1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুষ্টিয়ায় ঠিকাদার পেটানো হাতুড়ি বাহিনী

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ আগস্ট ২০২১

সরকার-সমর্থক হিসেবে পরিচিতদের নানা নামের নানা বাহিনীর পর এবার সামনে এলো হাতুড়ি বাহিনী। কুষ্টিয়ায় এক ঠিকাদারকে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে তারা৷

https://p.dw.com/p/3yU46
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand

শহিদুর রহমান মিন্টু নামের ওই ঠিকাদারকে পেটানোর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় তুলেছে। প্রথমদিকে আমলে না নিলেও পরে পুলিশ ও র‌্যাব তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। নিরাপত্তার আশ্বাসে ওই ঠিকাদার একটি মামলাও করেছেন।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিডি)-র সামনে ঠিকাদার মিন্টুকে ১০/১২ জন ঘিরে ধরে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকে। স্থানীয় অনেকেই এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন। তবে কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে যাননি। কোনোমতে তিনি পালিয়ে যান। 

‘‘আমি তাকে কেন মারতে যাবো?’’

মঙ্গলবার দুপুরে টেলিফোনে শহিদুর রহমান মিন্টু ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা তো সব কিছুই চেপে যাই। এই ঘটনাতেও হয়ত আমি কিছুই করতাম না। শুধু গুমরে কাঁদতাম। কারণ, তারা তো দেশ চালায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কি টিকে থাকা যাবে? কিন্তু কে যেন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার পর সেটা ভাইরাল হয়। ফলে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন পুলিশ আমাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে থানায় ডেকে এনেছে মামলার বাদী করার জন্য। তারাই এজাহার লিখে রেখেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর করে চলে যাবো। পুলিশ আমাকে বলেছে, তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।”

ঘটনার পরপর পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কেউ কিছু জানায়নি বলে সোমবার দিনভর এড়িয়ে গেছে পুলিশ। মিডিয়াতে রিপোর্ট আসার পর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব ও পুলিশ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঘটনাটি জানার পরপরই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে ওই ঠিকাদারকে ডেকে এনে মামলা করা হয়েছে। র‌্যাবের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে জহুরুল ইসলাম (২৪), আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও মোকাদ্দেস আলী (৪৫) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। মামলার প্রধান আসামী বরকত আলীকে (৪২) গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলায় এই চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।” 

তবে ঠিকাদার শহিদুর রহমান মিন্টুর অভিযোগ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবু তৈয়ব বাদশা'র ক্যাডাররা তার উপর হামলা করেছে। তিনি বলেন, "ঠিকাদারি কাজ নিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন তার উপর এই হামলা করেছে। হামলাকারীদের মধ্যে শুধু বরকতকে আমি চিনতে পেরেছি।”

মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন যদিও এই হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "৪ পারসেন্ট লেসে আমি কাজ পেয়েছি। মিন্টু তো সোয়া ৩ পারসেন্ট লেসে টেন্ডার দিয়েছিল। আরো অনেক ঠিকাদার টেন্ডার দিয়েছিল। তাহলে আমি তাকে কেন মারতে যাবো? আসলে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, সে বিএনপির রাজনীতি করে ফলে আমাকে ফাঁসাতেই এমন অভিযোগ। ঘটনা ঘটলো কুষ্টিয়া সদরে, আমার বাড়ি মিরপুরে আর মিন্টুর বাড়ি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের শানপুকুরিয়া গ্রামে। গত নির্বাচনে মিন্টু ধানের শীষ নিয়ে চাপড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছে। তবে হ্যাঁ, সে যেখানে হামলার শিকার হয়েছে, সেখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। এই কারণে আমার কথা বলতে পারে। তাছাড়া মিন্টুর মামা মতিউর রহমান মতি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তার সঙ্গে আমার বিরোধ ছিল। সে কারণে সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। যেভাবেই তদন্ত হোক প্রমান হবে, আমি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না।”  

কেন কামারুল আরেফিন তার উপর হামলা করাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুর রহমান মিন্টু বলেন, "এটা তো আমারও প্রশ্ন। উনি আমাকে টেলিফোনে কয়েকদিন ধরে হুমকি দিচ্ছেন। সব রেকর্ড আমার কাছে আছে। এছাড়া আমি উনার মিরপুরে একটা কাজ করছি, সেখানে উনি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। উনি বলেছেন, আমাকে মেরে আমার রক্ত দিয়ে উনি গোসল করবেন। এখন এসব বললে আমি কী বলবো?” তাহলে মামলায় আবু তৈয়ব বাদশা বা কামারুল আরেফিনের নাম নেই কেন? মিন্টু বলেন, ‘‘পুলিশ এজাহার লিখেছে, আমি সেই এজাহারে স্বাক্ষর করেছি। এগুলো আমি জানি না।‘‘ অন্যদিকে পুলিশও বলছে, মামলার বাদি শহিদুর রহমান মিন্টু। তিনি এজাহারে যাদের আসামী করেছেন, সেটাই আছে। 

‘‘হাতুড়ির পিটুনিতে আমার হাঁটু থেঁতলে গেছে’’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়ার সংসদ সদস্য মাহবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঘটনাটি শোনার পরই আমি স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অপরাধী যে-ই হোক তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।” কুষ্টিয়ার আরেকজন সংসদ সদস্য ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ। আমি চাই দ্রুত এদের গ্রেপ্তার করা হোক। এরা আমাদের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।”

শহিদুর রহমান মিন্টু বলেন, "হাতুড়ির পিটুনিতে আমার হাঁটু থেঁতলে গেছে। পিঠে ও বুকেও লেগেছে। হাতেও হাতুড়িপেটা। ঘটনার পর আমি লুকিয়ে ছিলাম। পরে পুলিশের আশ্বাসে এখন চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।”

এর আগে গত ১৩ জুলাই কুমারখালীর কয়া এলাকায় গড়াই সেতুর উপর হামলার শিকার হয়ে নিহত হন ঠিকাদার কুমারখালীর শিলাইদহ গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বিশ্বাস। ওই ঘটনায় বিচার চেয়ে নিহতের ভাই বশির উদ্দিন কুমারখালী থানায় হত্যা মামলার এজাহার দিলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল গত ১১ জুন গভীর রাতে, কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায়। ওই এলাকার আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামের এক নারী পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে একটি পা হারান। পরে তিনি মারা যান। সেই ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও ওই মামলার কোনো কিনারা হয়নি।