কুষ্ঠ নেই, তবু আছে ভারতে!
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩সাত বছর আগে খুব গর্ব করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-কে ভারত সরকার জানিয়েছিল, ‘দেশ এখন কুষ্ঠরোগ মুক্ত৷' কিন্তু এই ২০১৩ সালেও দেখা যাচ্ছে ভারতে শুধু যে কুষ্ঠরোগ আছে তা-ই নয়, আছে খুব আতঙ্কজনকভাবে৷ বিশ্বের মোট কুষ্ঠরোগীর অর্ধেকেরও বেশি রয়েছেন ভারতে!
প্রতি বছরের মতো গত ৩০ জানুয়ারিও পালিত হলো আন্তর্জাতিক কুষ্ঠরোগ দিবস৷ এবারও দিবসটি উদযাপিত হয়েছে ভারতে৷ তবে গত ছয়টি বছরের মতো আবহ ছিল না উদযাপনে৷ থাকবে কী করে? খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই যে জানাচ্ছে এ মুহূর্তে কমপক্ষে ১ লক্ষ ২৭ হাজার কুষ্ঠরোগী আছেন ভারতে৷ সংখ্যাটা আরো বড় হওয়াই স্বাভাবিক৷ সঠিক পরিসংখ্যান আশা করা যেত রোগীরা যদি নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে গিয়ে চিকিৎসা নিতেন৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ যুগেও ভারতের অনেক মানুষই মনে করেন কুষ্ঠরোগ খুব মারাত্মক একটা রোগ, এ রোগ যাঁর হবে তাঁর কাছে ঘেঁষাই চলবে না৷ সমাজের যখন এই অবস্থা তখন রোগীরা সবার সামনে হাসপাতালে হাজির হবেন কী করে? স্বাভাবিক কারণেই বেশির ভাগ রোগীই তাই চলে যান সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে সেইসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে, যেখানে গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা সবচেয়ে বেশি৷
কেউ যদি নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে যানও তারপরও অনেক ক্ষেত্রে সরকারি হিসেবে তাঁরা আসেন না৷ অনেক হাসপাতালের ডাক্তারদের নাকি ডাব্লিউএইচও-কে সঠিক তথ্য দেয়ার কোনো তাগিদ বা আগ্রহই নেই৷ ভারতে কুষ্ঠরোগীদের সমস্যার আসলে শেষ নেই৷ সাধারণ মানুষ তো তাঁদের ভালো চোখে দেখেই না, এমনকি কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছেও তাঁরা প্রায় অস্পৃশ্য৷ তাঁদের দূরে রাখতে পারলেই নাকি অনেক স্বাস্থ্যকর্মী বাঁচেন!
কলকাতার প্রেমানন্দ মেমোরিয়াল কুষ্ঠরোগ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট ড. হেলেন রবার্টস৷ কুষ্ঠরোগীদের প্রতি যে স্বাস্থ্যকর্মীরাও অনেক ক্ষেত্রে সদয় নন সেই সত্য তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো এভাবে, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা কুষ্ঠরোগীদের প্রতি নির্দয় আচরণ করেন এমন অভিযোগ আমি পেয়েছি৷'' সব দেখে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মহকুমা কুষ্ঠরোগ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অরুনেষ চক্রবর্ত্তী মনে করেন, ‘‘এখন ভারতের উচিত, দেশ যে এখনো কুষ্ঠরোগ মুক্ত হয়নি সেটা ডাব্লিউএইচও-কে জানিয়ে দেয়া৷''