাসে ঘটেছিল অন্ধ্রপ্রদেশে। সেখানে এক দম্পতি তাঁদের দুইটি কন্যা সন্তানকে হত্যা করেন। সেখানেও ঈশ্বরের কাছে সন্তানদের কুরবানি দেওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এসেছিল। পুলিশ ওই দম্পতিকেও গ্রেফতার করেছে।

অতীতে যুক্তিবাদী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন পেশায় শিক্ষক আশিস চক্রবর্তী। অধ্যাপক চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বহুদিন আগে বিদ্যাসাগর পাঠ্যসূচি কুসংস্কার-মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমরা অনুসরণ করতে পারিনি। যত দিন যাচ্ছে, টেলিভিশনের নানা সিরিয়ালে কুসংস্কারের দৃশ্য যেন তত বাড়ছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও কুসংস্কারের আলোচনা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কুসংস্কারের বোধ যেন প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।'' অধ্যাপক চক্রবর্তীর বক্তব্য, পাঠ্যসূচিতে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে পড়ানোর ব্যবস্থা হোক। আর যাঁরা দেশের আইকন, তাঁদের দিয়ে বার বার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে প্রচার চালানো দরকার। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নিয়ে এ কাজ করা উচিত।

বস্তুত, ভারতে ব্ল্যাক ম্যাজিক আইন আছে। এই আইনের সাহায্যে এই ধরনের কুসংস্কারে যারা প্রশ্রয় দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া যায়। কড়া শাস্তিরও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু প্রশাসন সেই আইন ঠিকমতো প্রয়োগ করে না বলে অনেকেরই অভিযোগ। বহু যুক্তিবাদী সংগঠনের অভিযোগ, যে সমস্ত সিরিয়াল এবং সিনেমায় এ ধরনের কুসংস্কার দেখানো হয়, তাদের বিরুদ্ধেও সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।

কেরালার ঘটনার পরে অবশ্য সেখানকার প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। এ ধরনের ঘটতে আর না ঘটে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য